
জাতীয় ডেস্ক:
হজ প্যাকেজের খরচ কমানোর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া হজের ট্যাক্স সরকার চাইলে কমাতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
বুধবার (১৫ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এছাড়া ‘হজ প্যাকেজ ২০২৩’ সংশোধন করে পুনরায় নির্ধারণের বিষয়ে করা রিটের শুনানি এক সপ্তাহর জন্য মুলতবি করা হয়।
হাইকোর্ট বলেন, আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষ মধ্যবিত্ত। মুসলিম হিসেবে তাদের সবারই ইচ্ছা থাকে জীবনে একবার হলেও হজ করার।
এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের পক্ষে যতোটুকু সম্ভব হজ প্যাকেজের খরচ কমানোর জন্য কথা বলতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মোহাম্মদ মহসিন। একই সঙ্গে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী আশরাফ-উজ-জামান। এছাড়া সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট আজিম উদ্দিন পাটোয়ারী, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ সাইদুর রহমান, অ্যাডভোকেট ইয়াছিন আলফাজ, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আওলাদ হোসেন।
অ্যাডভোকেট আজিম উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী বলেন, সচরাচর যে ভাড়া নেওয়া হয়, বাস্তবে হজের প্লেন ভাড়া তার চেয়ে বেশি। এছাড়া সৌদি আরবে হাজিদের বাড়ি ভাড়াও ধরা হয়েছে বেশি। হজের মোয়াল্লেম ফিসহ সৌদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত চার্জের চেয়ে বেশি ধরা হয়েছে। এছাড়া হজযাত্রীদের জন্য মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সরকার যে ভর্তুকি (সাবসেডি) দিয়ে হাজিদের জন্য খরচ ধরেছে, সেখানে আমাদের হজযাত্রীদের জন্য তার চেয়েও বেশি অর্থ ধরা হয়েছে।
এসময় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন বলেন, ডলার এবং সৌদি রিয়ালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে বাধ্য হয়ে হজ প্যাকেজের খরচ নির্ধারণ করতে হয়েছে, তাই টাকা বেশি মনে হচ্ছে। হাজিদের নিয়ে প্লেন সৌদি যাওয়ার পর সেখান থেকে ফ্লাইটগুলো খালি আসে। আবার ফিরিয়ে আনার সময় প্লেন খালি গিয়ে হাজিদের আনতে যায়।
এর আগে ১২ মার্চ হজের প্যাকেজ কমিয়ে পুনরায় প্যাকেজ ঘোষণা করতে রিট করা হয়। রিটে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও যে কোনো এয়ারলাইন্সে টিকিট কেটে হজে যাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ-জামান জনস্বার্থে এ রিট করেন। রিটে বিবাদী করা হয় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের। ঘোষিত হজ প্যাকেজের খরচ কমিয়ে চার লাখ টাকা নির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান আইনজীবী।
১ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয় এক স্মারকে ‘হজ প্যাকেজ ২০২৩’ ঘোষণা করে। তাতে হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর এ খরচ কমিয়ে চার লাখ টাকার মধ্যে পুনর্নির্ধারণ করতে অনুরোধ জানিয়ে ৬ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয় বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ-জামান।
নোটিশে ওই স্মারক সংশোধন বা পরিবর্তন করে চার লাখ টাকার মধ্যে হজ প্যাকেজ সাতদিনের মধ্যে পুনর্নির্ধারণ করতে অনুরোধ জানানো হয়। এতে কোনো সাড়া না পেয়ে ১২ মার্চ করা হয় রিট।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৭ জুন পবিত্র হজ হতে পারে। এ উপলক্ষে গত মাসে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় হজ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ করতে যেতে পারবেন। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ ব্যক্তি হজে যেতে পারবেন।