নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থায়ী কোন কর্মকর্তা নেই। দীর্ঘদিন ধরে এই পদগুলো শূন্য। এছাড়াও এই উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন অন্য উপজেলার ৮ কর্মকর্তা। ফলে, উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদে নানা কাজে আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি স্ব স্ব অফিসেও জনবল সঙ্কট রয়েছে। এতে সরকারি সেবা পেতে যেমন জনসাধারণের বেগ পেতে হচ্ছে তেমনি অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদেরও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলীতে আনসার ও ভিডিপি অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন চট্টগ্রাম জেলার মোস্তফা ফরিদুল আলম, মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে পটিয়ার স্বপ্নন কুমার দে, খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে সীতাকুণ্ডের শামসুল নাহার, নির্বাচন অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে আনোয়ারার আবু জাফর ছালেক, সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে পটিয়ার মো. শাহিন হাসান, বন বিভাগে অতিরিক্ত দায়িত্বে পটিয়া রেঞ্জার নুরুল আলম হাবিব, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে পটিয়ার শাহনাজ আক্তার এবং সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত আছেন পটিয়ার মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী। এছাড়াও উপজেলা সৃষ্টির শুরু থেকেই উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস, উপজেলা পোস্ট অফিস, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কার্যালয় (বিআরডিবি), উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং এন্ড রিসোর্স সেন্টার ফর এডুকেশন (ব্যানবেইস), উপজেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়, উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার, উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী প্রোগ্রাম কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে।
ফলে এ উপজেলার বাসিন্দারা এসব দপ্তরের সেবা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে অনেক দপ্তরে কোন কর্মকর্তার দেখা নেই। উপজেলা নির্বাচন অফিসারের রুম বন্ধ। জানা গেছে গত সাড়ে ৬ মাস ধরে কর্মকর্তা নেই। পটিয়া উপজেলার নির্বাচন অফিসার দায়িত্ব পালন করলেও এখন আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন অফিসার দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা যায়।
চরপাথরঘাটার এলাকার লেয়াকত আলী জানান, ‘দীর্ঘ ৫ মাস যাবত ঘুরতেছি নির্বাচন অফিসে। অতিরিক্ত কর্মকর্তা হিসেবে পটিয়া উপজেলার নির্বাচন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছেন শুনেছি কিন্তু কখনো তাঁকে কর্ণফুলীতে পাওয়া যায়নি। এখন শুনছি আনোয়ারার।’
জানতে চাইলে বড়উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘বিশেষ করে হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা পদটি শূন্য রয়েছে উপজেলা হবার পর থেকেই। ফলে, ট্রেজারির কাজ করতে নানা সমস্যা হয়। জনবল সঙ্কট কিংবা অবকাঠামোগত কারণে কর্ণফুলীতে অনেক অফিসার এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অন্য উপজেলার কর্মকর্তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও তাঁরা নিয়মিত আসেন না। ফলে, আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরীর মুঠোফোনে কয়েকবার রিং করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য জানা যায়নি। তবে ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছিলেন, উপজেলার অন্যতম সমস্যা ১. নির্বাচনী কর্মকর্তা পটিয়া চার্জে ২. খাদ্য কর্মকর্তা সীতাকুণ্ডে চার্জে ৩. মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পটিয়া চার্জে ৪. সমবায় কর্মকর্তা নেই। সকল কর্মকর্তার খুব তাড়াতাড়ি পদায়ন হবে ইনশাল্লাহ।” কিন্তু এখনো ওসব পদে কোন কর্মকর্তা পদায়ন করা হয়নি।
জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘উপজেলার অনেক দপ্তরে স্থায়ী কর্মকর্তা নেই, সেটা সত্য। আবার অনেক অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন পার্শ্ববর্তী উপজেলার কর্মকর্তারা। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে স্থায়ী কর্মকর্তা না থাকলে কাজে সমস্যা হয়। যে সব অফিসে স্থায়ী কর্মকর্তা নেই, আশা করি শিগগিরই সেসব পদে নতুন পদায়ন হলে এ সঙ্কট কেটে যাবে।’
পূর্ববর্তী পোস্ট