
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরায় আশাশুনি উপজেলার ২নং বুধহাটা ইউনিয়নে ‘শেখ আব্দুস সোবহান কমিউনিটি ক্লিনিক’ প্রতিষ্ঠায় বাধা দিয়েছেন স্থানীয় কার্তিক মুখার্জির পরিবার। গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য সাংবাদিক ও গবেষক ড. শেখ মেহেদী হাসানের উদ্যোগে গত বছর ২৮ জুলাই ২০২০ এ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার সরকারি অনুমোদন পায়। নির্মাণ অনুমতির পর গত ১৬ আগস্ট ২০২১ সরকারি প্রকৌশলী, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ঠিকাদার সার্ভেয়ারের মাধ্যমে দানকৃত জমি চিহ্নিত করতে গেলে কার্তিক মুখার্জির পুত্র সৃষ্টিধর মুখার্জি ওরফে সুমন মুখার্জি (বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক) ও পয়াসর মুখার্জি বাধা সৃষ্টি করেন।
ক্লিনিকের জন্য দানকৃত জমি কেনা হয় স্থানীয় শ্রী বলায় কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ১৯৯৬ সালে। জমির সকল বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও মৃত বলায় কৃষ্ণর পুত্র সুকুমার বানার্জির সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ যুগ্ম জজ আদালত-২ এ ষড়যন্ত্রমূলক দেওয়ানী মামলা (মামলা নং ৮১/২০) করেন প্রতিবেশি কার্তিক চন্দ্র মুখার্জি। মামলার অধীন দানকৃত জমিও রয়েছে বলে তার দাবী। ইতিপূর্বে বেউলা শ্যামা মন্দিরের জমির দলিল জাল করে স্থানীয় জোবায়ের-এর কাছে বিক্রির চেষ্টা করেন মি. মুখার্জি। এজন্য মন্দিরের পুরোহিত পদ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বিতাড়িত হতে হয়।
কার্তিক মুখার্জি সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদেষ্ণা সরকার বরাবর ‘অবৈধভাবে কমিউিনিটি ক্লিনিক নির্মাণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে এক লিখিত আবেদন করেন। জনস্বার্থবিরোধী অবাঞ্চিত আবেদনপত্রের তদবির ও তদারকি করেন তার পুত্র সুমন মুখার্জি ও কন্যা চৈতালী মুখার্জি। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন ২৯ নভেম্বর ২০২০-এ সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) এবং সাব-রেজিস্ট্রার, আশাশুনির কাছে সংশ্লিষ্ট জমির বৈধতা যাচাইয়ের জন্য চিঠি দেন। উভয় অফিস দানকৃত জমির বৈধতা নিশ্চিত করে। সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ৭ ডিসেম্বর ২০২০ (স্মারক নং ৪৫১) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, “উপরোক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত স্মারকপত্রের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস আশাশুনি, সাতক্ষীরার ক্রমিক নং-১৮৯৯ বহি নং-১ দলিল নং ১৮৯৮ দানপত্র দলিলের গ্রহীতা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মাননীয় সচিব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বুধহাটা ইউনিয়নের বেউলা গ্রামের শেখপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা আশাশুনি, জেলা সাতক্ষীরা দানপত্র দাতা-১. মো. ছালাম শেখ, ২. আকিমুদ্দীন শেখ, উভয় পিতা মৃতু কিয়ামুদ্দীন শেখ মাতার নাম মৃতঃ ছায়রা বিবি সর্ব সাং বেউলা, উপজেলা-আশাশুনি, জেলা-সাতক্ষীরা মৌজা-বেউলা, জেএলনং ৫৫, হাল ৩১ নং এসএ ৮৫৫ নং খতিয়ানের রেকডীয় মালিক বলাই কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর নিকট হইতে ১৯৯৬ সালের ৮ জুন অত্র ফিসের ২৩২৭ নং রেজিস্ট্রীকৃত কোবলা দলিলমূলে দাতাদ্বয়ের পিতা কেয়ামুদ্দীন শেখ ও মাতা ছায়রা বিবি একত্রে ৩৩ শতক জমি খরিদ করিয়া বর্তমান জরিপে চ‚ড়ান্ত প্রকাশিত বিএস ১২৮১নং খতিয়ানে ১৮১৭ দাগে বাড়ি ৮ শতক রেকর্ড সৃষ্টি করিয়া দাখিলা প্রাপ্ত হন। তৎপর তাহাদের মৃত্যান্তে চেয়ারম্যান কর্তৃক ওয়ারেশান সার্টিফিকেট হিসাবে পৈত্রিক ও মাতৃক ওয়ারেশসূত্রে প্রাপ্ত হইয়া দলিল লেখক কৃষ্ণপদ মন্ডল সনদ নং ১০/২০১৯ কর্তৃক লিখিত ও শেখ মিজানুর রহমান পিতা বদরউদ্দীন দ্বারা সনাক্তকৃত হইয়া গ্রামবাসীর সুচিকিৎসা পাওয়া পাওয়ার সুবিধার্থে দাতাদ্বয় উক্ত শেখপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক বরাবর ৮ শতক জমি দান করেন।”
শেখপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিবর্তিত নাম ‘শেখ আব্দুস সোবহান কমিউনিটি ক্লিনিক’Ñএর নির্মাণে বাধা দেওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, সিভিল সার্জনের তদন্ত প্রতিবেদনে জমির বৈধতা নিশ্চিত হয়েছে। তাহলে কার প্রশ্রয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উন্নয়ন উদ্যোগের অন্যতম কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে বাঁধা দেওয়া এর প্রতিকার চায়। ষড়যন্ত্রমূলক একটি মামলায় জন্য দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মতো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হতে পারে না। এজন্য আদালতের অনুগ্রহ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।