
#৫ আগষ্টের পর রিপন হোসেনের নেতৃত্বে দরমূজ বাহিনী গঠন করে ফারুক জোয়াদ্দার অন্তত ৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে ।
# গরু ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে ঘোষপাড়া থেকে৩০ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করেছে ফারুক জোয়াদ্দার ্ও তার বাহিনী ।
# সংখ্যালঘুদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৫ লক্ষ টাকার মাছের ফিড,ডিজেল,পেট্রল ও কিটনাশক লুট্টরাজ করেছে ফারুক জোয়াদ্দার ও তার বাহিনী ।
# ফার্নিসারের দোকান থেকে নগদ ৮৫ হাজার টাকা সহ ১২ লক্ষ টাকার ফার্নিসার লুট করেছে ফারুক জোয়াদ্দার ও তার বাহিনী।
তালা থেকে ফিরে ফেরদৌস আলম : নব্বই দশক থেকে ডুমুরিয়া তালা পাইকগাছাসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রকাশ্যে চলতো খুন চাঁদাবাজি ধর্ষণ ভূমি দখলসহ অস্ত্রের মহড়া। ফোর-ফাইভ মার্ডার, টু মার্ডার ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। দক্ষিণাঞ্চল এক সময়ে চমপহ্নিদের আস্থানা হিসেবে পরিচিত ছিল তালা উপজেলা। দেড় থেকে দুই দশক শান্ত থাকার পর আবারও পূর্বের চিহ্নিত সব চরমপহ্নিরা আবারও সংগঠিত হচ্ছে চেহারা বদলে। দলে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন মুখ। এ অঞ্চলে পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি এম এল জনযুদ্ধের নেতৃত্বে রয়েছে দু’জন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তারা শান্ত তালাকে অশান্ত করে তুলছে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ১৯৯২ সালে তালা খেজুরবুনিয়া বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে অপূর্ব সাহাকে হত্যার মধ্য দিয়ে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল জনযুদ্ধ নামে নতুন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠণের আত্নপ্রকাশ ঘটে। সেই থেকে কৃষক নেতা রেজওয়ান, সৈয়দ সোহরাব হোসেন, আঃ জব্বার এবং বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে অন্তঃদ্বন্দের সুত্রপাত হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে দুপুর ১২ টায় তালার উত্তর আটরই পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার নজরুল ইসলাম, আব্দুল সালাম, হারুনসহ চার জন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের হাতে নিহত হন। জীবন বাঁচাতে চরমপন্থী দলের নেতা আটারই গ্রামের ফারুক জোয়াদ্দারকে তার বাবা পুলিশকে ম্যানেজ করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চরমপহ্নি দলটি। হাজারাকার্টি গ্রামের তপন চক্রবর্ত্তী, আটারই গ্রামের ওকেল খাঁ, ডাংগানলতা গ্রামের মিজান খাঁ এরা চরমপহ্নি দলের সক্রিয় সদস্য। বারুইহাটি গ্রামের রিপন এখন নতুন সদস্য দলটির। সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট থেকে চাঁদাবাজি, জমি দখল, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করে আসছেন। অন্তরালে নেপথ্যের সেই চরমপহ্নি দল নেতা ফারুক জোয়দ্দার। ফারুক জোয়ার্দ্দার ২০০১ সালে ছিলেন তালা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। এরপর চরমপহ্নি দলের সম্পৃক্ত থাকায় তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালিয়ে যান মালয়েশিয়া। এক দশকেরও বেশী সময় অবস্থান করেন সেখানে। ২০২২ সালে দেশে আসার পর বিএনপির রাজনৈতিক কোন কর্মকাণ্ডে তাকে সরাসরি দেখা যায়নি। তবে টাকা ছড়িয়ে হয়ে ওঠেন তালার আ.লীগ নেতাদের প্রিয়জন। আড়াল করে ফেলেন চরমপহ্নি পরিচয়।
আওয়ামী লীগের সময় যুব লীগের সভাপতি সরদার জাকির হোসেন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার মশিয়ার রহমানের তকমা গায়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। এখন বিএনপি তকমা গায়ে লাগিয়ে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাসহ চরমপন্থীদের সংঘতিত করতে তৎপরতা চালাচ্ছেন প্রকাশ্যে।
