নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাতক্ষীরায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দের কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের ৪০ টন সরকারি গম আত্মসাৎ করে পাচারের ঘটনায় মামলা করেছে দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়। দুদুক খুলনা কার্যালয়ের উপ-সহকারি পরিচালক নীলকমল পাল বাদী হয়ে ছয় জনকে আসামী করে শনিবার মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
মামলার আসামীরা হলেন, কালিগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিরাজ হোসেন খান, উপজেলার তারালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য শহিদুল ইসলাম, চম্পাফুল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল গণি, সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা গ্রামের বায়ের সরদারের ছেলে ট্রাক চালক লিয়াকত সরদার, কালিগঞ্জের নলতা শরিফ এলাকার মৃত. কামরুল হুদার ছেলে ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক, চোরাই গম ক্রেতা পাটকেলঘাটা থানা সদরের আনন্দ মোহন সাধুর ছেলে ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাধু।
আরও পড়ুন
দুদুক খুলনা কার্যালয়ের উপ-সহকারি পরিচালক নীলকমল পাল জানান, সরকারি প্রকল্পের গম যোগাসাজোশ করে আতœসাতের উদ্দশ্যে পাচারের ঘটনায় দুর্ণীতি দমন আইনে শুক্রবার রাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ১৪। তারিখ ২৭.০৬.২০ ইং। মামলায় প্রাথমিকভাবে প্রকল্প কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসহ ছয়জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলার তদন্তকালে যাদের নাম আসবে তাদেরও মামলায় অন্তভূক্ত করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা এলাকার অব্দুল্লাহর ছেলে ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম, একই এলাকার বাবলু মাস্টার, আরশাদ আলী, খলিলুর রহমান খলিল, নুর আব্দুল ও খালিদ হোসেনসহ আটক সিন্ডিয়কেটটি বসন্তপুর খাদ্য গুদাম থেকে গম, ধান ও চাল ক্রয়-বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ডিও ব্যবসায়ী। এই সঙ্গে জড়িত রয়েছে কালিগজ্ঞের বসন্তপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মিলন বিশ^াসও।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুরে সদরের আলীপুর চেকপোষ্ট এলাকা ও শুক্রবার বিকেলে পাটকেলঘাটা থানা সদরের পাটকেলঘাটা থানা সদরের মুকুন্দ ফ্লাওয়ার এন্ড ডাল মিল থেকে প্রায় ৪০ টন সরকারি গম পাচারকালে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশ। এর মধ্যে আলীপুর চেকপোষ্ট এলাকা থেকে ৩২৬ বস্তা (১৯ মেট্রিকটন ৫৬০ কেজি) ও পাটকেলঘাটা থানা সদরের মুকুন্দ ফ্লাওয়ার এন্ড ডাল মিল থেকে ৩২৯ বস্তা (১৯ মেট্রিকটন ৭৪০ কেজি) অবৈধ গম উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত গমের মূল্য ১২ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ টাকা। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে চারজনকে গ্রেফতার করে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। এরপর ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম, আব্দুল গণি, ট্রাক চালক লিয়াকত সরদার, ব্যবসায়ী আব্দুল খালেককে।
গত বৃহস্পতিবার (২৫) জুন কালিগঞ্জ খাদ্য গুদাম থেকে ৪৫ টন ৫০০ কেজি সরকারি গম ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কালিগঞ্জের বসন্তপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মিলন বিশ্বাস। তবে পুলিশ প্রায় ৪০ টন সরকারি গম উদ্ধার করলেও সাড়ে ৫টন গম উদ্ধার করতে পারেনি।
বসন্তপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মিলন বিশ্বাস জানান, বাকি সাড়ে ৫টন গম রতনপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আহসান হাবিব দুইটি ডিও লেটারের মাধ্যমে উত্তোলন করে ওই দিন নিয়ে গেছেন। ঘটনায় তার জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এর আগে গত ২৭ মে তারিখে একইভাবে পাচারকালে ৪৮ মেট্রিকটন গম উদ্ধার করে পুলিশ। সে ঘটনায়ও দুদকের পক্ষ থেকে ছয়জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়।