বিশেষ প্রতিনিধি, শ্যামনগর: সাংবাদিকতা পেশাকে বলা হয় মহান পেশা। আর সাংবাদিককে বলা হয় কলম সৈনিক ও জাতির বিবেক। সমাজের নানা অসংগতির চিত্র তুলে ধরে অসংগতি সমূহের লাগাম টেনে ধরার কাজটিই করে থাকেন সাংবাদিকবৃন্দ। সমাজে ঘটে যাওয়া দূর্ণীতির সমূলে উৎপাঠনের জন্য জীবন বাজী রেখে সাংবাদিকগণ কাজ করে থাকেন বলেই তাদের মর্যাদা অনেক বেশি। সমাজের দূর্ণীতিবাজরা সাংবাদিকদের ভয়ে দূর্ণীতি করতে ভয় পান। কিন্তু জাতির বিবেক খ্যাত সেই সাংবাদিকগণ যখন রক্ষক থেকে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখনই সমাজের অগ্রযাত্রা হয় ভূলুন্ঠিত। অপরাধীগণ তাদের অপরাধ আরো বাড়িয়ে তোলে। সাংবাদিক যখন তেলবাজীতে মত্ত থাকে তখন সে আর সাংবাদিক থাকেনা, হয়ে যায় সমাজের কিট। সাংবাদিক যখন চাঁদাবাজ হন, সমাজের দূর্ণীতি তখন বহুগুণে বেড়ে যায়। সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরে সাংবাদিকতা পেশায় তেমন একজন কিটের সন্ধান পাওয়া গেছে। সাংবাদিকতা পেশার পেশাদারিত্বকে ভূলুন্ঠিত করছে দৈনিক পত্রদূতের সাংবাদিক পরিচয়দানকারী আক্তার হোসেন। সাংবাদিকতার যতগুলো আইন আছে তর কোন ধারাতেই বলা নেই একজন সাংবাদিক সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত থাকতে পারবেন। একজন সাংবাদিক সকল দল ও মতের উর্ধে থেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করবেন। তবেই সেই সাংবাদিক হবেন প্রকৃত কলম সৈনিক। সাংবাদিক আক্তার হোসেন সেই ক্ষেত্রে একজন ব্যতিক্রমী সাংবাদিক। দৈনিক সাতনদী পত্রিকায় সাংবাদিক আক্তার হোসেনের লাম্পট্য, দালালী, প্রতরণা, চাঁদাবাজীর তথ্য তুলে ধরে প্রকাশিত সংবাদেও প্রতিবাদ জানাতে ফেসবুক লাইভে তিনি জানিয়ে দেন তার দলবদলের কথা। তিনি জানালেন পূর্বে তিনি সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার মাথায় পরিহি তলাল ব্যন্ডেজে আওয়ামীলীগের সক্রিয় নেতা, আওয়ামীলীগ বিদায় নিয়েছে, এখন তিনি আবারও বিএনপিতে সক্রিয় হয়েছেন। মাঝের দিন গুলো ছিল শুধু ফায়দা হাসিলের জন্য। তিনি ঐ ফেসবুক লাইভে স্বীকার করেছেন অবৈধ বালু তোলার বৈধতা দিতে কিছু খরচ নিতেন। বিভিন্ন সড়কে বালি ভরাটে অবৈধ বালু উত্তোলনে তাকে মাশোয়ারা দিতে হয়েছে সেটি তিনি অপকটে স্বীকার করেছেন আবার বলেছেন এক হাজার টাকার বেশি নেননি। ঐ লাইভে তিনি সাতনদী প্রতিনিধি আব্রাহাম লিংকনের বিভিন্ন দূর্ণীতির কথা। খানিকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। সাংবাদিক যখন রাজনীতির মসনদ চর্চা করেন তখন তার দ্বারা দূর্ণীতিবাজ রাজনীতিকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ সম্ভব নয়। আক্তার হোসেন একই সাথে রাজনীতির মঞ্চ গরম করা আবার পত্রিকায় সত্য খবর প্রকাশ করা কি সম্ভব? সুযোগ বুঝেই সবকিছুতে বাজমাত করে থাকেন সাংবাদিক আক্তার হোসেন। বিগত আওয়ামী দুঃশাসনের সময় নেতার ভূমিকায় থেকে হাতিয়েছেন অনেক কিছু। স্থানীয় সাধারণ মানুষের জন্য তিনি ছিলেন পেশাদার চাঁদাবাজ। বর্তমান সময়ে ভোল পাল্টিয়ে আগের সেই চাাঁদাবজি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা আওয়ামী ঘরানার আক্তার হোসেন এখন বিএনপি রাজনীতির অন্যতম নেতা। দখলবাজী, দালালী আর চাঁদাবাজীর মতো নৈতিকতাহীন কাজগুলোই আক্তারের রুটিন ওয়ার্ক। তার অপ্রতিরোধ্য চাঁবাজিতে এলাকার সাধারণ মানুষ জিম্মি। ৫ই আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর এলাকাবসী ভেবেছিল আক্তারের চাঁদাবাজী শেষ হবে কিন্তু বিধিবাম আক্তার এখন এলাকার বিএনপি নেতা। উপজেলা বিএনপির শীর্ষনেতাদের সাথে মিছিল-মিটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন আক্তার হোসেন। সাংবাদিক আক্তার হোসেনের দখলবাজী ও চাঁদাবাজী সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চঞ্চল্যকর সব তথ্য। সাংবাদিকতার পেশাদারিত্বকে পায়ে দলে হলুদ সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, আক্তার একজন