ক্রীড়া ডেস্ক:
১১ ঘণ্টার সফরে বাংলাদেশে রয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। সফরের অংশ হিসেবে বেলা দুইটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্টিনেজ। এসময় প্রধানমন্ত্রীকে আর্জেন্টিনার একটি জার্সিও উপহার দেন এই বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের উন্মাদনা দেখেছে পুরো বিশ্ব। আর্জেন্টিনা দলের প্রত্যেক সদস্য দেখেছেন তাদের নিয়ে ১৭৩২৯ কিলোমিটার দূরের একটি দেশের মানুষ কতটা আবেগে ভাসতে পারে। স্বয়ং লিওনেল মেসিও এটা নিয়ে কথা বলেছেন। সেই ভালোবাসার কৃতজ্ঞতা স্বরুপ মূল সফর কলকাতায় থাকলেও তার আগে বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
মার্টিনেজ বাংলাদেশে আসবেন এটা চাউর হয় গত মাসের শুরুর দিকে। এরপর নানা জল্পনা-কল্পনা পার করে সোমবার ভোর ছয়টায় বাংলাদেশে পৌছান এমি। প্লেন থেকে নামার পর থেকেই বিভিন্ন মুহূর্ত নিজের মুঠোফোনে বন্দী করে রাখতে দেখা যায় তাকে। ভিভিআইপি গেট দিয়ে যখন বেরিয়ে আসেন তখনও দেখা যায় নিজের মোবাইলে ছবি বা ভিডিও করছিলেন।
বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে সোজা চলে যান দ্য ওয়েস্টিন হোটেলে। এমিকে বাংলাদেশে আনার স্পন্সর করেছে ফান্ডেড নেক্সট। হোটেলে যাওয়ার পথে নেক্সটের চীফ স্ট্র্যাটেজিক অফিসার গালিবের করা ভিডিওতে বাংলাদেশকে ‘হাই’ বলেন এমি। সেখানে তাকে জানানো হয় বাংলাদেশে ভক্তরা মার্টিনেজকে ‘বাজপাখি’ নামে ডেকে থাকেন।
গালিব নিজের ফেসবুকে এক পোষ্টে লিখেছেন, ‘এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাত্রাপথে গাড়িতে মার্টিনেজকে বলেছিলাম, বাংলাদেশের মানুষ তোমাকে ‘বাজপাখি’ নামে ডাকে। বিশ্বাস করুন, পুরোটা রাস্তা সে নামটা বলছিল এবং মুখস্থ করার চেষ্টা করছিল। আমাদের বাজ পাখিকে স্বাগত।’
এর আগে হোটেলের উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠে ইনস্টাগ্রাম পোষ্টে ঢাকার রাস্তার ছবি দিয়ে মার্টিনেজ ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ।’ সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা ও ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন।
এরপর হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন এমি। হোটেলের লিফটে ওঠার সময় তার হাতে এক খুদে ভক্তের চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এমির প্রিয় রঙ কি! উত্তরে এমি বলেন সাদা ও নীল । এরপর নেক্সটের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
সেখানে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা উপস্থিত ছিলেন। এমি মাশরাফির ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে ছবি তোলেন, অটোগ্রাফ দেন। একই সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানসহ মার্টিনেজের সঙ্গে ছবি তোলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও।
এ সময় এমির ইন্টারভিউ করেন জুনায়েদ আহমেদ পলক। ইন্টারভিউয়ের এক পর্যায়ে একটি ট্যাটু দেখান এমি। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে একদম শেষ মুহূর্তে সেই ঐতিহাসিক সেভের জায়গাটাতে বিশ্বকাপ ট্যাটু করিয়েছেন তিনি। ইন্টারভিউ শেষে মার্টিনেজকে একটি পাটের আশ দিয়ে তৈরি নৌকা, একটি বাজপাখি ও একটি বঙ্গবন্ধুর বই উপহার দেওয়া হয়। পলক জানান, বাজপাখি নামও খুবই পছন্দ করেছেন মার্টিনেজ।
পলক বলেন, ‘মার্টিনেজকে বাজপাখি উপহার দিয়েছে ফান্ডেড নেক্সট। এতে সে খুবই খুশি হয়েছে। এছাড়া পাটের তৌরি নৌকা ও বঙ্গবন্ধুর বই তাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। মার্টিনেজ বাজপাখি নামটি বেশ পছন্দ করেছে। সে নিজেও বেশ কয়েকবার এটি বলেছে।’
ফান্ডেড নেক্সটের অনুষ্ঠান শেষে নিজেকে বাংলাদেশের ‘বাজপাখি’ বলে আখ্যা দেন মার্টিনেজ। ফান্ডেড নেক্সটের চীফ স্ট্র্যাটেজিক অফিসার সৈয়দ আব্দুল্লাহ গালিব নিজের ফেসবুকে মার্টিনেজের একটি ভিডিও শেয়ার করেন। যেখানে দেখা যায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান বিশ্বকাপজীয় এই তারকা। মার্টিনেজ বলেন, ‘হাই বাংলাদেশ। ধন্যবাদ সাপোর্ট করার জন্য। আমি বাংলাদেশের বাজপাখি।’
এরপর এমিকে নিয়ে যাওয়া হয় করোনা পরীক্ষা করাতে। এরপর সফরের অংশ হিসেবে বেলা দুইটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্টিনেজ। এসময় প্রধানমন্ত্রীকে আর্জেন্টিনার একটি জার্সিও উপহার দেন এই বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক।
সাক্ষাৎ শেষে আজ বিকালেই কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে মার্টিনেজের। সেখানে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
তবে মার্টিনেজ বাংলাদেশে আসলেও দেখা হয়নি দেশের সাধারণ ভক্তদের সঙ্গে। এ নিয়ে ভক্তদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এ বিষয়ে নেক্সটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মার্টিনেজ তার সফরের সময় এই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে ফটোশুট, শর্ট ইন্টারভিউর মতো কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন।