
সচ্চিদানন্দ দে সদয়, আশাশুনি: বিভিন্ন হাটবাজারে অবস্থিত ওষুধের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল’ ওষুধ। উৎপাদনকারী কোম্পানির পক্ষ থেকে এসব ওষুধ বাজারে ছাড়ার আগে ট্রায়ালের উদ্দেশ্যে চিকিৎসকদের দেওয়া হয়। এসব স্যাম্পল ওষুধের ক্ষেত্রে সরকারি রাজস্ব দিতে হয় না। বিনামূল্যে দেওয়া এসব ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। কিন্তু অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন। দীর্ঘ দিন ধরেই আশাশুনির বুধহাটা বাজারের মসজিদের সামনে, করিম সুপার মার্কেট, আশাশুনির সদর, কাদাকাটি, পাইথলী, বড়দল, কালী বাড়ী, কুল্যার মোড়ে অবস্থিত দোকান গুলোতে স্যাম্পল ওষুধের কেনাবেচা চলে আসছে। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে ট্রায়ালে থাকা এসব ওষুধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গরীব রোগিরা। এসব ওষুধের মোড়কের (প্যাকেট) গায়ে লেখা ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল, বিক্রি নিষিদ্ধ’। তবে দোকানিরা এগুলো বিক্রির জন্য কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। ওষুধের মোড়ক পাল্টে বিক্রয়যোগ্য ওষুধের মোড়কে রেখে এসব ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। ফার্মেসি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্যাম্পল ওষুধ বিক্রির একটি চক্র রয়েছে। সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা বেশি ফিজিশিয়ান স্যাম্পল পেয়ে থাকেন। কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে চুক্তি থেকে চিকিৎসকরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ স্যাম্পল পান। চিকিৎসকরা টাকার বিনিময়ে এসব ওষুধ ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেন। সরাসরি চিকিৎসকদের মাধ্যমে বা দালাল চক্রের মাধ্যমে ওষুধগুলো খোলা বাজারে আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশাশুনির এক ফার্মেসি মালিক জানান, চিকিৎসকরা ফোন করে তাদের বাসায় অথবা চেম্বারে ডেকে নেন। এরপর তাদের এসব ওষুধ দেওয়া হয়। আর দালালেরা নিজেরাই চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ এনে দেন। তারা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ দামে ওষুধগুলো কেনেন। অপর একজন ফার্মেসী মালিক বলেন, মোটা টাকার ওষুধ কিনলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ফিজিশিয়ানস স্যাম্পল দিয়ে রেট পুষিয়ে দেয়। এতে বাড়তি মুনাফা হয়। দোকান খরচ ও কর্মচারীদের পারিশ্রমিক পরিশোধে বেগ পেতে হয় না। একজন প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, স্যাম্পল ঔষধ বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য। এসব ওষুধের প্যাকেটেই লেখা থাকে- ‘এগুলো স্যাম্পল। ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ’। কিন্তু অনেক চিকিৎসক এগুলো ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেন। ফার্মেসি মালিকরা তখন এসব ওষুধ পুরনো প্যাকেটে ঢুকিয়ে বিক্রি করেন। এটি অপরাধ। স্যাম্পল ওষুধের ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে অভিযান চালানো উচিত। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন অচিরেই এর অবসান হওয়া জরুরি।