
এমপি রবির নেতৃত্বে উদ্বোধনী সভায় যাচ্ছে সাতক্ষীরার কয়েক হাজার মানুষ;
শুক্রবার বাদজুমা সকল মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠান, বড় বড় হাট বাজারে মিষ্টি বিতরণের উদ্যোগ;
আহাদুর রহমান জনি: জেলার অর্থনীতির অকল্পনীয় উন্নয়ন হবে। হবে জেলাবাসীর ভাগ্যন্নোয়ন। প‚র্ণাঙ্গ বন্দর হবে ভোমরা, অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে ভারী শিল্প কারখানা স্থাপিত হবে। এসবের ম‚ল চালিকা শক্তি হবে পদ্মা সেতু। সাতনদীর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, নৌ কমান্ডো ০০০১ বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।
আর মাত্র ৪দিন পর উদ্বোধন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আকাঙ্খিত স্থাপনা পদ্মা সেতু। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে পদ্মা সেতু। এই সেতু ঘিরেই সোনালী ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছে এই অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ কাড়বে, গড়ে উঠবে এসব জেলায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা। এ সেতু দিয়ে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পারবে এশিয়ান হাইওয়েতে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ২১টি জেলা হচ্ছে- খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পর্কে সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সাতনদীকে জানান, সর্বস্থরের জনগনকে সাথে নিয়েই ২৫ জুন আমাদের গোটা জাতির অহংকার স্বপ্নের পদ্মা সেতু যেটি উদ্বোধন হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন।২৪শে জুন শুক্রবার সদর উপজেলার এক হাজারের অধিক মসজিদ রয়েছে। প্রত্যেকটি মসজিদে আমরা বাদ জুম্মা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন হবে। আমি আমার এই ১৪টি ইউনিয়নের সবাইকে আহবান জানাচ্ছি আপনারা মসজিদে যেয়ে ওই মিলাদে শরিক হবেন। মিলাদের পরে আমরা তাবারক বিতরন করবো। এর পরেই যে হাট বাজারগুলো আছে সেখানেও মিষ্টি বিতরণ করবো। ওই দিন রাতেই আমরা কয়েক হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য রওনা দিব।
এক প্রশ্নের জবাবে এ নৌ কমান্ডো সাতনদীকে বলেন, রাতেই যাব। কিন্তু আমরা চাইলেই ৫০ হাজার মানুষ যেতে পারবোনা। যানবাহন পাওয়ার ওপর ভিত্তি করে আমরা রওনা দিব। খাবার, পানি, ডাক্তার, ওষুধ, সাংবাদিক সহ সবাইকে নিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে জনসভা করবেন সেখানে মিলিত হব। আমি বিশ্বাস করি মহান আল্লাহ তায়লা আমাদের সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করবেন। আমরা কামিয়াব হবো। এজন্য আমি সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদের উন্নয়নের গতিপথ তুলে ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা রবি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়ে যাওয়ার পরে আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের জন্য একটি ক্যাপিটাল হবে। আমাদের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট বাড়বে। সাথে সাথে আমাদের দক্ষিণের বন্দরগুলোতে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। আগে যে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পদ্মার ওপারে হতো এখন সেগুলো পদ্মার এপারে হবে। আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য বেড়ে যাবে। আমাদের কাঁচামাল প্রতিদিন আমরা আমাদের এলকা থেকে সারাদেশে আমরা পাঠাতে পারবো। কৃষিপণ্য দ্রুত গন্তব্যে পৌছে যাবে। কৃষকরাও লাভবান হবে।
মিঃ রবি বলেন, দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত মৎস্য ও পাট শিল্প যার অধিকাংশ থেকে রফতানির মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে। পদ্মা সেতু হলে এই আয় আরও বাড়বে। পাশাপাশি কমে যাবে পণ্য পরিবহণেরও খরচ। একইভাবে পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন, সাধারণ মানুষের যাতায়াতসহ পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গেও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের এক নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত হবে।
পদ্মা সেতু ঘিরেই সোনালী ভবিষ্যতের কথা তুলে ধরে এমপি রবি সাতনদীকে বলেন, আমি যেটা মনে করি একটি অসম্ভবকে আমরা সম্ভব করেছি। সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কারণেই সম্ভব হয়েছে। উনার দৃঢ়তা, বিজ্ঞতার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এছাড়াও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। সার্বিক ভাবে এমন একটি উন্নয়ন হবে যেটি আমরা কল্পনাও করতে পারি নাই। ভোমরা বন্দর একটি বড় বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ বেনাপোল বন্দর থেকে ঢাকার দ‚রত্ব কম ছিলো। আবার ভোমরা বন্দরে সকল ধরনের পন্য আমদানি করা যায়না। তবে খুব শীঘ্রই ভোমরা বন্দর দিয়ে সকল ধরনের পন্য আমদানির অনুমতি পাবে। এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে তা আরও তরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু হওয়ার পর বেনাপোল বন্দরের চাইতে ভোমরা বন্দরের সাথে রাজধানীর দূরত্ব কম হবে। ভৌগলিক কারণে ভোমরা বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি রপ্তানিতে সুবিধা বেশি থাকায় বন্দরটির জৌলুস আগের চাইতে বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে।
অন্যদিক থেকে মংলা পোর্টটিও অনেক গতিশীল হবে। বিশ্বের অন্যান্য বন্দরের সাথে মংলা বন্দরের যোগাযোগ বাড়বে। মংলা থেকে রাজধানীতে পন্য সামগ্রী পাঠাতে যে জটিলতা ছিলো পদ্মা সেতুর কারণে যে জটিলতা দ‚র হওয়ায় বন্দরটিও চট্টগ্রাম বন্দরের মত ব্যস্ত একটি বন্দরে রুপান্তরিত হবে। শুধু মংলা বন্দর নয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পর পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের গুরুত্বও বাড়বে। প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন করা হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এই বন্দরও এক বৃহত্তম বন্দরে রূপান্তরিত হবে। এমনকি ভ‚টান, পূর্ব নেপাল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশের জন্য পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর হিসাবে ভূমিকা রাখতে পারবে।
বাংলাদেশের জিডিপিতে পদ্মা সেতুর যে অবদান থাকবে সে সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সাতনদীকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান, বাংলাদেশ সরকারের ধারণা ছিল পদ্মা সেতু ১ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আনবে। এখন মনে হচ্ছে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এটা ২-এর কাছাকাছি চলে যাবে। যা পরে আরও বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আম‚ল পরিবর্তন আসায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়বে। তাছাড়া, সড়ক ও রেলপথ বিশিষ্ট এই পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করার পাশাপাশি। এতে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। বিনিয়োগ বাড়বে। কৃষিখাত সরাসরি উপকৃত হবে। বিশেষ করে ভারতের বাণিজ্য বাড়াতে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ও খুলনার মংলা বন্দর ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-প‚র্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকা রাখবে। সব মিলিয়ে এই পদ্মাসেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য আশির্বাদ হয়ে ধরা দেবে।