মহাকালের মহানায়ক জাতির জনক বাংলাদেশের স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি অসম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ফলক ভাস্কর্য ভাঙ্গাটা জাতির জন্য কলঙ্ক অধ্যায়। ছি: ছি: ছি: এই লজ্জা রাখি কোথায়। যেখানে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সেখানে বরবর অসভ্য দুবৃত্তদের এত সাহস কোথায় থেকে আসল তা প্রশ্ন বোধক হয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে সাংবিধানিকভাবে বঙ্গবন্ধু জাতিরজনকভাবে সীকৃত, সেখানে প্রকাশ্য ভাস্কর্য ভাঙ্গাটা দু:খ ও লজ্জাজনক। আমরা ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী বাংলা ভাষা তথা অসম্প্রদায়িক বাংলার জন্য রক্ত দিয়েছি। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঐতিহাসিক ৬ দফা বাস্তবায়নে আন্দোলন করেছি। ৬৯’র গণ আন্দোলন, ৭০’র নির্বাচন, ৭১’র ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষন, ২৬’শে মার্চের স্বাধীনতা ঘোষনা, দীর্ঘ ৯ মাসে সম্মুখ যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহিদ হওয়া, ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতহরণ, যুদ্ধকালীন বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান কারাগারে আটক ও তথা কথিত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি কার্যকর করার চেষ্টা, ১৯৭২ সালে ৮ই জানুয়ারী পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, মুক্তি হওয়ার পর লন্ডন হয়ে ১০ই জানুয়ারী সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর হাতে নেওয়া যুদ্ধ বিদ্ধস্থ দেশকে পূর্ণাঙ্গ সংগঠিত করার যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু অবতির্ন হওয়া দীর্ঘ চার বছরে বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতার পরিবর্তে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালো রাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার মাধ্যমে এই দেশকে পাকিস্তান রূপান্তর তথা স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে প্রতিষ্ঠার পায়তারা পূর্ণাঙ্গ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার পায়তারার মাধ্যমে দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখা ইতোমধ্যে ১৯৮১ সালে ১৭ই মে জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভা নেত্রীর দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফিরা ৮১ সালের ৩০শে মে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়া ঘটনাসহ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের গৌরব গাঁথা ইতিহাসের অধ্যায় পার হয়ে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা এবং ইন্ডেমেনিটি কালো আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাসহ কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করা অসংখ্য ইতিহাস রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ণাঙ্গ বিচার শেষ হওয়ার আগেই ২০০১ সালে আবারও বিএনপি জামাত জোট বেঁধে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বাঁধা প্রদান করাসহ স্বাধীনতা বিরোধী আলবদর রাজাকারদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়াসহ অসংখ্য স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকান্ড দেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যা স্বাধীনতাকামী মানুষদের জন্য একটি অনাকাঙ্খিত অধ্যায় হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়া। সেই মৌলবাদেরা মাথাচারা দিয়ে উঠে এ দেশের পূর্ণাঙ্গ সাম্প্রদায়িকতার বীজ রোপন করে দেশকে পাকিস্তানের পরিচালনার পায়তারাসহ অসংখ্য বিবেক বঞ্চিত কাজ রচিয়িত হয়েছে। যা সভ্য সমাজের অসভ্যতার বহিঃপ্রকাশ। দীর্ঘদিন জামায়াত জোটের শাসনের পর সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠিত হয়ে দীর্ঘ দুই বছর অগণতান্ত্রিক সরকারের অধিনে রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়া সবকিছুর যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে আজকে ভাস্কর্য ভাঙ্গার সাহস তারা একদিনে পায়নি। দীর্ঘবছরের তাদের বেপরোয়া রাজনৈতিক আচার আচরণের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে জাতির জনকের ভাস্কর্য ভাঙ্গার। ২০০৯ সাল হতে অদ্যবদী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, যে সরকার ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারকার্য্য আংশিক সম্পন্ন করা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পূর্ণাঙ্গ বিচারকার্য্য শেষ করলেও ২১’শে গ্রেনেড হামলার বিচারকার্য্য এখনও শেষ হয়নি। পৃথীবির সকল সভ্যদেশে স্মৃতির পলক হিসেবে প্রতিটি জাতির জনক তথা বিশেষ মানুষদের ভাস্কর্য রয়েছে। যা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য, পরিচিত করার জন্য ইতিহাসকে পুর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার জন্য ওখানে ধর্মের উর্দ্ধেরেখে ভাস্কর্য গুলো বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শীত হয়ে থাকে। আর আমাদের স্বাধীন দেশে অসম্প্রদায়িক সমাজে ভাস্কর্যকে মুর্তি হিসেবে আক্ষায়িত করে প্রকাশ্য ভাংচুরের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চাই বঙ্গবন্ধু এদেশের কেউ নয় বা তার কোন ভূমিকা নেই। যদি এই মনোভাব তাদের না থাকত তাহলে কোনভাবেই জাতির জনকের ভাস্কর্য এভাবে ভাঙ্গতে পারত না। আজকে রাষ্ট্র তথা সচেতন অসম্প্রদায়িক মানুষেরা একত্রীত হতে হবে। এই অসভ্যতাকে রুখিয়ে দেওয়ার জন্য। আমরা তার মাধ্যমে প্রমাণ দিতে চায় বঙ্গবন্ধু কোন ব্যক্তি বিশেষ ব্যক্তি নয়, তিনি একজন রাষ্ট্র তথা স্বাধীনতার প্রতীক, তিনি একজন রক্তমাখা জাতীয় পতাকা, যা আমরা তাকে জড়িয়ে ধরে ইতিহাসের পথে এগিয়ে যাব।
লেখক পরিচিতি: সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা।