
প্রমথ সানা, পাইকগাছা থেকে: বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে তরমুজ আবাদ। সবুজের আস্তরণে ক্ষেতে কোথাও গাছে ফুল ফুটছে। কোথাও দু’এক টা ফল এসেছে। যত গাছে ফল ধরছে চাষীদের স্বপ্ন পূরণের আশায় তত বুক বাঁধছে। একপ্রকার নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে। তপ্ত রোদে। মাথার ঘাম পা’য়ে ফেলে। কৃষান-কৃষাণীরা কেউ গাছ পরিচর্যায়। কেউ কেউ পানি ও সার দেওয়ায় ব্যস্ত। উপজেলা পাইকগাছার দেলুটি ও গড়ইখালী ইউনিয়ানের বিভিন্ন এলাকার তরমুজের আবাদ ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়। এলাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুন বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। কৃষকরা তরমুজের বাম্পার ফলন আশা করছে। ব্যাপক হারে ড্রাগন, সুইট ড্রাগন, পাকিজা, বীগ ফ্যামিলি, কালো মানিক সহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে। উপকূলবর্তী দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম লবণাক্ত এলাকা হচ্ছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলা বেশির ভাগ লীজ ঘেরে চিংড়ি চাষ। এখানে এক ফসলি জমিতে আমন ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল হত না। বেশ কিছুদিন আগে এ সব জমিতে লবণ পানি থই থই করত। লবণ পানি বন্ধ হলে পরে ওই সব জমিতে তিল ও মুগ চাষ শুরু হয় গড়ইখালীতে আমনের এক ফসল হতো। বাকী সময়ে পতিত থাকত। গত দু’বছর অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিল চাষ বাদ দিয়ে কৃষকেরা তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়েন। জমিতে ভালো ফসল হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যে কারণে তরমুজকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন হাজারও কৃষক। লবণের করালগ্রাসে দক্ষিণাঞ্চলে পতিত থাকত হাজার হাজার হেক্টর জমি। দুবেলা খেয়ে জীবন চলত বেশির ভাগ কৃষকের। পাইকগাছার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের দিক নির্দেশনায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার প্রদীপ পোদ্দার, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাধক ঢালী, মোঃ ইয়াছিন আলী, উত্তম কুমার কুন্ডু ও মোঃ শাহীনুল ইসলামদের বারবার পরামর্শ, আলোচনা সভা ও বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত ছুটে চলার কারণে আজ প্রায় ১১শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজ চাষ হচ্ছে। এই লাভজনক চাষে উপজেলার এ দুটি ছাড়াও অন্য ইউনিয়নের হাজার হাজার চাষিরা ঝুঁকছেন। তরমুজের জীবনকাল ৯০-১২০ দিন। তবে ফল ধরা শুরু হয় ৬০ দিন পর থেকে। এই উপজেলায় ব্যাপকহারে ড্রাগন, পাকিজা, বীগ ফ্যামিলি, কালো মানিক জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি চাষ হচ্ছে ড্রাগন ৫০%, সুইট ড্রাগন ২৫%, পাকিজা২৩% ও অন্যান্য ২%। উপসহকারী কৃষি অফিসার মিন্টু রায়সহ অন্যরা জানান, গত বছর এ উপজেলায় তরমুজ চাষ হয়েছিল ৫১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর চাষ হচ্ছে তার দ্বিগুণ। দেলুটিতে ১হাজার এবং গড়ইখালী ১শত হেক্টর জমি। অর্থাৎ মোট ১১০০ হেক্টর জমিতে। বিঘা প্রতি খরচ ১০ থেকে ১২হাজার টাকা। প্রতি হেক্টরে খরচ পড়ে ১ লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। সঠিকভাবে চাষাবাদ করলে হেক্টর প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ মেট্রিকটন ফলন উৎপাদন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যা বিক্রি হতে পারে প্রায় ২ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী উপজেলাব্যাপী প্রায় ২২ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছেন কৃষকরা। দেলুটি ইুউপির কালিনগরে পরিতোষ, সেবনেরবের হিরেন্ময় ও গোপীপাগলা গ্রামের প্রহ্লাদ এবংগড়ইখালী ইউপির আমেরপুর মিল্টন,গৌতম সানা, বাইনবাড়িয়ার বীরেন্দ্রনাথ,গোবিন্দ,উত্তম,শান্তার শফিকুল ইসলাম,কুমখালী দিলীপ ঢালী ও ব্যাসদেব কবিরাজ, হোগলারচক গ্রামের মলয় তরমুজ চাষীরা এ প্রতিনিধিকে বলেন, খুলনায় তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত পাইকগাছায় এবারও ব্যাপক হারে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। এএলাকার তরমুজ খুব মিষ্টি। বাজারে চাহিদাও ব্যাপক। গত বছর করোনার কারণে দাম পাননি চাষিরা। এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আশা করছেন তারা। তারা দুই বিঘা থেকে দশ/বারো বিঘা জমিতে এবার তরমুজের বীজ বপন করেছেন। বিজ থেকে চারা গজানো শুরু হয়েছে। তারা আরো জানান, মিষ্টি পানির অভাবে এবার জমিতে ঠিকমত পানি দিতে পারছে না। এব্যাপারে সমাধানে কৃষি অফিসারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ঠ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তরমুজের বাম্পার ফলন হবে। কৃষক তাদের উচ্চ মূল্যের ফসল যাতে লাভজনক অবস্থয় ঘরে তুলতে পরে সেজন্য কৃষি বিভাগ সব সময়ই সহযোগীতা করছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি সমস্যার সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।