
নিজস্ব প্রতিবেদক: শ্যামনগর উপজেলার গাবুরাই ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মাসুদুল আলমের নির্দেশে ও তার সরাসরি সম্পৃক্ততায় খোলপেটুয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সরকারি খাস জায়গা দখল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের দাবী এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ থেকে মাত্র কয়েক ফুট সামনে নদী থেকে বড় কার্গো ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে এভাবে বালু উত্তোলন করলে চলতি বর্ষা মৌসুমে আবারও গাবুরা ইউনিয়ন বন্যার কবলে পড়ে প্লাবিত হতে পারে। স্থানীয়রা বলেন, বিএনপি নেতা উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলমের প্রত্যক্ষ মদদে ও তার সরাসরি সম্পৃক্ততায় নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে রাস্তা ও নদীর পাশে সরকারি খাস জায়গা ভরাট করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তবে বালু উত্তোলন করা কার্গোর মালিক জাকারিয়ার বলেন চেয়ারম্যান মাদুদুল আলমের চাপে পড়েই নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। সে আরও জানান প্রায় এক সপ্তাহ আগে চাঁদনিমুখা মাদ্রাসা ভরাটের নাম করে আমাকে ডেকে নিয়ে এসেছে এখন দেখছি সরকারি জায়গা ভরাট করাচ্ছে । চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে এখানে আটকে রেখে বেশ কয়েক কারগো প্রায় ৩০ হাজার ফুট বালি তুলে নিয়ে আমাকে টাকা পরিশোধ না করে এখন তালবাহানা করছে যে কারণে আমি এখান থেকে যেতে পারছি না বলে কারগোর মালিকের অভিযোগ।আপনারা চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা বলেন তার নির্দেশনায় এখান থেকে বালু উত্তোলন করে ভরাট করা হচ্ছে আর আমার মেশিনের ইঞ্জিন খারাপ হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ৩ জুলাই সকালে সরেজমিনে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চাদনিমুখা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের মধ্যে বাজার সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর ওয়াপদার রাস্তার গায়ে সরকারি খাস জায়গায় নদী থেকে একটি কারগো ড্রেজার মেশিন দিয়ে ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০’ এর তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে খাস জায়গা ভরাট করে চেয়ারম্যান নিজেই দখলের চেষ্টা করছে।
‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০’ এর ৪ এর ‘খ’ ধারায় সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, অথবা আবাসিক এলাকা হতে সর্বনিম্ন ১ (এক) কিলোমিটার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সীমানার মধ্যে থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও পাশ্ববর্তী সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরায় খোলপেটুয়া নদীর যে অংশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সেখানে নদীর বেঁড়িবাঁধের তীর ঘেষে শত শত পরিবারের বসবাস । একটি স্কুল মাদ্রাসা মসজিদের মতো ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও আছে।
আইনটির ৪-এর ‘গ’ ধারায়, বালু বা মাটি উত্তোলন বা বিপণনের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোন নদীর তীর ভাঙনের শিকার হতে পারে এরূপ ক্ষেত্রেও বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। অথচ এসবের তোয়াক্কা না করেই একই আইনের ৫নং ধারার ভূ-গর্ভস্থ বা নদীর তলদেশ হতে বালু বা মাটি উত্তোলন সংক্রান্ত বিশেষ বিধানও অমান্য করে অত্র এলাকার চেয়ারম্যান নিজেই বালু উত্তোলন করে সরকারি জায়গা দখল করছেন।
গাবুরা চাঁদনিমুখা গ্রামে নাম প্রকাশ না করতে চাওয়া একাধিক ব্যাক্তি জানান এভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করার ফলে আমদের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর বালি কাটছে অবৈধভাবে আবার সরকারি জায়গাও ভরাট করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে সে এর আগে এভাবেই বহু নদীর চর ভরাট করে জায়গা দখল করে নিজের কবজায় নিয়েছে এই চেয়ারম্যান সাহেবের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন সহ আমরা এলাকাবাসী এর সুষ্ঠ প্রতিকার চাই।
এ বিষয়ে গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, নদী থেকে বেশ কিছু বালু উঠানো হয়েছে সরকারি জায়গায় বালি ফেলার কারনে সহকারী কমিশনার (ভূমি )শ্যামনগর স্যার আমাকে ফোন দিয়ে বালু ফেলতে নিষেধ করেছেন এবং ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নায়েব সাহেবের পাঠানোর পর বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, এই বালু উঠিয়ে সেখানে একটি মৎস্য সেট করতে চাচ্ছিলাম, সে জন্যই নদী থেকে বালু উঠিয়ে ভরাট করেছি।
এ বিষয়ে গাবুরা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি শোনা মাত্রই সেখানে গিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ সহ আমাদের সরকারি খাস জায়গায় বালু ফেলা বন্ধ করে দিয়েছি পরবর্তীতে আমি চলে আসার পরে রাত্রে নাকি শুনলাম সেখানে আবার বালু ফেলেছে এটা যেই করুক না কেনো ঠিক করেনি।
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভাংঙন কবলিত এলাকা চেয়ারম্যান কতৃক নদী থেকে বালু উত্তোলন ও সরকারি জায়গা দখলের প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা( ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন করা তো সম্পুর্ণ বেআইনি আর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সরকারি জায়গায় ভরাট করলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর আমি এ ব্যাপারটা জানতাম না নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ফেলার সময় সেখান থেকে কিছু মানুষ ও সাংবাদিক আমাকে ফোনে জানানো মাত্রই আমি চেয়ারম্যান সাহেবকে নদী থেকে বালু উত্তোলন না করতে ও সরকারি জায়গায় বালু ফেলতে নিষেধ করেছি এবং সাথে সাথেই আমাদের গাবুরা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়ে সরকারি জায়গায় বালু ফেলা বন্ধ করে দিয়েছি পরে কি হয়েছে আমি জানিনা যদি সরকারি জায়গা দখলের কেউ চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যাবস্থা নিব।