
তালা অফিস থেকে নজরুল ইসলামঃ তালার শিবপুর গ্রামের শিশু আয়ান খান রুহাব দেশের প্রথম ‘কার্বন-নিউট্রাল শিশু’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। মাত্র ৮ মাস বয়সে এই স্বীকৃতি পাওয়া রুহাবের পরিবার এবং স্থানীয় সমাজকে উদ্দীপ্ত করেছে।
রুহাবের বাবা ইমরান রাব্বি, পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীনম্যান-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং মা আয়শা আক্তার কিরণ, সংগঠনের সমন্বয়ক। দম্পতির লক্ষ্যÑশিশুর জন্মের প্রথম মুহূর্ত থেকেই পৃথিবীর প্রতি দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা। রহুাবের দাদা অবঃপ্রাপ্ত সেনা কর্পোরাল রফিকুল ইসলাম খাঁন। তিনিও কৃষি উদ্ভবনের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত হিসাবে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
রুহাবের জন্ম ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে। জন্মের পরই তার জীবনব্যাপী কার্বন নিঃসরণ পূরণে বাবা-মা একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন। এই উদ্যোগে সাতক্ষীরার শিবপুর গ্রামে ৫৮০টি ফলজ ও বনজ গাছ রোপণ করা হয়। রোপিত গাছের মধ্যে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, আমড়া, সুপারি ও নিম।
এই উদ্যোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। সংস্থার গ্রান্টজয়ী প্রকল্প ‘ঢাকা প্ল্যান্টারস’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে রুহাবকে বাংলাদেশের প্রথম কার্বন-নিউট্রাল শিশু হিসেবে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
বিশ্বের প্রেক্ষাপটেও রুহাবের উদাহরণ অনন্য। বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিউট্রাল শিশু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন আদাবি, ভারতের তামিলনাড়ুর কৃষ্ণগিরি জেলার বাসিন্দা। তার বাবা-মা দীনেশ ও জানাগা, পরিবেশ সচেতন সংগঠন ‘সিরাখু’ প্রতিষ্ঠাতা। তারা আদাবির জন্মের পূর্বেই তার জীবনের মোট কার্বন নিঃসরণ শূন্য করতে ৬,০০০টি ফলজ গাছ রোপণ করেন। আদাবি এই উদ্যোগের জন্য এশিয়া বুক অব রেকর্ডস কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছেন।
রুহাবের বাবা ইমরান রাব্বি বলেন,“আমরা রুহাবের জন্য গাছ লাগিয়েছি, যেন সে বিশুদ্ধ বাতাস ও সবুজ পরিবেশে বড় হতে পারে। এটি তার ভবিষ্যৎ ও পৃথিবীর জন্য আমাদের ছোট্ট একটি উদ্যোগ মাত্র। আমরা চাই সে সুন্দর মনের মানুষ হয়ে বড় হোক।”
মা আয়শা আক্তার কিরণ বলেন,“আমাদের এই উদ্যোগ শুধু রুহাবের জন্য নয়, বরং সকল শিশুর জন্য। পরিবার ও সমাজ যদি তাদের নবজাতকের জন্য কিছু গাছ লাগায়, তা তাদের ভবিষ্যৎকে আরও নিরাপদ ও সুন্দর করবে। এটি শিশুদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই পরিবেশ সচেতনতা তৈরি করবে।”
পরিবেশ সচেতনতার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে প্রশংসিত হওয়া ছাড়াও বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু অভিযোজন প্রচেষ্টায় এক নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন উদ্যোগ শিশুর জন্ম থেকে পরিবেশের প্রতি দায়িত্ববোধ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
রুহাবের পরিবারও আশা প্রকাশ করেছেন, এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য পরিবারকে অনুপ্রাণিত করবে, যাতে নবজাতকের জন্য গাছ রোপণকে সামাজিক ও পরিবেশবান্ধব আন্দোলনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।