মেহেদী হাসান, খুলনা থেকে:
রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশ পরিচালনার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চার বছরও সময় পাননি। অথচ এই স্বল্প সময়ে অনেক বড় কাজ সম্পাদন করেছেন। বলা যায়, অনেক অসাধ্য সাধন করেছেন। দূরদর্শী এই নেতার বহুমুখী কার্যক্রম থেকে বাদ যায়নি বৃক্ষরোপণের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও। বঙ্গবন্ধুর তেমনি একটি স্বপ্ন-বৃক্ষকে ছুঁয়ে দেখতে গিয়েছিলাম খুলনায়।
শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ। ক্যাম্পাসে রয়েছে বেশ কিছু নারকেলগাছ। এর একটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি। ১৯৭২ সালে ৩ জুলাই খুলনা সফরে এসে গাছটি লাগিয়েছিলেন তিনি। মহানগরীর বয়রাস্থ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক পার হলেই দেখা যায় বেশ কিছু নারকেলগাছ। এর একটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি। ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই খুলনা সফরে এলে গাছটি লাগিয়েছিলেন তিনি। ৫১ বছরে গাছটি অনেক বড় হয়েছে। ফলও ধরেছে। গাছটির চারপাশ ঘিরে রাখা হয়েছে কালো পাথরের বেদি দিয়ে। পাশে কলেজ কর্তৃপক্ষ নারকেল গাছটিকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। এছাড়া নারকেল গাছটি ঘিরে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু পার্ক’ তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে। পাশপাশি বঙ্গবন্ধুর এই স্মৃতিকে দেখতে প্রতিনিয়ত খুলনার বয়রাস্থ সরকারি মহিলা কলেজে আসেন দর্শনার্থীরা। নারকেল গাছটি সবাইকে আকর্ষণ করে।
খুলনার সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীরা জানান, এই কলেজের একটা গর্বের জায়গা “বঙ্গবন্ধু চত্বর”। এখানে সুউচ্চ একটা নারিকেল গাছ মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এই গাছটা জিনি রোপন করেছেন তিনি আমাদের জাতির নায়ক আমাদের স্বাধীনতার নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে না দেখতে পেরেও তার লাগানো গাছ দেখে কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা গর্বিত। বঙ্গবন্ধুর কিছুটা হলে আমরা ছোয়া পেয়েছি। নারকেল গাছটি সবাইকে আকর্ষণ করে। যে কোন দিবসসহ দর্শনার্থীরা নারকেল গাছটি দেখতে এখানে আসেন।
২০১০ সালে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দা লুৎফুন নাহার উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে জানতে পারেন, ক্যাম্পাসে একটি নারকেল গাছ বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে লাগিয়েছিলেন। কলেজের ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিভিন্ন নথিপত্র ঘেঁটে পেয়ে যান কিছু সাদা-কালো ছবিও। এসব ছবিতেই কলেজ ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর নারকেল গাছ লাগানোর চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরে কলেজের পুরোনো কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে নারকেল গাছটি শনাক্ত করা হয়। ছবিগুলোতে তৎকালীন অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমানও রয়েছেন।
বর্তমান কলেজ চত্ত্বরে প্রবেশের দ্বারপ্রান্তেই দেখা মিলবে নারকেল গাছটি। গাছটির চারপাশে টাইলস এবং এসএস পাইপের সুদর্শন চত্ত্বর। তার পাশেই রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। যা ২০১১ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক উদ্বোধন করেন। চারা রোপনের পর থেকে তেমন পরিচর্যা না হলেও ২০০৮ সাল থেকে গাছটিকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে কাজ শুরু করে কলেজ কতৃপক্ষ। বর্তমানে গাছটির পরিচর্যায় রয়েছে হর্টিকালচার সেন্টার। পাশে ফুলের বাগান। সেখানে রং-বেরঙের ফুল ফুটেছে। গাছটি থেকে চারাও তৈরি করা হয়েছে। যা ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে খুলনা সরকারি মহিলা কলেজে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে রোপিত নারকেল গাছের চারা বিতরণ ও বৃক্ষরোপণ করাসহ খুলনার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হয়।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডঃ মোঃ শামসুজ্জামান বলেন, এ গাছ আমরা যতœ করে রেখে জাতির পিতাকে সম্মান প্রদর্শন করছি। এই গাছের নারকেল আমরা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করি এবং যারা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেই। যাতে জাতির পিতার হাতের লাগানো নারিকেল গাছ সারা বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে যায়।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক টি এম জাকির হোসেন বলেন, গাছটি বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লাগানো। সে দৃশ্য একটি সাদা-কালো ছবিতে সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে। যে ছবিতেই ফুটে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর নারকেলগাছ লাগানোর চিত্র। পঁচাত্তর-পরবতী সময়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখা হয়নি। অযত্ম আর অবহেলায় ছবিগুলো অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। ছবিগুলো পাওয়ার পর তা বাঁধাই করে রাখা হয়েছে। ছবিগুলোতে তৎকালীন অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানও রয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারিকেল গাছটি নিজ হাতে লাগিয়েছিলেন। আমি এই কলেজে যোগদানের পর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে আরও ছড়িয়ে দিতে গাছের নারকেল দিয়ে চারা তৈরি করার ব্যবস্থা করি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুলনা সফর নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক কাজী মোতাহার রহমান বাবু একটি বই প্রকাশ করেছেন। সেখান থেকে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু খুলনায় মোট ২৭ বার সফর করেছেন। ১৯৭২ সালে খুলনা সরকারি মহিলা কলেজে তিনি একটি নারকেলগাছ লাগিয়েছিলেন। সেই নারকেল গাছ আজও স্মৃতি হিসেবে বেঁচে আছে।