সাতনদী ডেস্ক: প্রথম ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হলেও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আপাতত আর কোনো ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন আয়োজন করবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুধু ইউপি নয়, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কোনো ধরণের নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করবে না ইসি। এছাড়া পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান চেয়ারম্যান, মেম্বাররাই দায়িত্ব পালন করবেন- এমন অফিস আদেশ জারি করার প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ইসি ও মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সিলেট-৩ আসনে আগামী ২৮ জুলাই উপনির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা আছে। আপাতত সেপ্টেম্বরের আগে এর বাইরে আর কোনো নির্বাচনের জন্য নতুন তারিখ ঘোষণা করতে চায় না কমিশন। আগস্টে এমনিতেই কোনো নির্বাচন আয়োজন করে না কমিশন। তাই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেপ্টেম্বরে তফসিল ঘোষণা করে অক্টোবর থেকে হয়তো ধাপে ধাপে ইউপি নির্বাচনের আয়োজন করবে কমিশন।
এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেন, গত কমিশন সভায় আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, করোনা পরিস্থিতি যদি এরকমই থাকে, তাহলে পরের ধাপের নির্বাচনের তফসিল দিবো না।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি যে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। দিন দিন আরো অবনতি হচ্ছে। যেসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হবে তার বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে। সুতরাং করোনা প্রকোপ কমে গেলে তারপর পরবর্তী ধাপের তফসিল দেবো। এখন যেই পরিস্থিতি আছে এই পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের কোনো চিন্তা-ভাবনা কমিশনের নেই।
তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ের শেষের দিকে আরেকটি মিটিং করার কথা আছে। কমিশন সভার জন্য কিছু দিন সময় আছে। সরকারও হার্ড লাইনে। করোনা পরিস্থিতি দেখে ওই সভায় ইউপি নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। যেহেতু এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তাই কমিশন এই মুহূর্তে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার চিন্তা-ভাবনা করছে না।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, জুলাই মাসে কমিশন হয়তো এই ধরণের সভা করতে পারে যে, আমরা পরবর্তী নির্বাচন কবে নাগাদ দিতে পারবো। আর যদি কোনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হয়, তাহলে আমরা সেপ্টেম্বরে তফসিল ঘোষণা করবো। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে আমরা বসবো। নির্বাচনী কার্যক্রম সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে, যদি দেশে নির্বাচন করার মতো উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়। জুলাই মাসে নতুন করে কোনো নির্বাচনের তফসিল দেওয়ার সুযোগ নেই।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নির্ধারিত সময়ে ইউপি নির্বাচন আয়োজন করতে পারেনি ইসি। নির্ধারিত সময়ের পরের ৯০ দিনের মধ্যে প্রথম ধাপে গত (২১ জুন) ২০৪টি ইউপিতে ভোট সম্পন্ন করেছে কমিশন। চলতি মাসে নির্ধারিত সময়ের পরবর্তী ৯০ দিনও পার হয়ে যাচ্ছে আরও এক হাজারের বেশি ইউপি’র।
সূত্র জানায়, ইসি ইতোমধ্যে নির্ধারিত সময়ে ইউপি নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। তখন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ইউপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান, মেম্বাররাই দায়িত্ব পালন করবেন বলে মাঠপর্যায়ে চিঠি দিয়ে জানায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা না গেলে তার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা যায়। পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যেও নির্বাচন আয়োজন করা না গেলে ইউনিয়ন পরিষদ আইনের ১০১ ধারা অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দিয়ে জানাতে হয়- বর্তমান চেয়ারম্যান, মেম্বাররাই পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, আমরা এখনও এমন কোনো নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে দিইনি। এই বিষয়ে কাজ চলছে।
নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা না গেলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে কি না জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, আইনে একটা কথা আছে ‘ফোর্স মেজার’, যেটার বাংলা নাই। আইনের আওতায় বলা থাকুক বা না থাকুক, জনস্বার্থে ফোর্স মেজার কনসেপ্ট আছে, যখন অস্বাভাবিক একটা বিরাট ঘটনা ঘটে তখন ওটার সম্মুখে আইন অনুযায়ী কাজ না করলেও চলবে। সংবিধানে লেখা থাকলেও ফোর্স মেজার-এর মাধ্যমে সবকিছু বন্ধ করা যায়। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে অফিস আদেশ জারি না করলেও আইনের ব্যত্যয় হবে না।
প্রথম ধাপে ৩৭১ ইউপি’র ভোটের তফসিল ঘোষণার পর করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত ১ এপ্রিল এসব নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন। প্রথম ধাপে ইউপিতে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত ছিলো ১১ এপ্রিল। পরবর্তীতে গত ২ জুন এসব ইউপিতে ২১ জুন ভোটের নতুন তারিখ ঘোষণা করে কমিশন। কিন্তু করোনা সংক্রমণের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ১০ জুন বৈঠক করে সেখান থেকে ১৬৩ ইউপি’র ভোট আবার স্থগিত করে ২০৪ ইউপিতে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
ইসি সূত্র জানায়, দেশে সাড়ে চার হাজারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে ২২ মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ছয় ধাপে চার হাজারের বেশি ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় ও সংরক্ষিত মহিলা ও সাধারণ ওয়ার্ডে মেম্বার পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হয়।
২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে ২৯ ধারায় পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কার্যকাল বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ থেকে পাঁচ বছর পরিষদের মেয়াদ থাকবে।
পরিষদ গঠনের জন্য কোনো সাধারণ নির্বাচন ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ হতে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্য কোনো কারণে নির্ধারিত ৫ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিংবা অনধিক ৯০ দিন পর্যন্ত যা আগে ঘটবে, সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্ষমতা দিতে পারে।
ইউনিয়ন পরিষদ আইন-২০০০ এর ১০১ ধারায় বলা হয়েছে- ‘এই আইনের বিধান কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে সরকার উক্ত অসুবিধা দূরীকরণার্থে, আদেশ দ্বারা, প্রয়োজনীয় যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’