অনলাইন ডেস্ক :
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের নগর এলাকার অগ্নিঝুঁকি কমাতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। শনিবার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন পরামর্শ দেওয়া হয়।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, দেশের নগর এলাকাগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রায়শ অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছে। যার ফলে জীবন ও সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এখান থেকে বাঁচতে সঠিক নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ ভবন নির্মাণ, কার্যকর উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
তারা বলেন, নগরের ভবন, স্থাপনা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা-তার সুষ্ঠু নজরদারি করতে হবে। পাশাপাশি নগর উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কার্যকর করার মাধ্যম থাকলে নগর এলাকায় এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবনের সরেজমিন তদারকি করে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজউকের। অথচ পুরো ঢাকা শহরে ভবনের ব্যবহার অনুমোদন রয়েছে গুটিকয়েক ভবনের। সিটি করপোরেশনও রাজউকের অনুমোদনের দুর্বলতাগুলো বিবেচনায় না রেখেই রেস্টুরেন্ট করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন না নিয়ে কিভাবে এ ব্যবসা চলছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ দায় এড়াতে পারে না। এসব গাফিলতি বলে দিচ্ছে, নগর সংস্থাগুলো তাদের ব্যর্থতা এড়াতে পারে না।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ১৮৭১ সালে গ্রেট শিকাগো ফায়ারে ৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ঘরবাড়িসহ পুড়ে যায়। ৩০০ মানুষ মারা যায়। নড়েচড়ে বসে সেদেশের সরকার। তারপর সেখানে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। প্রতিবছর ঢাকায় ছোট-বড় অনেক অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছে। এরপরও সরকার অগ্নিনিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন হচ্ছে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো বেখেয়াল থাকছে। তাহলে কি আমাদেরকে ‘গ্রেট শিকাগো ফায়ার’ এর মতো বড় অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে?
বিআইপির সহ-সভাপতি সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন বলেন, ভবনের নকশার ত্রুটিগুলো অন্যতম কারণ। ২০১০ সালের নিমতলীর অগ্নিদুর্ঘটনা, ২০১৯ সালের চুড়িহাট্টার অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিইনি। নিমতলীর ঘটনার তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে এ ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়তো আর দেখতে হতো না।
বিআইপির কোষাধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোসলেহ উদ্দীন হাসান বলেন, নগরীকে আমরা দেখছি সোনার ডিম পাড়া হাঁস হিসাবে। এজন্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করে ভবন মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারী সবাই অর্থ উপার্জনকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভবনগুলোর কোনো ধরনের বিবেচনা না করে যেনতেনভাবে ব্যবহার করায় ঝুঁকি বাড়ছে, যার চরম খেসারত দিতে হচ্ছে। অথচ আমরা সেসব দিকে কোনো খেয়াল রাখছি না।
বিআইপির যুগ্ম-সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম বলেন, মানুষের জীবন থেকে অর্থনৈতিক মুনাফার চিন্তা বাদ দিতে হবে। ঢাকার অগ্নিদুর্যোগ কমাতে জননিরাপত্তা ও জনস্বার্থ রক্ষার স্বার্থে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা আবশ্যক। সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির নির্বাহী কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।