
হাবিবুল্লাহ বাহার: সাতক্ষীরা সিটি কলেজে ফরম ফিলাপে তিন লাখ টাকার অবৈধ্য অর্থ আদায়। কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পুরনে নির্ধরিত ফিসের বাইরে অতিরিক্ত প্রায় তিন লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকারও অধিক পর্যন্ত আদায় করছে। যা বোর্ড নির্ধারিত ফি’র প্রায় দ্বিগুণ। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছর মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর এক ঘোষণা পত্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য বিজ্ঞান বিভাগ ১৯৩০ টাকা, ব্যাবহারিক ৮৫৫ টাকাসহ মোট ২৭৮৫ টাকা, মানবিক বিভাগ ১৭৩০ টাকা, ব্যবহারিক ফিস ৪৯৫ টাকাসহ মোট ২২২৫ টাকা ও ব্যানিজ্য বিভাগ ১৭৩০ টাকা ব্যবহারিক ফিসসহ মোট ২২২৫ টাকা ফরম পুরনের জন্য বোর্ড ফি বেধে দেয়া হয়। বোর্ড নির্ধারিত ঘোষণা অমান্য করে আইন বহির্ভূতভাবে সাতক্ষীরা সিটি কলেজ কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি মারফত জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত ও অনিয়মিত সকল শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফরম পূরণে বিজ্ঞান বাণিজ্য ও মানবিক শাখা সকলের জন্য বোর্ড ও কেন্দ্র ফিস বাবদ ২৯০০ টাকা, আইসিটি ফিস ১০০ টাকাসহ মোট ৩০০০ টাকা। ব্যবহারিক বিষয়পত্র প্রতি ২০০ টাকা, এক বিষয়ে মানউন্নয়ন ১৫০০ টাকা। গত ১০ মার্চ শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের নির্ধারিত শেষ দিন ছিলো। তবে ১৮ মার্চ ১০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ফরম পূরণ করতে পারবে বিজ্ঞপ্তির ঘোষণা মারফত। প্রথমে সিটি কলেজ সকল বিভাগের জন্য ঘোষণা করেন ৩০০০ টাকা। পরবর্তীতে ২০০ টাকা বৃদ্ধি করে সকল বিভাগের জন্য ৩২০০ টাকা নির্ধারণ করেন। আর প্রতি বিষয়ে ফেল করলে আর ৫০০ টাকা বেশি জমা দিতে হবে। সেই হিসেব করেই শিক্ষার্থীরা কলেজে গিয়ে ফরম পূরণ করছে। এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের জন্য শিক্ষা বোর্ড ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের জন্য ২ হাজার ২২৫ টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২ হাজার ৭৮৫ টাকা নির্ধারণ করালেও সাতক্ষীরা সিটি কলেজের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার অধিক টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সিটি কলেজ কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি মারফত জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত ও অনিয়মিত সকল শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফরম পূরণে বিজ্ঞান বাণিজ্য ও মানবিক শাখা সকলের জন্য বোর্ড ও কেন্দ্র ফিস বাবদ ২৯০০ টাকা, আইসিটি ফিস ১০০ টাকা সহ মোট ৩০০০ টাকা। ব্যবহারিক বিষয় পত্র প্রতি ২০০ টাকা, এক বিষয়ে মানউন্নয়ন ১৫০০ টাকা, গত ১০ মার্চ শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের নির্ধারিত শেষ দিন ছিলো। তবে ১৮ মার্চ ১০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ফরম পূরণ করতে পারবে বলে জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ। যশোরে শিক্ষা বোর্ডের ঘোষণা বহির্ভূত অতিরিক্ত ফি আদায়ের কারণে অনেক পরিবারই হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও কলেজ নির্ধারিত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার অধিক পর্যন্ত ফরম ফিলাপ বাবদ আদায় করছেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ধারদেনা করে ফিলাপের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছেন অভিভাবকরা। সরেজমিনে জানা যায়, সাতক্ষীরা সিটি কলেজে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী প্রায় ৩০৫ জন। (শিক্ষার্থীদের নাম ও রোল নাম্বার গোপন রেখে) শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য কলেজের সিলমোহর যুক্ত কাগজে বিবরণে দেখা যায়, বোর্ড ফি ৩২০০ টাকাসহ কলেজের জন্য ২৩০০ টাকা মোট ৫৫০০ টাকা, এভাবে ৬৩০০ টাকা, ৫৩০০ টাকা, ৬২০০ টাকা, ৪৮০০ টাকা, ৫৫০০ টাকা, ৫৬০০ টাকা, ৭৪০০ টাকা কারো কারো কাছ থেকে ৯০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। সেই হিসেবে বিজ্ঞান শাখা শিক্ষার্থীদের বোর্ড নির্ধারিত অতিরিক্ত ৪১৫ টাকা বেশী নিচ্ছেন। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ৯৭৫ টাকা বেশি নিচ্ছেন। কলেজের জন্য নিচ্ছেন ২০০০ টাকা থেকে ৫০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর প্রতি বিষয়ে ফেল করলে আরো ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দিতে হবে। এভাবে তিন বিভাগ থেকে অতিরিক্ত তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বোর্ড নির্ধারিত অতিরিক্ত ৯৭৫ টাকা ও কলেজ নির্ধারিত ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ না ফেল করিয়ে দেওয়া হবে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়। ব্যবহারিক পরীক্ষার নাম্বার শিক্ষকদের হাতে থাকায় শিক্ষার্থীরা সেই ভয়ে টাকা পরিশোধ করছে। ফরম পুরনে অতিরিক্ত টাকা আদায়ে শিক্ষার্থীদের দাবি নতুন বাংলাদেশে পুর্বের মত কলেজ গুলোতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলে পরিবর্তনের কি প্রয়োজন ছিলো। তারা তদন্ত সাপেক্ষে এই কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেকে অতিরিক্ত ফি দিয়েই ফরম পূরণ করেছেন। সাতক্ষীরা সিটি কলেজে বোর্ড নিধারিত টাকায় ফরম পূরণ করতে না পেরে অতিরিক্ত টাকা বেশি নেওয়াতে অবিভাবকরা অসন্তোষ। একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানায়, সরকার নির্ধারিত ফি জোগাড় করতেই রীতিমতো তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত ফি আদায় করাটা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়েছে। কথা প্রসঙ্গে এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন প্রভাষক বলেন, কলেজ উন্নয়ন, বেতনসহ কলেজে অনেক ব্যায় হওয়ায় সামান্য কিছু টাকা বেশি আদায় করা হচ্ছে। অভিভাবকরা দাবি করছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন, যেন আর্থিক হয়রানির শিকার না হন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রশাসন যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্যান্য কলেজেও একই ধরনের অনিয়ম ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন অভিভাবকরা।