
মীর খায়রুল আলম: কোন প্রকার পারিশ্রমিক না নিয়ে বছরের পর বছর ইফতারি রান্না করে যাচ্ছেন মিজানুর রহমান মন্টু নামের এক ব্যক্তি। তিনি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শাহাজাতপুর গ্রামের মৃত আনসার মালীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন শ্রমজীবী মানুষ। সবাই তাকে মন্টু মিয়া বলেই চেনেন। তবে তার বয়স আটান্ন ছুঁইছুঁই। জানা গেছে, প্রতি বছর রমজান মাস আসলে তার একটি দায়িত্ব বেড়ে যায়। কারণ মুসল্লিদের জন্য ইফতার রান্না করেন তিনি। গ্রামের মসজিদে বিভিন্ন ব্যক্তি ইফতার দিয়ে থাকেন। আর বেশিরভাগ সময় যার বাড়ি ইফতার রান্না হয় তার বাড়িতেই ডাক পড়ে মন্টু মিয়ার। ইফতারের দু-একদিন আগেই তাকে বলে রাখেন এলাকাবাসী। এই ইফতার রান্না বাবদ মন্টু মিয়াকে কোন টাকা-পয়সা দেওয়া লাগে না। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই তিনি এ কাজ করে থাকেন। প্রতিদিন অন্যের জমিতে কাজ না করলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে তার। ছেলে, মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে মোট চার সদস্যের পরিবার মন্টু মিয়ার। ছেলে মাধ্যমিকে পড়ে এবং মেয়ে পাশ্ববর্তী একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। প্রতিদিন সকাল হলে বেরিয়ে পড়েন কাজের খোঁজে। পরের জমিতে কাজ করে যে টাকা পান তা দিয়েই পুরো সংসার চলে তার। তবে প্রতিবছর রমজান মাস আসলে অন্যের ক্ষেতে কাজ ঠিক হলে তিনি সকালের প্রথম ভাগে কাজ শেষ করেন। আর দুপুরের পর চলে যান ইফতার রান্না করতে। এভাবে প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি নিজেদের মসজিদসহ আশপাশের মসজিদের মুসল্লীদের বাড়িতে ইফতার রান্না করে আসছেন। এর পাশাপাশি এলাকার কোন মানুষ মারা গেলে তাদের কবর খুঁড়তেও দেখা যায় তাকে। এ বছর পহেলা রমজানে ইফতার রান্না করতে যান রেজাউল ইসলাম নামে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে। রান্না শেষে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ইফতার রান্না করে আসছি। এলাকার বেশিরভাগ মানুষ ইফতারে খিঁচুড়ি পছন্দ করে। তাই মুসল্লীরা ডাল-চাল আর মুরগির মাংস দিয়ে খিঁচুড়ি রান্না করে মসজিদে ইফতার দেন। তবে অনেকে ভাত-মাংস দিয়েও ইফতার দিয়ে থাকেন। রমজানে অন্যের জমিতে কাজ করে একটু কষ্ট হয়ে যায়। তবুও আমি চেষ্টা করি প্রতি বছর মানুষের বাড়িতে গিয়ে ইফতার রান্না করে দিতে। এসময় তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এ কাজ করে যাবেন বলেও আশা ব্যক্ত করেন। উওর শাহাজাতপুর আল-মদিনা জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক মো. অজিয়ার সরদার বলেন, মন্টু মিয়াকে দীর্ঘদিন ধরে আমি ইফতার রান্না করতে দেখে আসছি। এছাড়া বিয়ে বা অন্যকোন অনুষ্ঠানেও সে রান্নাবান্না করে থাকেন। তার রান্নার স্বাদও বেশ চমৎকার। সে এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্না করে বলে আমাদের বাইরে কোথাও আর বার্বুচি খুঁজতে যাওয়া লাগে না।