
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মাদকের অভয়ারণ্যে হিসাবে গড়ে উঠেছে একটি গ্রাম বন্দকাটি। যেখানে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রির জন্য বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী মিলে গড়ে তুলেছে মাদকের বড় আস্তানা। যেখনাে ইয়াবা- গাজা সকল নেশা দ্রব্য প্রকাশ্যে ২৪ ঘন্টা বিক্রি করা হয় । এই নেশায় জড়িয়ে পড়ছে উঠতি বয়সী কিশোর তরুণরা। বন্দকাটি সহ আশেপাশে গ্রামগুলোতে নবম – দশম শ্রেণীর ছাত্ররা মাদকসেবন শুরু করেছে। হাতের নাগালে মাদক সরবারহ থাকায় খুব সহজে মাদক ক্রয় করতে পারে এসব সেবনকারীরা। পারিবারিক ভাবে অভিভাবকরা মাদকের ভয়াবহ কবল থেকে রক্ষা করতে পারছে না তাদের সন্তানদের । বন্দকাটি গ্রামে মাদকের মূল আস্তানা গড়ে উঠেছে কালিগঞ্জে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মজিদ গাজীর পুত্র ওবায়দুল্লাহ গাজীর বাড়িতে। ওবায়দুল্লাহ গাজীর নেতৃত্বে সিন্ডিকেট সদস্যরা সরাসরি কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে এসে নিজ বাড়িতে মজুদ করে পরে সেই ইয়াবা ৪/৫ জন খুচরা মাদক ব্যবসায়ী দিয়ে উপজেলা জুড়ে বিক্রি করে। ওবায়দুল্লাহ গাজী কালিগঞ্জের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে চিহ্নিত প্রশাসনের কাছে । তার নামে ইয়াবা- গাজাসহ ১২-১৫ টি মাদকের মামলা চলমান রয়েছে। সম্প্রতি সেনাবাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিপুল পরিমাণ মাদকসহ আটক করে তাকে জেল হাজতে পাঠায়। কিন্তু কয়েকদিন পরে সে জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। সে জেলে থাকলেও তার মাদক ব্যবসা বন্ধ হয় না চলমান থাকে । ওবায়দুল্লাহ গাজীর মাদক ব্যবসা পরিচলানা হয় ফিল্ম স্টাইলে। মাদক সেবনকারীরা তার বাড়ি থেকে প্রকাশ্য মাদক ক্রয় করে নিয়ে যায়। তার মাদকের রুট নিয়ন্ত্রণ করে ডান হাত একই গ্রামের মোনতেজের পুত্র এনামুল। এনামুল প্রকাশ্য থলিতে ইয়াবা ও গাজা নিয়ে খুচরা বিক্রি করে সেবনকারীদের কাছে। যার কারণে অল্প বয়সী তরুণরা ইয়াবা গাঁজা সেবন করছে। অল্প বয়সী কিশোর তরুণরা গড়ে তুলেছে সক্রিয় কিশোর গাং যারা মাদকের টাকা যোগাড় করতে ছিনতাই ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ছে। মাদক সেবনকারী কিশোর গাং জন্য আশে পাশে কয়েকটি এলাকায় জনসাধারণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বন্দকাটি সহ আশেপাশে এলাকায় রাত হলে ঘটে নিত্য নতুন ভয়ংকর ঘটনা। প্রতিদিন রাতে বিভিন্ন গ্রামে চেতনানাশক স্প্রে করে মাদক সেবনকারী কিশোর গাং সদস্যরা সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। গত কয়েক মাসে কালিগঞ্জে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে ২০ টির বেশি চেতনাশক স্প্রে ব্যবহার করে সর্বস্ব লুট করার ঘটনা ঘটেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের ভয়ে কাবু হয়ে গেছে গ্রামবাসী। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে একই গ্রামের বাক্কার মিস্ত্রীর বাড়িতে। মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করার জেরে তার মৎস্য ঘেরে চুরি করা হয় তার বাড়ির ছাদে শতাধিক ফলনশীল ড্রাগন গাছ কেটে ধংস করা হয়। মাদকব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে আতংকিত এলাকাবাসী। গত কয়েকদিন আগে ওবায়দুল্লাহ জামিনে বের হয়েও সে আইন তোয়াক্কা না করে রমরমা প্রকাশ্য ইয়াবা গাজা ব্যবসা করে চালিয়ে যাচ্ছে । রবিবার বিকালে বন্দকাটি বাগেরহাট মাঠে তার দুই সহযোগী মোস্তাকিম ও মিঠুন ইয়াবা বিক্রির সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে।পরে উৎসুক জনতা গণধোলাই দিয়ে কালিগঞ্জ থানা পুলিশে হস্তান্তর করে।
