
জাতীয় ডেস্ক:
এবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিক, ছেঁড়া জাল, স্যান্ডেল ও রশিসহ নানা ধরনের বর্জ্য ভেসে এসেছে। যা বালিয়াড়ির কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
সমুদ্রে নিম্নচাপের কারণে এসব বর্জ্য ভেসে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যে এসব বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৩০) রাতের জোয়ারের সময় এসব বর্জ্য ভেসে আসার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সৈকতে জেলা প্রশাসনের বীচ কর্মী বেলাল হোসেন।
তিনি জানান, রাতের জোয়ারের পর শুক্রবার সকালে এসব বর্জ্য ভেসে আসতে দেখা গেছে।
সৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত আনুমানিক আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বালিয়াড়িতে দেখা মিলেছে এসব বর্জ্য। যার বেশিরভাগ প্লাস্টিকের বোতল ও অন্যান্য সামগ্রী। যার সঙ্গে ছেঁড়া জাল, রশি, কাঁচের বোতল, গাছের গুড়ি, স্যান্ডেলসহ অন্যান্য বর্জ্য রয়েছে।
সৈকতের লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ রশীদ জানান, বুধবার অসংখ্য মৃত জেলিফিল, বৃহস্পতিবার দুটি মৃত ইরাবতি ডলফিল ভেসে আসার পর ব্যাপক হারে বর্জ্য ভেসে এল। যার কারণে বালিয়াড়িতে পড়ে থাকা বর্জ্যে সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়েছে সৈকত। একই সঙ্গে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। যা দেখে বিব্রত হচ্ছে পর্যটকরা।
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্স ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জানিয়েছেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী থেকে কবিতা চত্বর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় নানা ধরনের সামুদ্রিক বর্জ্য ভেসে আসে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজার সৈকতের দরিয়ানগর থেকে মহেশখালীর বিভিন্ন দ্বীপসহ সোনাদিয়া দ্বীপে একই বর্জ্য ভেসে এসেছিল।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা সমুদ্রে নিম্নচাপ, বয়ুপ্রবাহ, পানির ঘূর্ণন (এডি), সমুদ্রের পানির গতি প্রবাহসহ সমুদ্র পৃষ্ঠের ধরনের ওপর ভিত্তি করে সমুদ্র উপকূলের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ভাসমান প্লাস্টিকসহ ও অন্যান্য বর্জ্য জমা হয়। উল্লখ্য যে গত কয়েকদিন ধরে আমরা বঙ্গোপসাগরে একটি ছোট আকারের নিম্নচাপ লক্ষ্য করেছি। এসব নিম্ন চাপে জোয়ারের সময় সমুদ্রের উপরি পৃষ্ঠের পানি অতি মাত্রায় বেড়ে গিয়ে ফুলে উঠে এবং ঘূর্ণনের ফলে সমুদ্রের ভাসমান বর্জ্য একসঙ্গে জমা হয়ে ভেসে আসে সমুদ্র সৈকতে। এসব কক্সবাজার সমুদ্র কুলে অবস্থিত বিভিন্ন লতা, গুল্ম, ও ম্যানগ্রোভের সঙ্গে আটকা পরে। এটি টেরেসস্ট্রিয়াল মাইক্রো প্লাস্টিকের উৎসে পরিণত হয়েছে।
এবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিক, ছেঁড়া জাল, স্যান্ডেল ও রশিসহ নানা ধরনের বর্জ্য ভেসে এসেছে। যা বালিয়াড়ির কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
তিনি অনতিবিলম্বে এই বর্জ্য অপসারণ না হলে সৃষ্ট মাইক্রো প্লাস্টিকের কারণে সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পরবে এবং মানুষের জন্য বিশাল স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ জানিয়েছেন, এসব বর্জ্য অপসারণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অপসারণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুটি মৃত ইরাবতি ডলফিন, বুধবার (২৯ মার্চ), গত বছরের ৩ ডিসেম্বর, ১১ নভেম্বর ও আগস্ট মাসের শুরুতে দুই দফায় অসংখ্য মরা জেলিফিশ ভেসে এসেছিল। একইভাবে গত বছর তিন দফায় ভেসে এসেছে চারটি নানা প্রজাতির ডলফিন।