লম্পট, দালাল, প্রতারক, বাটপার, চিটার, প্রকৃতির মানুষ। প্রায় ৫/৭ বছর পূর্বে গাজা বিক্রয় ছিল একমাত্র পেশা। লেকাপড়া বেশিদুর না এগুলেও হঠাৎ পত্রদুত এর সাংবাদিক হয়ে শেখ হাসিনার আমলে রমজাননগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল-মামুন, লাল্টু মেম্বার, কৈখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম সহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তেলবাজী করে নানারকম সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। যার সকাল শুরু হতো কোন এক আওয়ামীলীগ নেতাকে নিয়ে ফেসবুকে তেলবাজী পোস্ট করে। আওয়ামী নেতাদের বিভিন্ন মিছিলে অংশগ্রহণ ও ছবি তোলার কাজ। এরই সুযোগে চাঁদাবাজী। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ভোল পাল্টে হয়েছেন বিএনপি নেতা। দাবি করছেন নিজেকে বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি হিসেবে। জানা গেছে, ভেটখালি টেংরাখালি, কৈখালি, কালিঞ্চি, মিরগাং, এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ ও সংখ্যালঘু হিন্দু ও ঋসি সম্প্রদায়ের বউদের মাঝে বর্তমানে আতংকের এক নাম সাংবাদিক আক্তার। ঋষি (মুন্ডা) সম্প্রদায়ের নারীদের বিভিন্ন প্রলোভনে, অথবা হুমকিতে কিংবা ক্ষমতা প্রদর্শন করে তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করিয়েছেন তিনি। ভুক্তবোগী পরিবারগুলো পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিপদের কথা চিন্তা করে সংখ্যালঘুরা মুখ খুলতে ভয় পায়। তারা দিনের পর দিন এমন অপকর্ম মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে বলে জানান। আক্তারকে চাঁদা না দিলেই চলে নানারকম হয়রানি। ভিকটিমের নামে নিজস্ব ফেসবুকে মানহানীকর পোস্ট দিয়ে শুরু করেন, পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের ভয় দেখিয়ে, ব্লাকের মাল পাসিং দিয়ে, সুন্দরবনে অবৈধ নৌকা পাঠিয়ে, সুন্দরবনে পাস বানিজ্য, হরিণ শিকার করে বিক্রি, কৈখালি, গোলাখালি সীমান্তের কালোবাজারি, মাদক ব্যবসায়ী, ডাকাতের সাথে সখ্যতা করে মাসোহারা আদায়। সর্বোপরি সাংবাদিক হয়ে যত ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে জিবিকা নির্বাহ করা যায় সেভাবেই করছেন সাংবাদিক নামধারী আকতার হোসেন। এখন সে তেলবাজি করছে ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি শহীদের। কারন শহীদের কাছে তেলবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের অধিক মুল্যায়ন রয়েছে। রমজাননগর ইউনিয়নে তাদের যাবতীয় রাজনৈতিক শেল্টার তিনিই দেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রমজাননগর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি শহিদুজ্জামান ও তার ছোট ভাই নুরুজ্জামান, দিন দিন এক অপ্রতিরোধ্য চাঁদাবাজ হয়ে ওঠা সাংবাদিক আক্তার হোসেনের এসব অপকর্মের সরাসরি প্রশ্রয় দিচ্ছে। জানা গেছে চাঁদাবাজীর বড় একটা অংশ যাচ্ছে নুরুজ্জামানের পকেটে। সাংবাদিক নামের কলংক আক্তার হোসেনের চাঁদবাজীর দৌরাত্ম বন্ধ করবে কে? তার বর্তমান কর্মকান্ডে প্রকৃত ও পেশাদার সাংবাদিকগণও বিব্রত। তার কারণে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে কিনা সেটিও দেখবে উপজেলা ও জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ? দৈনিক পত্রদূত ও উপজেলা প্রেসকা¬ব শ্যামনগরের দায় আছে কিনা সেটিও ক্ষতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া সময় এখনই। অতি সম্প্রতি তার এলাকার বিএনপির কিছু নেতার দূর্ণীতি ও অপকর্মের সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রকাশ্যে সংবাদপত্র পোড়ানো হয়। সংবাদপত্র পোড়ানোর সময় সাংবাদিক আক্তার হোসেনকে উল্লাস করতে দেখা যায়। বেশ কিছুদিন আগে সাতনদী প্রত্রিকার রমজাননগর ইউনিয়ন প্রতিনিধি আব্রাহাম লিংকনের ব্যবহৃত গাড়ীটি পোড়ানো হয়। গাড়ী পোড়ানোর সময়ও ঘটনাস্থলে সাংবাদিক আকতার হোসেনকে দেখা গেছে।