
হাফিজুর রহমান, কালীগঞ্জ থেকে: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউ.পি সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ স্বেচ্ছাচারিতা দূর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ করে ফেঁসে গেছেন সাবেক ইউ.পি সদস্য আব্দুল হাকিম নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। অভিযোগের তদন্তে মিথ্যা ভুল তথ্য উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার তদন্তেও দুর্নীতির প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদি শর্ষ্যরে ভিতর ভূত থাকে তবে ভুত ঝাড়াবেঁ কে। বিষয়টি নিয়ে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন টি এখন টক অফ দা টাউন এ পরিণত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নে সাবেক ইউপি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তার দায়ের করা দূর্নীতির অভিযোগের সরেজমিনে তদন্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তিনি অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম এর দ্বারা প্রভাবিত অধিকাংশ প্রকল্পের মনগড়া মিথ্যা প্রতিবেদন এর বিরুদ্ধে এ সমস্ত অভিযোগ হয়েছে বলে ভুক্তভোগী ইউপি সদস্যরা জানান। অত্র ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মনো এবং ইউপি সদস্য কলিম গাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলামের তদন্ত প্রতিবেদনে দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে গত ১৩ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট তদন্ত প্রত্যাহার এবং প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মনু। তার অভিযোগে বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম আমার বিরুদ্ধে এলজিএসপি প্রকল্পের উজয়মারি জয়দেবের বাড়ির মুখ হতে উজয়মারী প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার বাবদ ৭৯ হাজার ৮ শত টাকা কাজ না করে প্রকল্প সভাপতি হিসেবে আমি আত্মসাৎ করেছি। অথচ প্রকৃতপক্ষে উক্ত প্রকল্প সম্বন্ধে আমি কিছু জানিনা আমিও উক্ত প্রকল্পের সভাপতি না। অভিযুক্ত প্রকল্পটির সভাপতি সংরক্ষিত ৩ নাম্বার মহিলা সদস্য প্রভাতী মন্ডল অথচ বীর মুক্তিযোদ্ধা হাকিমের অভিযোগের ভিত্তিতে কোন তদন্ত ছাড়াই আমাকে প্রতিবেদনে দূর্নীতিগ্রস্ত বলে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। অনুরূপ ইউপি সদস্য কলিম গাজী জানান এলজিএসপি-৩ কমল ঘোষ এর বাড়ির অভিমুখ হতে ইটের সলিং রাস্তা নির্মাণ বাবদ ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এছাড়াও দেয়া পিচের মুখ হইতে বজলু সরদারের বাড়ির অভিমুখ পর্যন্ত নতুন ইট সোলিং রাস্তা নির্মাণ বাবদ আরো ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উক্ত দু’টি প্রকল্প আমাকে সভাপতি হিসেবে দেখাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইন স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কাজ না করে টাকা উঠাইয়া আত্মসাৎ করেছে, অথচ দুইটি প্রকল্পে আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম কাগজপত্র পর্যালোচনা ছাড়াই জেলা প্রশাসকের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। আমার নিজের নামে বজলু সরদারের বাড়ি হতে কমলের বাড়ি পর্যন্ত নতুন ইটের সলিং বাবদ ৪১ হাজার টাকা প্রকল্পের কাজ হলেও সেটিও তিনি হয়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম। গত ৫ অক্টোবর ৭৬৬ নম্বর স্মারকে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের তদন্ত শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রকৃতপক্ষে যারা প্রকল্পের সভাপতি তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবেদন বা পদক্ষেপ না নিয়ে নামসর্বস্ব প্রতিবেদনে উপজেলা জুড়ে নানান আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধার দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে বিষয়টি নিয়ে যেন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি না হয় এবং তার দূর্নীতি প্রকাশ না পায় সে বিষয়ে সাংবাদিকদের নিকট ধরনা দিয়ে চলছে। প্রসঙ্গত উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের দেয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম বাদী হয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছর অন্যান্য বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ৯ নং মথুরেশপুর ইউনিয়নের অনুকূলে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ এর প্রসঙ্গে সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিকার সেই অভিযোগ করেন। উক্ত অভিযোগে সুনির্দিষ্ট ১২টি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, মাননীয় সংসদ সদস্য সাতক্ষীরা-৪, সচিব স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার খুলনা, পুলিশ সুপার মহোদয় সাতক্ষীরা, সচিব দূর্নীতি দমন কমিশন, উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার ডিডিএলজি, সাতক্ষীরা ডি.আর.আর, জেলা সাতক্ষীরা, ডিজি এনএসআই, উপজেলা চেয়ারম্যান, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা, কালিগঞ্জ এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ দায়ের করে কালিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য তুলে ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিপক্ষদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ভালো করে প্রচার করেন। গত ৪ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদন্তের সময় তিনি তার সঙ্গে বেশকিছু মিডিয়া কর্মী নিয়ে তদন্ত কাজে ব্যাঘাত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় তাদেরকে ঘটনাস্থল হতে বাহির করে দেয়। তারপরও বিষয়টি ফলাও করে প্রচারের জন্য ঐদিন দুপুরে ভুরিভোজ করে খাওয়ান ঐ সমস্ত মিডিয়াকর্মীদের। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ঐক্যজোট ক্ষমতায় আসলে তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী আলাউদ্দিন এর এপিএস হিসেবে কাজ করে নানান আলোচনা-সমালোচনায় বিতর্কে জড়িয়ে যান। ২০০৮ সালে আওমীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ভোল পাল্টে নব্য আওয়ামী লীগার সেজে কাজ করলেও তিনি থানা বা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কোন পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেনি। এবার তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের ঘায়েল করতে এই সমস্ত অভিযোগ করে বেড়াচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এ ব্যাপারে মথুরেশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখলেছুর রহমান মুকুল এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আব্দুল হাকিম আমার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কোন পদ-পদবী নাই। ঘটনার সত্যতা জানার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন অভিযোগের কিছু ত্রæটি বিচ্যুতি হয়েছে বিষয়টি লেখালেখি করার দরকার নাই। আমি ম্যানেজ করে নিচ্ছি ভুল হয়ে গেছে। তবে তিনি আওয়ামী লীগ করেন কিনা সে প্রশ্নের জবাবে বলেন আমি মথুরেশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন সম্মানিত সদস। এ ব্যাপারে মথুরেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কথামতো আমার বিরুদ্ধে ঢালাও মিথ্যা অভিযোগ এনে তদন্তে প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের কথামতো মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমার বিরুদ্ধে নানান কুৎসা রটিয়ে হেয় করা ছাড়া কিছু না। প্রকল্পের স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। ঘটনার আরো সত্যতা জানার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন তদন্তে কিছু ভুল-ত্রæটি হয়েছে সেগুলো সংশোধন করে পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদন বদলে দেওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।