
দেবহাটা প্রতিবেদক: টেকসই নদী অববাহিকা ব্যবস্থাপনা (এসআরএম) দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনকে অভিযোজিত করা (চতুর্থ পর্যায়) এর আওতায় দেবহাটা উপজেলা পানি কমিটির ত্রৈমাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৫ মার্চ) উত্তরণ ও দেবহাটা উপজেলা পানি কমিটির আয়োজনে পারুলিয়াস্থ উত্তরণ-সিমান্ত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেবহাটা উপজেলা পানি কমিটি সভাপতি আবুল ফজল এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান। পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদের পরিচালনায় বক্তব্য দেন উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আনছার আলী, হামিদা পারভীন, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আফসার আলী ও এনামুল হক, প্রভাষক আবু তালেব, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর খায়রুল আলম, রিপোর্টাস ক্লাবের সভাপতি আর.কে বাপ্পা, উত্তরণের প্রজেক্ট অফিসার দিলিপ সানা, সফল প্রকল্পের উপজেলা ব্যবস্থাপক নাজমুল বাশার, উত্তরণের উপজেলা ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। সভা শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর সাতক্ষীরা জেলার বেতনা মরিচ্চাপ অববাহিকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে সরকারের গৃহীত চলমান প্রকল্পে টিআরএম অন্তর্ভুক্তি করে বাস্তবায়ন এবং ইছামতি নদীর সাথে লাবণ্যবতী ও সাপমারা নদীর অবাধ পুনঃ সংযোগ প্রদানের আবেদন করা হয়। লিখিত আবেদনে জানানো হয়েছে, জেলার বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী অববাহিকা অঞ্চলে দীর্ঘ প্রায় ৩০-৩৫ বৎসর যাবৎ জলাবদ্ধতা সমস্যাটি অব্যাহত আছে। ক্রমশঃ এ সমস্যার তীব্রতা ও বিস্তৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমস্যার প্রকটতায় দেবহাটা উপজেলা সহ সাতক্ষীরা জেলার প্রায় ১৫ লক্ষ অধিবাসী প্রতিবছরই মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কর্তৃক এ যাবৎ যেসব প্রকল্প বা কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হয়েছে তা দ্বারা তেমন কোন ফলপ্রসূ ফলাফল অর্জিত হয়নি। প্রতি বৎসর বর্ষাকালে এখানে জলাবদ্ধতা শুরু হয় এবং নীচু বসতি এলাকায় ৩-৬ মাস, বিল এলাকায় ৭/৮ মাস এমনকি অনেক এলাকা সারা বৎসর জলমগ্ন থাকে। এ কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিবার ঘর-বাড়ী ছেড়ে এলাকার উঁচু রাঙা, বাঁধ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আত্মীয় স্বজন বা অন্য কোন সুবিধাজনক জায়গায় আশ্রয় নেয়। বর্ষাকালে আমন ধানের চাষাবাদ সম্ভব হয় না এবং অধিকাংশ মৎস্যঘের পানিতে ভেসে একাকার হয়ে যায়। এলাকায় পানি বাহিত রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্যহানি, কর্মসংস্থানের অভাব, ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার ক্ষতিসহ নানাবিধ সমস্যায় এলাকার জনজীবন অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়। ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র ও দুঃস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম যথেষ্ঠ অপ্রতুল থাকে। আবার একদিকে প্লাবিত এলাকায় বসবাসের সমস্যা, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দেয়। এ অবস্থায় এ জনগোষ্ঠীর পক্ষে এলাকায় টিকে থাকা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। নদীবক্ষে ব্যাপক হারে পলি জমে বেতনা এবং মরিচ্চাপ নদী মৃতঃ নদীতে পরিণত হয়েছে। অতীতে এ নদী দুটি সচল রাখতে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড সহ সরকারি অর্থায়নে একাধিকবার বেতনা নদী খনন করা হয়েছে, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রাণসায়ের ও মরিচ্চাপ নদী খনন এবং বু-গোল্ড প্রকল্পের আওতায় ২নং পোল্ডারের মধ্যের খাল খনন, লুইসগেট সংস্কার সহ সকল ধরণের অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। কিন্তু এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন দ্বারা বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি এবং এলাকার জলাবদ্ধ পরিস্থিতিরও কোন সমাধান হয়নি। সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬-৮ ও ৬-৮ (এক্সটেনশন) এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান আইডব্লিউএম কর্তৃক ১, ২, ৬-৮ ও ৬-৮ (এক্সটেনশন) পোল্ডারের জন্য সমীক্ষার ভিত্তিতে যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয় সেখানেও মরিচ্চাপ ও বেতনা অববাহিকার জন্য এবং ইছামতি নদীর সাথে সাপমারা ও লাবণ্যবতী নদীর পুনঃ সংযোগ প্রদানের বিষয় দু’টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৩ সালে যশোরের ভবদহ এবং সাতক্ষীরা অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানকল্পে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে। সে পরিকল্পনায় বেতনা ও মরিচ্চাপ অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়নের বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ন্যাশনাল এডাপটেশন স্থান, পিআরএসপি ও বিডিপি-২১০০তেও এবিষয়ে উল্লেখ আছে। এসব পরিকল্পনা ও জনদাবী উপেক্ষা করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পোল্ডার নং ১, ২, ৬-৮ ও ৬-৮ (এক্সটেনশন) প্রকল্প থেকে টিআরএম এবং নদী পুনঃ সংযোগ কার্যক্রম বাদ দিয়ে ৪ বছর মেয়াদী ৪৭৫ কোটি ২৬ লক্ষ ১৪ হাজার টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শেষের পথে কিন্তু প্রকল্প কার্যক্রমের ফলে এলাকার জলাবদ্ধ অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি বরং গত বর্ষা মৌসুমেও এলাকা ওয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পতিত হয়। চলমান প্রকল্পের মধ্যে যেসব কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত আছে নিঃসন্দেহে এলাকার জন্য তা প্রয়োজন, কিন্তু ঐসব কার্যক্রম দ্বারা প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে হলে বিশেষ করে খননকৃত নদীর নাব্যতা বজায় রাখা এবং পূনঃ ভরাট রোধে জোয়ারের পানিতে আসা পলি ব্যবস্থাপনার জন্য অবশ্যই প্রকল্পের সঙ্গে টিআরএম বাস্তবায়ন এবং ইছামতি নদীর সাথে লাবণ্যবর্তী ও সাপমারা নদীর পুনঃ সংযোগ কার্যক্রম যুক্ত করতে হবে। তা নাহলে এলাকার ভোগান্তি ও দুর্ভোগ আরও দীর্ঘায়িত হবে। সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬-৮ ও ৬-৮ (এক্সটেনশন) প্রকল্পের মধ্যে বেতনা ও মরিচ্চাপ অববাহিকার জন্য টিআরএম অন্তর্ভুক্ত ও বাস্তবায়ন করা। ইছামতি নদীর সাথে লাবণ্যবতী ও সাপমারা নদীর অবাধ পুনঃ সংযোগ প্রদান করা। সকল ধরণের কর্মকান্ডে জনগণকে যুক্ত করা এবং সকল সরকারি-বেসরকারী সংস্থা সমূহের সমন্বয় নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।