মাদকসেবনকারীদ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী মাহবুবুর রহমান জানান, গত কয়েকমাস আগে আমার বাড়ি থেকে মাদকসেবনকারী কিশোর গাং সদস্যরা কয়েকটি মোবাইল ফোন, আইপিএস ব্যাটারী মটর চুরি করে নিয়ে গেছে। এলাকায় আতংকের সাথে বসবাস করা লাগে রাত হলে ঘুম আসে না কখন ডাকাতি হয়। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
মাদকে আসক্তধারীর একজন অভিভাবক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, আমার সন্তান প্রথমে সিগারেট খেত। শুরুতে মারধর করতাম চেষ্টা করতাম থামানোর কিন্তু পরবর্তীতে গাঁজা সেবন করে এখন ইয়াবা ছাড়া তার দিনচলে না। নেশার টাকা না দিলে মারপিট করতে আসে। সন্তান নেশাগ্রস্ত হওয়ার মূল কারণ মাদক হাতের নাগালে পাওয়া যাওয়ায়। হাত বাড়ালে মেলে মাদক যার কারণে তাদের নেশাবৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন মাদকের জন্য টাকা দিতে হয় না হলে আমাদের কে মারপিট করতে আসে মেলে ফেলার হুমকি দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন অভিভাবক বলেন, মাদকে ভয়াবহ আসক্ত আমার সন্তান। দিনভর নেশা করে নেশার টাকা জোগাড় করতে বাড়িতে স্বর্ণ চুরি করে বিক্রি করেছে, ওয়ারড্রপ ভেঙ্গে কয়েকদফায় টাকা চুরি করেছে। বকাঝকা মারধর করে লাভ হয়নি। অনেকসময় টাকা জোগাড় না করতে পেরে চুরি ছিনতাইয়ের দিকে ঝুঁকছে। এভাবে বড় ধরনের অপারাধে জড়িয়ে পড়ছে এখন তাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর গ্রেপ্তার চাই। এলাকায় মাদক নির্মূল করুক প্রশাসন জরুরি ভাবে।
সাতক্ষীরা নাগরিক নেতা অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, মাদকের কারণে যুব সমাজ ধংস হয়ে গেছে। খেলাধুলা ছেড়ে মাদক গ্রহণ করার মূল কারণ প্রকাশ্য মাদক বিক্রি মাদক সরবাবরহ থাকায়। ওবায়দুল্লাহ গাজী মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত সে ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক ফোকরে বের হয়ে যাচ্ছে। দুর্বলতা হল বিচার ব্যবস্থার। একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কিভাবে দ্রুত জামিন পায় এটা বিজ্ঞ আদালত কে দেখা উচিত। বিশেষ করে বিচারকদের জেনে বুঝে মাদক ব্যবসায়ীদের জামিন দেওয়া সময়ের উপযোগী হয়ে উঠেছে।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কালিগঞ্জে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ গাজীকে বার বার আটক করলেও আইনের ফাঁক ফোকরে বেরিয়ে যায়। আইনের জটিলতায় সে জামিনে মুক্তি লাভ করে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছি মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলে মাদক ব্যবসায়ী ওবায়দুল্লাহ গাজী কে দমন করা হবে। আমার ইউনিয়নে কোন মাদক ব্যবসা চলবে না।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জারি করেছি।আমাদের পুলিশ কাজ করছে। বিট পুলিশিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। জনগনকে সচেতন হতে হবে তাহলে ওবায়দুল্লাহ গাজীর মত মাদক কারবারি সামাজিক ভাবে চাপে থাকবে। আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধ ব্যাবস্থা নিব।