পীর হাবিবুর রহমান
বিগত ১১ বছর ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে আমরা ছিলাম হতাশ। ক্ষুব্ধ ও সমালোচনা মুখর। নানান বিতর্কে জড়িয়েছিলো ইতিহাসের ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠন। সর্বশেষ অতিষ্ঠ হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেন। নেতৃত্বে আসে সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তারা একটা পরিবর্তনের ধারায় ইতিবাচক ইমেজে মোড় ঘুরায়। সারাদেশে করোনায় ছাত্রলীগ স্যানিটাইজার বিতরণে জাগরণ ঘটায়। এই সঙ্কটে ধানের বাম্পার ফলন। কাটার লোক নেই। কৃষিমন্ত্রী পাগলের মতোন ছুটছেন। লোকবল দিচ্ছেন। সবার সহযোগিতা নিচ্ছেন। ছাত্রলীগ সারাদেশে জমিতে নেমে যায় ধান কাটায়। স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকায়। এ দেখে দলের অন্য সংগঠনের কর্মীরাও নামে। নামে মানুষ। প্রশংসার নজির সৃষ্টি করে। ছাত্রলীগ লবণচাষীদের পাশেও দাঁড়ায়। শ্রম দেয় তাদের বাঁচাতে। তাই নয় করোনা রোগে মৃতের দাফনেও এগিয়ে যায় মানবিক সাহসী ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ আজ প্রশংসিত গর্বিত। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর যেটি আশা করেছিলেন, আজ দেশের বিপদে তারা সেটিই করছে।
করোনা শেষ হলে ছাত্রলীগকে রাজনীতির সেই গৌরবের উত্তরাধিকারিত্বই বহনের পাঠ নিতে হবে। কারো বাহিনী নয়, কারো শক্তি নয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আদর্শিক ছাত্ররাজনীতির গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে ছাত্ররাজনীতির বন্ধাত্ব ঘুচাতে ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের হাতে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। পড়াশোনা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড,পাঠচক্র, মেধা মননশীলতার বিকাশ ঘটাতে নিতে হবে ভূমিকা। ব্যক্তিগত লাভ অর্থ কামানোর মোহ থেকে মুক্ত হয়ে দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব ও কর্মী তৈরিতে মনোযোগী হতে হবে।
পৃথিবীর ইতিহাসে ছাত্রলীগের মত এমন ছাত্রসংগঠনের অস্তিত্ব বিরল। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এই সংগঠনকে পেয়েছিলেন এক অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে। তার নেতৃত্বের প্রতি অনুগত লক্ষ্য অর্জনের প্রতি অবিচল। ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙ্গালীর ইতিহাস’ এটাই জাতির পিতা বলেছিলেন। ছাত্রলীগ মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্ধ বীরত্ব ও গৌরবের ভূমিকায় অনেক বীর মেধাবী সাহসী নেতার জন্ম দিয়েছে। দিয়েছে বীর যোদ্ধার জন্ম। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের গণজাগরণে জাতিকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এক মোহনায় মিলিত করেছিলো। বঙ্গবন্ধুর যাদুকরি নেতৃত্বে ছাত্রলীগের শক্তি সংগ্রামে আওয়ামী লীগই জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়নি, জাতিকেও সুসংহত ঐক্যের শপথ পাঠ করিয়েছিলো। ছাত্রলীগ গণতন্ত্রের সংগ্রাম থেকে অনেক নেতাকর্মী সৃষ্টি করেছে। ছাত্রলীগকে বাদ দিয়ে এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসটাই লেখা হয় না।
এটা আমার অহংকার যে স্কুল জীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিবেদিত ছিলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান আদর্শকে চিন্তা চেতনায় লালন করে। মুক্তিযুদ্ধের বাতিঘর হয়ে পঁচাত্তর-উত্তর সেই দুঃসময়টা ছিলো বড় কঠিন অন্ধকার সময়। বড় ভাই সে সময় ইতিহাস গড়তে নেতৃত্ব দেন একটি জেলায়। আলোকিত আদর্শিক ছাত্রলীগের পুনর্জন্মের ইতিহাস লেখা হয় তার নেতৃত্বে। তিনভাই ছাত্রলীগ করেছি। তখন সামরিক শাসন কবলিত বাংলাদেশের অন্ধকার এক অভিশপ্ত সময়। আমাদের তখন কার্যত কোনো মিত্র ছিলো না। বন্ধু ছিলো না। খুনিদের উন্মত্ততা ছিলো। মুজিব বিদ্বেষী উগ্র অতিবিপ্লবীদের বাড়াবাড়ি ছিলো। প্রগতির দাবিদার সুবিধাবাদীরা ছিলো চতুর। রাজনীতিতে তারা আজ এতিম। তবে সবাই ১১ বছরে আজ নব্য বড় মুজিব ভক্ত শেখ হাসিনার স্তাবক, সরকারের সুবিধাভোগী করুণাশ্রিত।
তবে সেই দুঃসময়েও রাজনীতিতে মরুকরুণ ছিলো না। দেশের রাজনীতিতে তখন নাব্যতা ছিলো। স্রোত ছিলো। ছাত্ররাজনীতি ছিলো আদর্শিক কর্মকান্ডে মুখর। সাংগঠনিক ক্যারিশমায়, বাগ্মিতায় মেধাবি নেতৃত্বের দক্ষতায় তারুণ্যের প্রতিবাদী নির্লোভ ত্যাগী কর্মিদের শক্তিতে কর্মমুখর। সে এক উত্তাল সময়। বন্দুকের নল, মার্শাল ল’, কারফিউ পুলিশি প্রতিরোধ কোনো কিছুই দমাতে পারেনি। আদর্শের শক্তি ও সংগঠনের প্রতি দরদ অন্যরকম। কি আবেগ, কি তার দ্রোহ। আমরা সেখানে দিয়েছি, নেইনি কিছুই, চাইনি বিনিময়। তবে জীবনের পাঠ দেশপ্রেম মানবপ্রেম বিফলে যায়নি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শেই আছি এখনো।
আজ জয় লেখকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ভূমিকায় বড় আনন্দিত, গর্বিত। তাদের বুকভরা অভিনন্দন।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন