ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে আজ রবিবার থেকে জোনভিত্তিক লকডাউন শুরু হচ্ছে। একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতেও। লকডাউন পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এতে সরকারের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসনের কে কোন দায়িত্ব পালন করবেন, তা পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার করোনা সম্পর্কিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে উল্লিখিত চার শহরে প্রাথমিকভাবে আংশিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ঢাকার ওয়ারী ও রাজাবাজার এলাকাকে প্রাথমিকভাবে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বেশি সংক্রমণের এলাকায়ও লকডাউনে যাওয়া হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক জনসংখ্যা অনুযায়ী যেখানে এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩০ জন করোনা শনাক্ত রোগী থাকবে সেটিকেই রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। ওয়ারী এলাকার পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল বিকেলে জানান, তাঁরা মৌখিকভাবে রেড জোন সম্পর্কিত নির্দেশনা পেয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান গতকাল রাতে বলেন, ‘রবিবার (আজ) থেকে পরীক্ষামূলক কয়েকটি এলাকায় লকডাউন শুরু হচ্ছে। এর মাধ্যমে জোনভিত্তিক লকডাউন কতটা কার্যকর করা যায় এবং ফল কেমন আসে তা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, রেড জোনে দিনের বেলা কোনো পরিবহন চলতে পারবে না। তবে রাতের বেলা মালবাহী পরিবহন চলতে পারবে। শপিং মল বন্ধ থাকবে। হোম ডেলিভারিতে যাতে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পায় সে ব্যবস্থা করা হবে। ইয়েলো জোনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলতে পারবে। রিকশায় চলতে হবে একজন করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা রাখা যাবে। রেস্তোরাঁ খোলা থাকলেও সেখানে ভিড় না জমিয়ে খাবার কিনে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে। গ্রিন জোনে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে।
জোনভিত্তিক লকডাউন সফল করতে জনসম্পৃক্ততার বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। সরকারের গত প্রায় আড়াই মাসের অভিজ্ঞতার আলোকে বোঝা যাচ্ছে, মানুষকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। লকডাউনে যাওয়া এলাকার মানুষের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হবে, যাতে কড়াকড়ির কারণে মানুষ বিরক্ত বোধ না করে। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া মসজিদের মাইক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের বুলেটিন প্রচারের সময়েও সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে হবে। এর বাইরে স্থানীয় সমিতি ও ক্লাবগুলোর মাধ্যমেও উদ্যোগ নেওয়া হবে। মানুষকে সচেতন করতে এটুআই ও আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ‘পুশ অ্যালার্ম’ চালু করা যায় কি না, সেই চিন্তা করা হচ্ছে। যদি কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী কভিড-১৯ প্রবণ এলাকায় ঢোকেন, সে ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মোবাইল ফোনে একটি অ্যালার্ম বেজে উঠবে। তখন তিনি বুঝতে পারবেন এই এলাকায় চলাচল তাঁর জন্য নিরাপদ নয়। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মোবাইল ফোনে নির্ধারিত অ্যাপ ইনস্টল থাকতে হবে।
রেড জোনে বস্তি এলাকা থাকলে সেখানে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে তা নিশ্চিত করবে। লকডাউন এলাকার পরিস্থিতি পাঁচ দিন পর পর পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন স্থানীয় প্রশাসনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। আর কেন্দ্রীয়ভাবে তো আলাদা থাকবেই। রেড জোনে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে ভৌগোলিক বাস্তবতা অনুসরণ করে সড়ক, গলি, গলিমুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই কাজে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের যুক্ত করার জন্য বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এভাবে সামগ্রিক উদ্যোগ না থাকলে লকডাউনের উদ্যোগ ব্যর্থ হতে পারে বলেও উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনগুলোতে মেয়ররা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।
রেড ও ইয়েলো জোনের রোগীদের জন্য আলাদা ডক্টর পুল গঠন করা হচ্ছে, যাতে এসব এলাকার বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা টেলিফোনে ডাক্তারদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধায় পরামর্শ পেতে পারে। লকডাউন এলাকায় কেউ মারা গেলে লাশ সৎকারের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করা হবে। আর রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে লকডাউন এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স প্রবেশ করতে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে।
লকডাউন করা এলাকায় কৃষিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানা থাকলে অর্ধেক জনবল নিয়ে পরিচালনা করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সিটি করপোরেশনগুলোতে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এর নেতৃত্বে থাকবেন মেয়ররা, সদস্যসচিব থাকবেন করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। সংসদ সদস্যরা থাকবেন উপদেষ্টা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসনসহ অন্যদের কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হবে। আর স্থানীয় কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে গঠিত হবে স্পট ব্যবস্থাপনা কমিটি। সূত্র: কালেরকন্ঠ