- আমি সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। আমি চাঁদাবাজির টাকার ভাগ নেব কেন? সিএন্ডএফ নেতারা বাসায় এসেছিল সত্য। বন্দরের সমস্যা নিয়ে যেন সংসদে কথা বলি এটা বলার জন্য-এমপি আশরাফুজ্জামান আশু
- আমি চাঁদাবাজির প্রক্রিয়ার সাথে একমত নই। এই চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়া উচিৎ-স্বপন
নিজস্ব প্রতিবেদক :
আমি এখন এমপি। দুই লাখে হবে না। ৩ লাখ করে দিতে হবে। ভোমরা স্থলবন্দরের চাঁদাবাজির টাকার হিসাব দিতে গেলে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু।
কয়েকদিন আগে সংসদ সদস্যের বাসভবনে এ ধরণের লেনদেনের ঘটনাটি ঘটেছে। এমনকি সিএন্ডএফ এজেন্টস এর ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে খবর পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালের ২১ জুন থেকে ভোমরা বন্দরের জিরো পয়েন্টে ভারতীয় আমদানি জাত ট্রাক থেকে সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের নামে চাঁদাবাজি শুরু হয়। যার বিরূপ প্রভাব পড়ে আমদানি বাণিজ্যে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানিকারক এসোসিয়েশন সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায় নি।
এমনকি আমদানি রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের কোন কোন কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে হয়রানীর শিকার হয়েছেন। প্রতি ট্রাক থেকে ২০০ রুপি হারে এ পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত করেছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জিরো পয়েন্টে সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু পরদিন সকাল থেকে পুনরায় চাঁদাবাজি শুরু হয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সিএন্ডএফ কার্যালয়ে উপস্থিত সাতক্ষীরা ১ আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, সাতক্ষীরা ২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলামের সামনে জিরো পয়েন্টে চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য আমদানীকারকরা দাবী জানান। নেতৃবৃন্দ ২১ ফেব্রুয়ারির পরে উভয় পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি নিরসণের আশ্বাস দেন। কিন্তু সিএন্ডএফ এর নামে চাঁদাবাজির যাতাকলে পিষ্ট হয়ে আমদানি রপ্তানীকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।
কয়েকদিন আগে সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এজাজ আহমেদ স্বপন, সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকছুদ খান, অর্থ সম্পাদক আবু মুছা সাতক্ষীরা ২ আসনের এমপি আশরাফুজ্জামান আশুর বাসভবনে যান। ২ লাখ টাকার বান্ডিল দিতে গেলে এমপি আশু ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তিনি উচ্চস্বরে বলেন, আমি এখন এমপি।
দুই লাখে হবে না। ৩ লাখ করে দিতে হবে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, জিরো পয়েন্টে চাঁদাবাজির টাকা সিংহভাগ চলে গেছে প্রশাসনের কোন কোন কর্মকর্তা ও গুটিকয়েক রাজনৈতিকের পকেটে। সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের কয়েকজন কর্মকর্তা বাকি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এজাজ আহমেদ স্বপন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন না। সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদকের ইচ্ছায় জিরো পয়েন্টে চাঁদাবাজি শুরু হয়।
এ চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়া উচিৎ বলেও মন্তব্য পোষণ করেন তিনি। ভারতীয় ট্রাক থেকে চাঁদা তোলার বিষয়ে এপি আশরাফুজ্জামান আশু সাতনদীকে জানান, ভোমরায় ভারতীয় ট্রাক থেকে দুইশত রুপি আদায়ের বিপক্ষে আমি। কিছু টাকা তোলে মাকছুদরা। এই টাকার হিসাব আছে। এই টাকা কিছু কিছু খাতে ব্যয় করা হয়। প্রয়োজনে টাকা তোলা বন্ধ করে দিব। “মাকছুদ, স্বপনও মুছা আপনার বাসায় গিয়েছিল।
আপনি তাদেরকে ডেকেছিলেন। তারা আপনাকে দুই লক্ষ টাকা দিতে গিয়েছিল। আপনি বলেছিলেন দুই লক্ষ নয় তিন লক্ষ দিতে হবে। এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?” এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এই অভিযোগ সত্য নয়। আমি টাকা নেব কেন? আমিও একজন ব্যবসায়ী। একশত তুলতো এখন দর বেড়েছে এজন্য দুইশত তুলছে। ন্যায় সঙ্গত খরচ তোলা হবে। বাকিটা বন্ধ করে দিব।
কত টাকা মারিং কাটিং হয়েছে তা আমি জানি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এমপি আশু বলেন, মাকছুদ, স্বপন, মুছা আমার বাসায় গিয়েছিল এটা সত্য। তারা ভোমরার বিষয়টি নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলেন। তাদের দাবী ছিল ভোমরার সমস্যা নিয়ে আমি যেন সংসদে কথা বলি। তিনি বলেন, সাতনদী ভাল লেখে শুধু ভোমরার বিষয় কেন? শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকের ড্রাইভারদের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করে থাকে। এটাও সাতনদী লিখুক।