রাশেদ আলী, যশোর থেকে: যশোরের মণিরামপুর উপজেলাতে সরিষা আবাদে সরিষা ক্ষেতের হলুদিয়া প্রাকৃতির সৌন্দর্য ভরিয়ে তুলেছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। এ যেন এক প্রকৃতির রূপের খেলা। সার্বিক প্রচেষ্টায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার দ্বিগুন জমিতে সরিষা চাষ করেছে মণিরামপুর উপজেলার কৃষকরা। তবে উল্লেখ্যযোগ্য হারে অনাবাদি জমিতে এবার সরিষা চাষ নজর কেড়েছে প্রকৃতি প্রেমিদের মাঝে।
বিশ্বে যখন অর্থনৈতিক ভাবে বিধস্ত ঠিক এমন পরিস্থিতিতে ভোজ্য তেল আমদানিতে যেন ভোগান্তির শেষ নাই অন্য দিকে যেমন মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি হয়েছে বিশ্ব বাজারে তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে সকল পণ্যের দাম। আর বাংলাদেশকে প্রচুর পরিমান আমদানি করতে হয় ভোজ্য তেল যা বর্তমান সময়ে আমদানি করতে সরকারের গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের ভর্তুকি। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ২৪ মে কৃষিতে উন্নয়নের আহ্বান জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের । বিশ্ব বাজারে দিন দিন ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধ হওয়ায় বাংলাদেশে ব্যাপক হারে তৈল উৎপাদন করতে সরিষা চাষের আওতায় আনতে অনাবাদি জমি সহ আবাদি জমিতে সরিষা চাষে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদেরকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনায় মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু শাহিনের প্রচেষ্টায় মনিরামপুর উপজেলা পরিষদ ও কৃষি সম্প্রসারণের এর সহযোগিতায় ১৭ টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় সরিষা প্রযুক্তি গ্রাম নামে মোট ১৮ টি জোনে ১০ জন করে মোট ১৮০ জন কৃষককে ১ কেজি সরিষা বীজ, ৫০০ গ্রাম ব্রণ, ১ কেজি দস্তা, ৫ কেজি জিপসাম, ১০ কেজি ট্রায়কো কমপোস্ট প্রদান করা হয় সরিষা আবাদের জন্য কৃষকদের মাঝে। এছাড়া সরকারি ভাবে মনিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস এর আওতায় ৪৭০০ জন সরিষা চাষীকে প্রত্যেকে ১ কেজি সরিষা বীজ, ১কেজি পটাশ, ১০ কেজি ডিএপি, প্রনোদনা দেওয়া হয়।
গত মৌসুমে অত্র উপজেলাতে সরিষা আবাদ হয়েছে ১৪০১ হেক্টর জমিতে। উল্লেখ্য চলতি মৌসুমে আবাদ বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৩৫৫০ হেক্টর জমিতে। এবারের মৌসুমে উপজেলার প্রতিটি মাঠেই সরিষা চাষে বাম্পার ফলনে অন্যান্য কৃষকের মাঝে আগ্রহ বেড়েছে। সরিষা চাষে দ্বিগুণ লাভ, ফুল ও পাতা ঝরে জৈব সার তৈরি করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি যেমন হয় তেমন সরিষা তেল রান্নায় ব্যবহারে শরীরে রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভুমিকা রাখে।
মোবারকপুর গ্রামের প্রবাস থেকে ফিরে এসে আসাদুজ্জামান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে হবে এমন বক্তব্য শুনে তিনি চলতি মৌসুমে ২১৬ শতক জমিতে সরিষা চাষ করেছে। এর মধ্যে তিনি ১০০ শতক জমির সরিষা ঘরে তুলেছে এবং ব্যাপক ফলন হওয়ায় তিনি খুশি এবং আগামী মৌসুমে সরকারি সহয়ত পেলে আরো দ্বিগুণ জমিতে সরিষা চাষ করবেন বলে জানান।
শাহাপুর গ্রামের সরিষা চাষী মাষ্টার রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি এবাছর প্রথম সরিষা চাষ করেছেন, বিশ্ব বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেশী হওয়ায় তিনি ভেজাল মুক্ত ভোজ্য তেলের কথা চিন্তা করে ও মূল্য বৃদ্ধির জন্য এবছর ২৫ কাটা জমিতে সরিষা চাষ করেন।সরিষা চাষী আ ওহাব ৭২ শতক জমিতে এবার দেশী জাতের সরিষা চাষ করেছে। ৭২ শতক জমিতে সরিষা চাষে খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, করতে ৩৬ শতক জমিতে চার হাজার টাকা মতো খরচ হয়েছে ।তবে গতমৌসুমে তিনি ৩৬ শতক জমিতে সরিষা চাষ করে তিন মন সরিষা পেলেও এবার ৭২ শতক জমিতে ১৬ থেকে ১৮ মন সরিষা পাবে বলে আশা করছেন। আর বাজার মূল্য যদি ভালো হয় তবে ৭২ শতক জমিতে প্রায় ৮০ হাজার টাকার সরিষা বিক্রির আশা প্রকাশ করে।
মনিরামপুর উপজেলার কৃষি অফিসার মোঃ আবু শাহিন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে গত মৌসুম থেকে এবার দ্বিগুণ জমিতে সরিষা চাষ করাতে সক্ষম হয়েছি। এবার অনাবাদি জমিতে উল্লেখযোগ্য হারে সরিষা চাষ হয়েছে। আশা করছি আগামী মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলাতে সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটবে বলে।
মণিরামপুরে মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ, ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের আশা
পূর্ববর্তী পোস্ট