
প্রধান প্রতিবেদক: হাসপাতালের রোগীদের দূর্দশার চিত্র দেখে নিজেকে অপরাধী করে ফেলছেন তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন। ফেসবুকে সেই কথা লিখে ঘোষনা দিলেন, হাসপাতালে এসির ব্যবস্থা না করে নিজের রুমের এসি বন্ধ রাখবেন।
গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন ফেসবুকে স্টাটাস দেন, নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। অঈ রুমের মধ্যে থাকতে ভালো লাগছেনা। ফ্যাক্ট: হাসপাতালে অপারেশনের রোগী গরমের সাথে লড়ছে। রাতের তালা আমাকে বদলে দাও। কাল থেকে নিজের রুমের অঈ বন্ধ থাকবে। রোগীদের ব্যবস্থা না করে ব্যবহার করবোনা। দয়া করে রুমে ঢুকে কেউ এসি চালাতে বলবেন না। হাসপাতালের অঈ হতেই হবে। অঈ হবেই। কোনও ধূলো থাকবেনা। জুতো বাইরে থাকবে। আর বাথরুম থেকে গন্ধ নয় ঘ্রাণ আসুক।
যে কথা সেই কাজ অবশেষে তালা হাসপাতালে রোগীদের ব্যবহারের জন্য এসির ব্যবস্থা করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন। রোববার বিকেলে এসিগুলো তালা হাসপাতালে এসে পৌঁছায়। সোমবার সকাল থেকেই এসিগুলো হাসপাতালে লাগানোর কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদ জানান, প্রাথমিকভাবে দুইটি ওয়ার্ডে ১২টি এসির জন্য চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ওয়ার্ডে পরবর্তীতে লাগানো হবে। এরমধ্যে চারটি এসি রোববার বিকেলে হাসপাতালে এসে পৌঁচেছে। সোমবার বাকিগুলোও চলে আসবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এগুলো পাঠিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন ও আমার উদ্যোগে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ওয়ার্ডের রুমের মধ্যে থাইগ্লাস লাগানো ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই এসিগুলো লাগানোর কাজ শুরু হবে।
গত ২৯ জুলাই তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা থেকে তালা উপজেলায় যোগদান করেন ইকবাল হোসেন। যোগদানের পরই তিনি তালা সদরসহ গ্রামাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ শুরু করেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, অবৈধ পারকিংরোধে ব্যবস্থা গ্রহনসহ নানা উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। হাসপাতালের রোগীদের দূর্দশা দেখেও তিনি দূর্দশা লাঘবে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন করেন।
হাসপাতালে এসি লাগানোর পরিকল্পনার বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন বলেন, আমার দুইটা বাচ্ছা। একটাকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে, অন্য বাচ্ছাদের মতই। আমি ও আমার পরিবার সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা গ্রহন করি। আমার একটা বাচ্ছাকে তালা হাসপাতালে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। সেখানে চিকিৎসক আন্তরিক হয়ে চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু পরিবেশটা আমার ভালো মনে হয়নি। এরপর আমি দ্বিতীয় তলায় ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি, ডেঙ্গুর ভয়ে মা বোনেরা প্রচন্ড গরমে মশারীর মধ্যে রয়েছে। তাদের ঘামে চারপাশ দূর্গন্ধ হয়ে গেছে। বার্থরুমের মধ্যে প্রচন্ড নোংরা। হাসপাতালের জনবল কম তাদেরও কিছু করার নেই।
তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে অপারেশনের ব্যবস্থা চালু করেছেন। যা অনেক উপজেলাতে হয় না। এরপর আমার মনে হয়েছে হাসপাতালের রোগীদের দূর্ভোগ লাঘবের জন্য এসির ব্যবস্থা করা যায় কিনা। উদ্যোগ গ্রহন করি আর সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। অনেকেই ভেবেছিল এটা কথার কথা বলেছি, কিন্তু আমি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। রোববার বিকেলে চারটি এসি হাসপাতালে পৌঁছে গেছে। সোমবারের সকাল থেকেই এসিগুলো লাগানোর কাজ শুরু হবে। তারমধ্যে মোট ১২টি এসি হাসপাতালে এসে পৌঁছাবে। তালা হাসপাতালকে আমি একটি মডেল হাসপাতাল করতে চাই। যাতে সাধারণ মানুষরা আর ক্লিনিকে না গিয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়। এছাড়া হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডে টিভির ব্যবস্থা করা ও বাইরে একটি ওয়েটিং রুমের ব্যবস্থা করা হবে। রোগী বা রোগীর স্বজনরা পরিবেশ দেখে নিজেই জুতা বাইরে রেখে প্রবেশ করবেন। বার্থরুমগুলো থাকবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। হাসপাতালের মধ্যে ফুলের টব দেওয়া হবে। এক কথায় এটা হবে আধুনিক হাসপাতাল। সকলের সহযোগিতায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চাই। পরবর্তীতে সরকার যদি কখনো এটাকে মডেল হিসেবে নেয় তবে সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়বে এ মডেল। উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ। ক্লিনিক ছেড়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হবে রোগীরা।