মো. কামাল উদ্দিন:
প্রথম শুরুতেই সবাইকে মনে প্রাণে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ঈদ মোবারক জানাচ্ছি, ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক। মুসলমানদের পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস রমজান, আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর মাধ্যমে আজ হতে ১৪শ’ বছর আগে কোরআন মানবজাতীর জন্য অর্পন করেছিলেন। সেই কোরাআনের মাসে ফরজ নামাজের পাশাপাশি এক মাস ব্যাপী রোজা রাখার কোরাআনুল করিমে বাধ্যতা মূলক ঘোষনা করেছে। সেই পবিত্র কোরআনের মাস রমজানে আমরা যখন মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা করার পর শাওয়াল মাসের চাঁদের প্রথম তারিখে ঈদের জামাত আদায় পূর্বক ঈদের আনন্দ উদযাপন ও উপভোগ করে থাকি। সেই ঈদে আল্লাহর নবীর নির্দেশনা মোতাবেক ধনী গরিব সমাজের উচু-নিচু মানুষের বৈষম্য পরিহার করে ঈদগাহের ময়দানে কোলা কুলির মাধ্যমে মানবতার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে আসছি। বছরের পর বছর এই নিয়ম অপরিবর্তীত পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন মুসলমানদের এই আনন্দময় পবিত্র ঈদ উদ্যাপন হয়ে থাকবে। সেই ঈদ আমরা বিগত সময় স্বাভাবিক নিয়মে উদ্যাপন করে থাকলেও এবারের ঈদ উদ্যাপন একটু ব্যাতিক্রমী হবে। পুরো বিশ্ব যখন মহামারী করোনা ভাইরাসে সংক্রামণে আক্রান্ত তখন পুরো বিশ্বের মুসলমানেরা এই ঈদে আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনার মাধ্যমে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার স্থলে চোখের জ্বল দিয়ে অতিবাহিত করবে। পুরো রমজান মাসে মসজিদে গিয়ে খতম তারাবির নামাজ আদায় করা থেকে আমরা ভাগ্যাহত মুসলমানেরা বিরত থাকতে হয়েছে। করোনার কারণে শ্বাররিক দূরত্ব রেখে কিছু কিছু মসজিদে নামাজ আদায় হলেও কিন্তু মনোপ্রুতভাবে নামাজ আদায় করা যায়নি। এই করোনা ভাইরাসের আক্রমনে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ আজ তিন মাস যাবৎ ঘর বন্দি হয়ে রয়েছে। যে বিত্তবানেরা রমজান মাসে যাকাত ফিতরার মাধ্যমে গরিবদের আর্থিক সংকট কিছুটা মুছন করতে তা রমজান মাস আসার আগেই ত্রাণ সাহায্য বিতরণের মাধ্যমে তাদের নির্দিষ্ট বাজেট শেষ হয়ে যায়। যদিওবা কোরাআন হাদিসের নিয়মে সম্পদের অনুকূলে যাকাত ফিতরা পরিশোধ করার কথা থাকলেও অনেকেই আগেভাগে ত্রাণ সাহায্য দেওয়ার অজুহাতে যাকাত দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। এই মহামারী করোনা ভাইরাসে প্রতিদিন পুরো দেশে এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। বাংলাদেশের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে কোন কোন পরিবার স্বজন হারানোর ব্যাথায় ব্যতিত হচ্ছে। অসহায় অসংখ্য পরিবার অভিভাবকহীন হয়ে দারিদ্রতার সীমা নিচে আসতে বাধ্য হচ্ছে। মৃত্যুর মিছিল দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যাও কোন অংশে কমছে না। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা স্বাভাবিক অবস্থা অস্বভাবাকি পরিণত হতে পারে। যা সহ্য করার মত লোকের সংখ্যা খুবই কম। যেসব গরিব দু:খী মানুষ রমজান মাসের বিত্তবানদের কাছ থেকে যাকাতের সাহায্য নিয়ে অভাবি পরিবারের ছেলে সন্তানদেরকে ঈদের আনন্দ দেওয়ার ব্যবস্তা করত তারা আজ নিরব বোবা কান্নায়রত। এই কান্না বন্ধ হওয়ার মত নয়। এই ঈদকে সামনে রেখে সরকার শপিংমল সমূহ খুলে দেওয়ার ঘোষনা দিলেও অসংখ্য শপিংমল মালিকদের সিদ্ধান্তে বন্ধ রয়েছে। কিন্তু দু:খ ও লজ্জা হয়, যেসব শপিংমল তথা দোকান পাঠ, হাট বাজার খোলা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানে লজ্জাহীন মানুষের উপস্থিতি দেখে। একদিকে অনাহারী অর্ধকারী বেকার মধ্যবিত্ত অভাবী পরিবারের হাহাকার অন্যদিকে বিত্তবানদের অতিউৎসাহি পরিবারের ঈদ মার্কেটিং এর প্রতিযোগিতামূলক ঈদ সামগ্রী ক্রয়ের উৎসব। যেখানে প্রতিনিয়ত মানুষ করোনা রোগের আক্রমণে মৃত্যুর মুখোমুখি সেখানে বাজারে বাজার ক্রয়ের মানুষের ভিড় হওয়া এটা একটি অস্বভাবিক বিষয়। একদিকে আমরা আনন্দ থেকে বঞ্চিত এবং আর্থীক সংকটে সমাজে লাঞ্চিত হচ্ছে সে সময়ে অন্যদিকে কালোটাকার মালিকেরা লাল-নীল স্বপ্ন বাস্তবায়নরত। এই বৈষম্যতা দূর করার জন্য আল্লাহ তাআলা ঈদের আয়োজন করলেও আমরা এই ঈদকে ভোজ উৎসব হিসেবে উপভোগ করছি। তাই সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এইবারের ঈদে আনন্দ উপভোগ করার স্থলে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি চোখের জ্বলে। পরিশেষে বলব ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক, সবার জন্য আগামীর ঈদ যেন আল্লাহ সুখে এবং শান্তিতে উপভোগ করার সুযোগ দেন।
এবারের ঈদ আনন্দের স্থলে চোখের জ্বলে অতিবাহিত হচ্ছে
পূর্ববর্তী পোস্ট