
আব্রাহাম লিংকন, শ্যামনগর থেকে: যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক উৎস থেকে সকল প্রকার মাছের রেণু বা পোনা সংগ্রহে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় তথা সরকারের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেশীয় এবং সামুদ্রিক যাবতীয় মাছের বংশ বিস্তারের বাঁধা দুরীকরণেই এমন পদক্ষেপ। যাতে পরিণত আকৃতি লাভের পর প্রজনন সক্ষমতার সুযোগে নদ-নদীসমুহে মাছের পরিমান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার পেক্ষিতে প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছের রেণু সংগ্রহে সরকারি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে বঙ্গপোসাগর তীরবর্তী নদ-নদীতে জাল ব্যবহারে জেলেদের নিরুৎসাহিত করা হয়। সরকারি এ নিষেধাজ্ঞা মেনে অধিকাংশ জেলে বড় মাছ শিকারের জন্য জাল-দড়া নিয়ে সুন্দরবন বা সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীসমুহে দীর্ঘকাল ধরে বংশ পরম্পরায় মাছ শিকার করছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী জেলে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীসমুহ থেকে বিভন্ন প্রজাতির মাছের রেণু অবৈধ নেট জাল শিকার শুরু করেছে। মুলত: লোকালয়ে গড়ে ওঠা চিংড়ি ঘেরসমুহে এসব মাছের রেনু মোটা দামে বিক্রি করে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনের সুযোগ থাকায় দিনকে দিন রেণু শিকারী এমন জেলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের কারনে তারা নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই দেদারছে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদী থেকে এসব রেণু অবৈধ নেট জাল দিয়ে শিকার অব্যাহত রেখেছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে যে, বনবিভাগের সাথে গোপন আতাঁতে একশ্রেণীর দালালের মাধ্যমে সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪টি স্টেশন, বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কোবাদাক এবং ১০টি টহলফাঁড়ী, নটাবেঁকী, কাঁছিকাঁটা, পুষ্পকাঁটি, দোবেকী, কাটেরশ^র, কলাগাছিয়া, মুন্সীগঞ্জ, চুনকুড়ীঁ, মরগাং, টেংরাখালী এই সব স্টেশন ও টহলফাঁড়ী কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করা হয়। চোখের সামনে নেট জালের মাধ্যমে মাছের রেণু বা পোনা সংগ্রহ করলেও না দেখার ভান করে থাকেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
তবে গতকাল সকাল ৮টার সময়ে ভেটখালী ঋশিপাড়া সংলগ্নে কয়েকটি রেনু আহরন করার নৌকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু জেলে জানান, আমরা এই এলাকায় ১২টি নৌকায় নেট জালের মাধ্যমে রেনু আহরন করে থাকি। বিজিবি, কোষ্টগার্ড, ফরেষ্টার আমাদের কেউ কিছু বলেন না বলে আমরা নদীতে নেট জাল দিয়ে রেনু পোনা আহরন করি। তবে জনৈক একজন সংবাদিক আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নৌকা পিছু ২শ, ৩শ ও ৫শ টাকা নিয়ে যায়। মাঝে মাঝে নৌ-পুলিশ এসে নদীতে মাছ অবমুক্ত করে থাকেন। চড়া দামে এই রেনুপোনা মৎস্যঘেরীরা কিনে নিয়ে যায়। এই জন্য আমরা রেনুপোনা আহরনে আগ্রহী।
স্থানীয় চিংড়ি ঘের মালিক অনেকে জানান, স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে দামও বেশ চড়া হওয়ায় তারা চিংড়ির ঘেরে রেণু ছাড়ে। তাদের দাবি উপকুলীয় এ অঞ্চলে দিনে দিনে চিংড়ীর চাহিদা পুর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় বেড়ে চলেছে।
রায়নগর নৌ-পুলিশফাঁড়ী অফিসার ইনচার্জ আক্কাজ আলী জানান, আমি অভিযান চালিয়ে ২টা নৌকা থেকে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ রেনুপোনা উদ্ধার করে নদীতে অবমুক্ত করেছি। আমার অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তবে কৈখালী কোষ্টগার্ড সিসির মোবাইলে বার বার ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ না করার কারনে মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কৈখালী বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার আব্দুল হাই বলেন, আমরা রেনু পোনা ধরার পাশপার্মিট দেই না। তবে জেলেরা কেন আমাদের কথা বলবে ? তবে বর্ডার সংক্রান্ত বিষয়ে কোন তথ্য থাকলে আমাদের কাছে জানাবেন।
কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায়, ক্যাশিয়ার সরোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের জানার বাহিরে, আপনি বলছেন বিষয়টি দেখবো।