
সচ্চিদানন্দদেসদয়: ভৌগলিক দিক দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এলাকার মধ্যে বসবাস করেছেন আশাশুনির উপকূলীয় এলাকার লোকজন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফেরে তাদের। উপকূলবাসীকে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছোবল থেকে রক্ষার জন্য ষাটের দশকে নির্মাণ করা হয়েছিল বেড়িবাঁধ। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, ফনি,বুলবুলের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ো হাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বেড়িবাঁধের। ২০০৯ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলায় সাতক্ষীরা উপকূলের ৭৯৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভেড়ি বাঁধের মধ্যে ২১০ কিলো মিটার ভেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের সংস্কার হয়েছে নামমাত্র। যে কারণে আতঙ্ক কাজ করছে উপকূলবাসীর মধ্যে।
এ দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। আর এই প্রভাবে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে দিন দিন নদীতে পানি উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আশাশুনি উপজেলার বেড়িবাঁধের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। উপকূল এলাকার এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলা গ্রামের গ্রামের পরিমল মন্ডল বলেন, আমাদের মতো গরিব মানুষের ভোটেই চেয়ারম্যান, এমপি-মন্ত্রী হয়। ভোটের আগে বলে এবার শুধু ভোটে পাস করতে পারলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হবেই। কিন্তু পাস হয়ে গেলে আর কেউ খোঁজ নেয় না। ভোট শেষ, আমাদের দামও শেষ।আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের হিজলিয়া, কোলা, শুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, চাকলা, দয়ারঘাট, মনিপুর, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে আর এক-দুই হাত অবশিষ্ট আছে।বাঁধ না ভাঙলে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও ঘুম ভাঙে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, একবার বাঁধ ভাঙলে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড তলিয়ে যায়। অবকাঠামো নাজুক হয়ে পড়ে। বাঁধ ভাঙলে সংস্কার করা হয়, ভাঙার আগে বার বার বলা সত্ত্বেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না। তার ইউনিয়নের অনন্ত ৩০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঠিক একই অবস্থা আনুলিয়া, বড়দল, বুধহাটা,খাজরা ইউনিয়নেও একই অবস্থা।আশাশুনি উপজেলার আওয়ামীলিগের সাধারন সম্পাদক শম্ভুজিত মন্ডল বলেন জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে সর্বস্ব হারানোর আতঙ্কে দিন কাটাছে আশাশুনির উপকূলবাসীর। তাদের রক্ষায় নির্মিত বেড়িবাঁধের নাজুক অবস্থার কারণে এই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। টেকসই মজবুত স্থায়ী বেড়িবাঁধই পারে ঝুঁকিতে থাকা উপকূলবাসীকে সুরক্ষা দিতে। সে কারণে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি টেকসই মজবুত স্থায়ী বেড়ি নির্মাণ করা হোক। তিনি আরও বলেন,এই অঞ্চলের উন্নয়ন বাঁধগুলো টিকিয়ে রাখতে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধের বিকল্প নেই। এ জন্য স্থায়ী মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।