নিজস্ব প্রতিবেদক: অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর ট্রান্সপোর্ট মালিক সমবায় সমিতির নতুন তিন সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্র্বতীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির ঘোষণা দিয়েছে জেলা সমবায় কর্মকর্তা। নতুন এ কমিটির সভাপতি সহ বাকি দুই সদস্যরা অযোগ্য বলে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভোমরা স্থলবন্দর ট্রান্সপোর্ট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ শেয়ার সদস্যরা।
এব্যাপারে মেসার্স নিউ মাহমুদপুর ট্রান্সপোর্ট এর স্বত্ত¡াধীকারি ও প্রতিষ্ঠাতাকালীন শেয়ার সদস্য মোঃ সামছুজামান অভিযোগ করে বলেন, সমিতির সাধারণ শেয়ার সদস্যেদের অজান্তেই অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন করে কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১২০ দিনের এই তিন সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্র্বতীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির তিন জনের কেউ ট্রান্সপোর্ট ব্যাবসার সাথে জড়িত নেই। তারা শুধু মাত্র পদের আশায় সমিতিতে নাম লিখিয়েছেন। তিনি বলেন, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে সাধারণ সদস্যদের না জানিয়ে এই কমিটির অনুমোদন করা হয়েছে। সাবেক সভাপতি মোঃ কামরুল ইসলাম কাছে সমিতির অর্ধ কোটি টাকা রয়েছে। এব্যাপারে আমরা জেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে। তদন্ত কাজ শেষ হওয়ার আগে এই বিতর্কিত কমিটির অনুমোদন আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোমরা স্থলবন্দর ট্রান্সপোর্ট মালিক সমবায় সমিতির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, দেলোয়ার হোসেনকে নতুন করে সভাপতি হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে জেলা সমবায় কমকর্তারা। তার এই পদ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট পদের সংখ্যা ১৩ টিরও বেশি। তিনি পদ নিয়ে দালালি করে, আবার ভোমরার ঘর জামাই হয়ে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তিনি অবৈধ ভাবে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন। ভোমরা ইউনিয়নের পদ্মশাখরা গ্রামে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে একটি বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন। ভারতের পশ্চিম বাংলার আন্ডারওয়ার্ল্ডের সবার কাছে তিনি জিজাজি নামে পরিচিত। সাধারণ সদস্যেরা আরো বলেন, নতুন এই কমিটির তিন জনই সাবেক কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম এর কাছের লোক। সমিতির অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ ঘটনাকে ধামা-চাপা দেওয়ার জন্য, বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে নিজের লোক দিয়ে কমিটি নিয়েছে কামরুল ইসলাম। যাতে করে সে আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে বাঁচতে পারে।
স্থলবন্দর ট্রান্সপোর্ট সমবায় সমিতির সিনিয়র সদস্য মেসার্স আয়েশা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির স্বত্তাধিকারী মোঃ আমিরুল ইসলাম বলেন, যাকে সভাপতি করা হয়েছে সে কখনো ট্রান্সপোট ব্যাবসা করেননি। শুধু মাত্র নেতা হওয়ায় জন্য সদস্য হয়ে আছে। তার পদের কোনো শেষ নাই। ট্রান্সপোট এর কোনো সমস্যা সমাধান করার মতো কোনো যোগ্যতা তার নাই।
মেসার্স রনজু ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির স্বত্তাধিকারী মোঃ ইমরান হোসেন টনি এই কমিটি সম্পর্কে বলেন, এই কমিটির ব্যাপারে ফেসবুকে জানতে পেরেছি। নতুন কমিটির সভাপতিকে কখনো এ ব্যবসা করতে আমি দেখিনি। আর বাকি দুই জনকে আমি চিনিও না। সমিতির ২৯৫ জন সদস্যের ভিতরে ২০ জনও তাদের কে চেনে না। তাদের দিয়ে কিছু আশা করা যায় না, তারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এ পদ নিয়েছে।
সিরাজ, জিতু, অমিত, এবাদুল, মনি, মন্টু, বাবু, লতিফ, বাদশা, অজয়, শরিফ, সুদেব, মামুন, বাপ্পি, সিদ্দিক, জব্বার, কুতুব, আকবর, পিন্টু সহ বেশির ভাগ সাধারণ সদস্যরা বলেন, এরা কখনো ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততা ছিল না আজও নেই। এদের দিয়ে ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির ভালো কিছু আশা করা যায় না। কারণ এই ব্যবসা সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তাদের দ্বারা সমিতির ভবিষ্যৎ উন্নয়ন আশা করা যায় না। তাদেরকে কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে শুধুমাত্র অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য।
সাবেক অন্তর্র্বতী কালীন কমিটির সভাপতি মোঃ ফিরোজ হোসেন এর নিকট এই কমিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে অনেক সদস্যরা ফোন করেছে এবং দেখা করে নতুন কমিটি সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এটা কিভাবে সম্ভব, যারা অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তাদেরই লোক এই কমিটিতে আসে। আমরা সাধারণ সদস্যরা যারা ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা করি তাদের মধ্য থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব উঠে আসবে। সমবায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি এই বিশ্বাস রাখতে পরাছিনা।
জেলা সমবায় কমকর্তা খন্দকার মনিরুল ইসলামের কাছে জনতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য এই অন্তর্র্বতীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই ভোমরা স্থলবন্দর ট্রান্সপোর্ট মালিক সমবায় সমিতির নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করা হবে।
ভোমরা স্থলবন্দর মালিক সমবায় সমিতির আত্মসাৎকৃত অর্ধ কোটি টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, সমিতির আত্মসাৎকৃত অর্থের তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। এখনো তদন্ত রিপোর্ট হাতে আসেনি। নির্বাচনের আগেই আত্মসাৎকৃত অর্থ ফিরে পেতে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
ভোমরা স্থলবন্দর ট্রান্সপোর্ট সমবায় সমিতির বিতর্কিত কমিটি
পূর্ববর্তী পোস্ট