
শিক্ষা ডেস্ক: প্রায় ১০ বছর পর চলতি অর্থবছরে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। ইতিমধ্যে দুই হাজার ৬১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। তবে এখনো প্রায় সাত হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নন-এমপিও রয়ে গেছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি রয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরের মতো আগামী বাজেটেও এমপিওভুক্তি চলমান রাখাই শিক্ষকদের অন্যতম দাবি। তবে শিক্ষায় করোনার ঝুঁকি প্রশমনে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ দরকার বলে মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।
এ ছাড়া চিকিৎসা ভাতা বাড়ানো, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা প্রদান, উচ্চতর বেতন গ্রেড প্রদানসহ একগুচ্ছ দাবি রয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। তবে সামগ্রিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থাই জাতীয়করণের দাবি তুলেছেন শিক্ষকরা। পর্যায়ক্রমে হলেও আগামী বাজেটেই এসব দাবির প্রতিফলন দেখতে চান তাঁরা।
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘প্রথমত, শিক্ষায় করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় আমরা প্রয়োজনীয় বরাদ্দের দাবি জানাই। এই করোনায় নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। আগামী বাজেটে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান, অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ও ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি মুজিববর্ষেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা আসবে বলে আমরা আশা করছি।’
বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলা মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্তি আমাদের একমাত্র দাবি। চলতি অর্থবছরে প্রায় দুই হাজার ৭০০ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হলেও বরাদ্দকৃত টাকার পুরোটা ব্যয় হয়নি। অথচ শর্ত শিথিল করলে এই টাকায় চলতি অর্থবছরেই আরো কিছু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা সম্ভব হতো। আগামী বাজেটে নন-এমপিও সব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস করি।’
জানা যায়, প্রতিবছর বাজেটের আগে শিক্ষকরা তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাজপথে সরব থাকেন। এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তা দেখা যায়নি। তবে শিক্ষকরা বিভিন্ন অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঠিকই সরব আছেন। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে তাঁদের দাবিদাওয়াসংবলিত স্মারকলিপি বা চিঠি পৌঁছে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আমরা শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য নীতিনির্ধারকদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাস পাই। বাড়িভাড়া দেওয়া হয় এক হাজার টাকা ও চিকিৎসা ভাতা দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেড দেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আগামী অর্থবছর থেকেই সরকারি শিক্ষকদের মতো আমরা বেতন-ভাতা চাই।’
বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক নেকবর হোসাইন বলেন, ‘দীর্ঘ ২৮ বছরেও আমাদের জনবল কাঠামো এমপিও নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে আমরা সরকারের আর্থিক সুবিধাবঞ্চিত। অর্থাৎ এমপিওভুক্ত কলেজে চাকরি করলেও আমরা সরকার থেকে বেতন-ভাতা পাই না। আমাদের পাঁচ হাজার শিক্ষকের এমপিওভুক্তির জন্য ১৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এমপিও নীতিমালা সংশোধনের পাশাপাশি আগামী বাজেটেই আমরা প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাই।’
জানা যায়, বর্তমানে এক হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান শিক্ষকরা দুই হাজার ৫০০ টাকা ও সহকারী শিক্ষকরা দুই হাজার ৩০০ টাকা ভাতা পান। তবে বর্তমানে এই মাদরাসার সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। চলতি অর্থবছরে এসব মাদরাসা এমপিওভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদনের পর ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু মাদরাসার সংখ্যা নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ শেষ না হওয়ায় এবার এমপিওভুক্তির কাজ শেষ করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি এস এম জয়নুল আবেদীন জেহাদী বলেন, ‘সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছে। সেই হিসেবে আমরাও আমাদের মাদরাসাগুলো জাতীয়করণের দাবি জানাই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জরিপ করে বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো এমপিওভুক্তির জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে আমরা ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানাই।’
শিক্ষা খাতে করোনাভাইরাসের প্রভাব ও আগামী দিনে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য আগামী বাজেটে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ দরকার বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে আগামী দিনে ঝরে পড়া, শিশু শ্রম বেড়ে যাওয়া, বাল্যবিবাহ, অপুষ্টি ও প্রসূতি মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কিন্ডারগার্টেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নন-এমপিও শিক্ষকরা বিপদে পড়েছেন। এসব থেকে উত্তরণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকেই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। সবার আগে দরকার বাজেটে শিক্ষার জন্য বড় বিনিয়োগ করা।’ তিনি জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানান। সূত্র: কালেরকন্ঠ