
সাতনদী অনলাইন ডেস্ক: ‘ভুঁইফোঁড়’ এবং ‘হাইব্রিড’ ভর করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থাকা ‘সুসময়ের কোকিলদের’ মূল লক্ষ্য ব্যক্তিগত আখের গোছানো। কেউ ‘রাজনৈতিক দোকান’ খুলে বসেছেন। কেউ বা কোনোভাবে ক্ষমতার সংস্পর্শে এসেই চাঁদাবাজিতে মত্ত হয়েছেন। এসব ব্যাপারে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা এবং দলটির শীর্ষ নেতারা কঠোর অবস্থান জানালেও হেলেনা জাহাঙ্গীরদের উৎপাত থামেনি। এমন অবস্থায় নতুন করে রাশ টানা হচ্ছে হাইব্রিডদের। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের ভাবমূর্তি যারাই নষ্ট করবে, তাদের বিরুদ্ধেই কঠোর হবে দল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বাইরে বেশকিছু সংগঠন সরব ছিলো। দলের অনুমোদন না থাকলেও সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে এসব সংগঠন। যার নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর। সুবিধাবাদীরা ভীড় জমায় দলটিতে। বিভিন্ন নেতিবাচক খবরের শিরোনামে আসতে শুরু করে আওয়ামী লীগ। তখনই রাশ টানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের চাঁদাবাজ নেতাদের সরিয়ে দেন। ক্যাসিনো-কাণ্ডে গ্রেফতার হন অনেকে।
এতেও ‘উৎপাত’ থামেনি। মো. সাহেদ এবং শামীমা নূর পাপিয়া’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েও থামানো যায়নি হেলেনা জাহাঙ্গীরদের। ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে ‘ভুঁইফোঁড়’ সংগঠনের স্বঘোষিত সভাপতি হয়ে হেলেনা ‘জয়যাত্রা টিভি’ নামে ওয়েবসাইট খুলে ‘চাঁদাবাজি’ শুরু করেন। বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি ঘুরে থিতু হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। বাগিয়ে নেন নারী বিষয়ক উপ-কমিটির পদও। নানান অভিযোগে ইতিমধ্যে হেলেনাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরপরই আরেক ‘ভুঁইফোঁড়’ সংগঠন ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’-এর সভাপতি মনির খান ওরফে দরজি মনির ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী’র আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি’র সংগে নিজের ছবি এডিট করে বসিয়ে নেতা বনে গেছেন মনির। দরজি পেশা ছেড়ে ঢাকা-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।
এতো কঠোরতার পরও সাহেদ-পাপিয়া’র উত্তরসূরীদের দৌরাত্ম্য কেন কমছে না, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, ‘আমরা যখন ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসি, তখন দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত। বিএনপি’র আমলে এই দেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দুর্নীতির যে স্তূপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি আমাদের সবাইকে ভোগাচ্ছে। ধীরে ধীরে এটি কমাতে হচ্ছে। আমরা অত্যন্ত কঠোর এই বিষয়ে। যেখানে দুর্নীতি সেখানেই আমরা অ্যাকশন নিচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে যারা চাঁদাবাজি করছে তাদের বিষয়ে দলীয় অবস্থান প্রসংগে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি, চাঁদাবাজি যে-ই করুক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। যেখানেই সাহেদ, সাবরিনা কিংবা হেলেনা এসেছে সেখানেই আমরা অ্যাকশনে গিয়েছি। দলে টাউট-বাটপারদের জায়গা নেই। এদেরকে আমরা জেলে পাঠাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, ‘হাইব্রিড’ এবং ‘ভুইফোঁড়’রা দলের কোনো না কোনো নেতাকে ব্যবহার করে। আওয়ামী লীগ নেতারাও বিভিন্ন বেনামি সংগঠনের অনুষ্ঠানে অতিথি হন। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীর-এর বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে দেখা গেছে। অন্যরাও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতাকে সামনে রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে শক্তি পায় অন্য হাইব্রিডরা। এই ব্যাপারেও দলীয় নেতাদের সতর্ক করেছে হাইকমান্ড।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি, কোনও নেতা স্বীকৃত সংগঠনের বাইরে ভুঁইফোঁড় সংগঠনের আমন্ত্রণে যোগদান করবেন না। এই ধরনের আমন্ত্রণ বা নিমন্ত্রণে গেলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কঠোর।’