তালার জেয়ালা ঘোষপাড়ার একাধিক ব্যক্তি জানান, গত ৫ ই আগস্ট জেয়ালা শেখেরহাট ঘোষপাড়া গরু ট্রাকে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে ৩০ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজি করে। স্বদেশ ঘোষের দোকানে ১৫০০ বস্তা ফিড লুট করে ও তুষার ঘোষে দোকান থেকে ডিজেল,পেট্রোল,কীটনাশকসহ নগদ টাকা লুট। সুভাষ ঘোষের দোকান ঘর থেকে ৪০০ বস্তা চাউল লুট করে। কিন্তু তারা ভয়ে আইনের আশ্রেয়ে যেতে পারেননি। বিএনপির কোন পদে না থাকলেও এমন দেখায় সে বিএনপির কর্ণধর।
তালা পুরাতন ফুটবল মাঠের কোনে থাকা দোকান মালিক জাহিদ অর রশিদ জানান, তার দোকান থেকে দামি কসমের্টিক্স ফার্নিচারসহ নগদ ৮৫ হাজার টাকা মিলে ১০-১২ লক্ষ টাকার মালামল লুট করেছে ফারুক জোয়ার্দ্দার। আমাদের চারটি দোকান ঘর ভাংচুর করে নিশ্চিহ্ন করেছে। চারটি দোকান ঘরের মধ্যে বিউটি পার্লার ও আসাদ আট ঘর এবং আমার কসমের্টিক্স দোকান ছিল। ফারুক জোয়ার্দ্দারের ক্লিনিকের সামনের দক্ষিণ পার্শ্বে সরকারী রাস্তা থাকলেও পূর্ব পার্শ্বের চারটি দোকান ভেঙ্গে ক্লিনিকের জায়গা প্রশারিত করেছে ৫ আগস্ট। চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ সব সময় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত। ভয়ে মুখ খুলতে সাইস পাচ্ছেন না অনেকেই। বিদেশে পাঠানোর নামে অর্ধশত কোটি টাকারও বেশী বিভিন্ন মানুষদের টাকা আত্নসাৎ করে সর্বশান্ত করেছে। তার অত্যাচারে এলকাবাসী অতিষ্ট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত দাবি করছি।
স্থানীয়রা জানান, এসকল চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় খবর প্রকাশ করলে তারা তালার দুটি বেসরকারী এনজিও প্রতিষ্ঠানে ছত্রছায়ায় ও অর্থায়নে মহিলা কর্মীদের জড়ো করে সেই সব সাংবাদিকদের গ্রেফতার দাবিতে মিছিল মিটিং সভা, সমাবেশ করে আসছেন।
মোঃ আব্দুল লতিফ শেখ জানান, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দুটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তাদের অপকর্মের প্রতিবাদকারীদের রুখতে যুবলীগের তালা উপজেলা সভাপতি, আওয়ামীলীগের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক, খলিলনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ একটি দরমুজ বাহিনী দিয়ে মানুষকে জব্দ করতো। বর্তমানে চরমপন্থী জোয়াদ্দার ফারুক, বারুইহাটি গ্রামের রিপন হোসেনের নেতৃত্বে একটি দরমুজ বাহিনী তৈরী করেছে। যাদের পরিচয় বিএনপি নামধারী। এরা দলটির জন্য ক্ষতিকর। সাধারণ মানুষদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে। যার প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে এমনটি আলোচনা হচ্ছে সবখানে। চিহ্নিত এসব চরমপহ্নিদের দমন করা জরুরী সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
তালা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাঈদুর রহমান সাঈদ বলেন, যাদের দলীয় কোনো পদ পদবী নেই, দায়িত্ব নেই যারা নিজেকে বিএনপির অনেক বড় নেতা মনে করছে, আসলে দল তাদেরকে দলীয় হিসেবে গ্রহণ করেনি। তারা যেসব অপকর্ম করছে এর দায়ভার আমাদের দল কখনোই নেবে না।
সাতক্ষীরা-১ তালা-কলারোয়া আসনের সাবেক সংসদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, আসলে ফারুক বিএনপির কোন পদে নেই। আমরা তাকে অনেক বার বলেছি। সে আমাদের দলের কেউ না।
চরমপহ্নি দলের নেতা ফারুক জোয়ার্দ্দার ভোলপাল্টে এখন বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির স্বঘোষিত বড় নেতা পরিচয়ে চরে বেড়াচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন থেকে পুলিশ প্রশাসনে। প্রশাসনও অতীত ইতিহাস না জেনেই এসব চরমপহ্নিদের পাশে বসিয়েছেন কখনো কখনো। তবে সে দলের কেউ নয় সেটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তালা-কলারোয়ার বিএনপির কর্ণধার সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব। তবে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন চরমপহ্নি নেতা ফারুক জোয়ার্দ্দার। এসব ঘটনায় সেনা বাহিনী, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি কামনা করেছেন তালার সচেতন মানুষ।