
স্টাফ রিপোর্টার: দুর্নীতি, অনিয়ম করেও বহাল তবিয়াতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন ভূক্তভোগীরা। জানা গেছে, শ্যামনগর সেটেলমেন্টের এএসও জাকির হোসেন ও তৌহিদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত পেশকার রনজিত চন্দ্র সূত্র ধর, পিওন বদরুল ইসলাম সিন্ডিকেটে বন্দী উপকূলের ভূমি মালিকরা। অবৈধ অর্থের বিনিময়ে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি সংঘটিত হচ্ছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়াই জোনাল অফিসের বসে মূল বালাম বই ইচ্ছামত কাটা কাটি, বিভিন্ন মৌজার জমি কেটে অবৈধ ভাবে অন্য ব্যক্তির নামে করে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ভূক্তোভোগীরা এসব অনিয়ম, দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে মহাপরিচালক, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলাধীন শ্যামনগর উপজেলার ৮১নং হরিনগর, ৮২নং ধুমঘাট, ৮৩নং মুন্সিগঞ্জ, ১১৬নং আবাদ চন্ডিপুর এবং ১২০নং পদ্মপুকুর মৌজার চূড়ান্ত যাঁচ কাজ শ্যামনগরে নিয়ে অনিয়মের আশ্রায় নেওয়া হবে। সঠিক বিচারের স্বার্থে মৌজার চূড়ান্ত যাঁচ কাজ শ্যামনগরে না করে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস খুলনা জোনাল অফিস অথবা শ্যামনগর উপজেলার পরিবর্তে সাতক্ষীরা সদরে শুনানীর দাবি জানানো হয়েছে। কারণ শ্যামনগরের দায়িত্বে থাকা এএসও জাকির হোসেন ও তৌহিদ হোসেনের সিন্ডিকেটের কাছে উপকূলের সাধারণ মানুষ অসহায়। এসব কর্মকর্তাদের অনিয়মে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। যার প্রেক্ষিতে মহাপরিচালক বরাবর দায়ের করা হয়েছে। ভূক্তভোগীরা আরো উল্লেখ করেছেন, যাঁচ কাজ করার জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষ শ্যামনগরে রেকর্ডের নিরাপত্তাদানে ব্যর্থ হওয়ায় তা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। শ্যামনগর অফিসে মুহরি নামধারী দালালচক্র অতান্ত সক্রিয়। তারা অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় বৈধ নিয়ম কানুন এর তোয়াক্কা না করে বেআইনীভাবে রেকর্ড কাটাকাটি ও টেম্পার করে অন্যের নামে রেকর্ড করায়। ভূমি মালিকগনের অনেকের রেকর্ড ইচ্ছাকৃত ভাবে কাটাকাটি করে টেম্পার করা হয়। অতঃপর তাদেরকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়। ভূমি মালিকগণ হাজির হলে নানান অজুহাতে তাদের নিকট টাকা দাবী করা হয়। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার প্রতিপক্ষ হতে মোটা টাকা গ্রহন করে রেকর্ড কর্তন করা হয়। শ্যামনগরে রেকর্ড কর্তনের বিষয়টি অত্যন্ত ব্যাপক ও নজিরবিহীন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় দালালচক্রের সখ্যতা এতই ঘনিষ্ট যে, প্রকাশ্যে দিবালোকেও অফিস চলাকলীন সময়ে তারা অফিসের টেবিল চেয়ারে বসে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যায় কাজকর্ম করে। এমনকি অফিসের খাতাপত্র রেজিষ্টার ইত্যাদি তাদের নিয়ন্ত্রনে রেখে তারাই লেখালেখি করে। এ ধরনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার/কর্মচারীর নিকট আদৌ রেকর্ড ও নকশা নিরাপদ নয়। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ এতই প্রভাবশালী ও দুর্নীতি পরায়ন যে, ৫/৬ বৎসর এক স্টেশনে চাকুরি করার পরেও তাদেরকে বদলী করা হচ্ছেনা। দালালচক্র ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পত্র পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা এবং ভুক্তভুগী ভূমি মালিকদের জোনাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। শ্যামনগর উপজেলায় কর্মরত বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রতিদিন আগমন ঘটা এসব দালাল চক্রের নিকট চূড়ান্ত যাঁচ কাজ ও রেকর্ড ফেরত পাঠানো হলে ভূমি মালিকগণ এমন চরম দুঃখ দুর্দশার সম্মুখীন হবে, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলবর্তী শ্যামনগর সেটেলমেন্ট অফিসে রয়েছে একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট। সাম্প্রতিক এই সিন্ডিকেটের বেশকিছু অনিয়ম, জালিয়াতির সত্যতা মিলেছে। দাপ্তরিক ভাবে তদন্ত করলে অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা মেলবে। দীর্ঘ সময় একই উপজেলার দায়িত্বের থাকার সুবাদে ওই এলাকার চিহ্নিত দালালদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর তাই বছরের পর বছর ওই এলাকার সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে চলেছেন এসব ব্যক্তিরা। সাম্প্রতিক মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ৪২ (ক) ধারায় অবৈধ পন্থায় ভূয়া রায় দিয়েও তা টেকাতে পারেনি সেখানে কর্মরত এএসও জাকির হোসেন। যশোর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে থাকা নথি গোপনে খুলনা জোনাল অফিস থেকে ভুয়া রায় দেন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জাকির হোসেন। পরে বিষয়টি জানা জানি হলে ভূক্তভোগীরা পরিচালক ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর বরাবার ১১৪৪/২০২৪ ও ১৬৪৯/২০২৪নং মিস মামলার রায় বাতিল চেয়ে একটি আবেদন জানান। এরই প্রেক্ষিতে গত ৯ এপ্রিল তারিখে ওই রায় বাতিলের নির্দেশ দেয় ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। একই সাথে ভূয়া রায়ের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে এক মাসের মধ্যে তাদের তালিকা মহাপরিচালক বরাবর পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা আগমী ২৫ মে ধার্য্য দিন শেষ হবে। শ্যামনগর সেটেলমেন্ট অফিসের এএসও জাকির হোসেন জানান, সব অফিসের সাথে কমবেশি দালালদের সম্পর্ক থাকে। এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। ভূয়া রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আদেশের বিষয়ে তামিল করি। পরে সেটি বাতিল হয়েছে।