
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। গাইনি, নাক কান গলা, শিশু , প্যাথলজি, রেডিও লোজিষ্ট ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। বিশেষ করে চক্ষু ও এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার না থাকায় জটিল রোগ নিয়ে অপরেশন করতে আসা মুমুর্ষরোগীরা হাসপাতাল থেকে ফিরে যাচ্ছে। উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা এই তালা উপজেলার সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এখানে প্রথম শ্রেণির ২৩টি পদের মধ্যে ১৩টি ডাক্তারের শুন্য পদ নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি এ হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে ৩০ শয্যার লোকবল নিয়ে। এখানে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট রেডিওগ্রাফি এবং রেডিও টেকনোলজিস্ট ডেল্টাল না থাকায় বিপাকে পড়েছে ভূক্তভোগীরা। সিটিষ্কান ম্যাশিন নাই। ডাক্তার ও টেকনোলজিষ্ট না থাকায় প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে এসে ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী ফিরে যাচ্ছে বাড়ীতে। এমএলএস এর দু’টি পদ ও একটি স্টোর কিপারের পদও শুন্য পড়ে আছে। লোকবলের অভাবে অতিরিক্ত আউটসোসিং এর লোকবল দিয়ে কোন ভাবে চলছে কার্যক্রম। প্রতিদিন শত শত মানুষ করোনার উপসর্গ নিয়ে র্যাপিড এন্টিজেন্ট টেষ্ট পরিক্ষা করাতে হাসপাতালে এসে হিমশিম খাচ্ছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে অপেক্ষা করে তার পর নমুনা দিতে হচ্ছে তাদের।
এছাড়া জটিল রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে পদে পদে। ফলে সরকারি এ হাসপাতালে কোন না কোন ভাবে দিনের পর দিন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার ৪ লাখ মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে ২টি এক্সে ম্যাশিনের একটি অচল। অন্যটি সচল থাকলেও চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। ৪টি প্যাথলজি পদের বিপরীতে লোক আছে মাত্র একজন। যার কারনে বাধ্য হয় রোগীরা বাইরের ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করাতে তাদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। সার্জারী বিশেজ্ঞ বা এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার না থাকায় অপারেশন থিয়েটারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। সিজারসহ কোনো সাধারণ আপারেশনও হয় না এখানে। পাঁচ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর স্থানে রয়েছে মাত্র একজন। ফলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে হাসপাতালটি নোংরা ও আবর্জনার স্তুপে পরিনত হয়েছে। এই হাসপাতালে নার্সের ও একটি পদ খালি আছে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.আ.ফ.ম রুহুল হক হাসপাতালে একটি অত্যাধুনিক জেনারেটর মেশিন দিলেও তার কোনো কার্যকারিতা নেই। অথচ প্রতিমাসে এর পরিচালনা ব্যয় ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যায় সরকারী কোষাগারে দেখিয়ে বিল তোলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় জরুরী বিভাগে অধিকাংশ সময় ডাক্তার পাওয়া দুঃস্কার হয়ে পড়ে। প্যারামেডিকেল ৫টি ডাক্তারের পদও শুন্য পড়ে আছে। একজন দন্ত চিকিৎসক থাকলেও চিকিৎসার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় শুধু দাঁত উঠানো ছাড়া অন্য কোন দাঁতের চিকিৎসা করা হয় না। চিকিৎসাধী রোগীদের অভিযোগ হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ঔষধ দেয়া হয় না। বস কিছুই বাইরে থেকে কিনতে হয় তাদের। হাসপাতালের টয়লেটে ও ব্যাথরুম গুলো নোংড়া ও দূর্গন্ধ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড গুলো নোংড়া হয়ে আছে। হাসপাতালে যে খাদ্য খাবার সরবরাহ করা হয় তাও অত্যান্ত নিন্ম মানের হওয়ায় খাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগীদের।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাজিব সরদার জানান, পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় তিনি বিপাকে পড়েছেন। এই মূহুর্তে শুন্য পদে ডাক্তার ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রয়োজন। চিকিৎসক সংকট দূর হলে মানুষ কাক্ষিত সেবা পাবে। সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অবিহিত করা হয়েছে।