
জাতীয় ডেস্ক:
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সাত দিন পর প্রেস ব্রিফিং করেছেন পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার। বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) দুপুরে পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা তার অফিস কক্ষে প্রেস ব্রিফিং করেন। শুরুতেই স্পর্শকাতর কোনও প্রশ্ন না করতে সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আহমদিয়াদের ওপর হামলা চালিয়েছে প্রশিক্ষিত একটি দল। এটি ছিল পরিকল্পিত। অগ্নিসংযোগের জন্য তাদের কাছে ছিল গান পাউডার ও পেট্রোল।’
হামলার পর প্রাণহানি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্বপালন করেছে বলে দাবি করেন সিরাজুল হুদা। তিনি বলেন, ‘তাৎক্ষণিক অ্যাকশনে গেলে প্রাণহানি বাড়তো এবং সারাদেশে এই ঘটনার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তো। সালানা জলসায় আট হাজারের বেশি আহমদিয়া সদস্য অবস্থান করেছিলেন। চার পাশ থেকে সাত-আট হাজার মানুষ হামলা চালায়। হামলার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ১৭০, র্যাবের ৬৪ এবং ৫ প্লাটুন বিজিবির সদস্য দায়িত্বপালন করেছেন। এজন্য পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল।’
হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩টি মামলা করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর থানায় ১১টি ও বোদা থানায় দুটি মামলা হয়েছে। ১৩টি মামলায় এ পর্যন্ত ১৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৩টি মামলার মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইনে চারটি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেছে পুলিশ। অন্য মামলাগুলো ক্ষতিগ্রস্তরা করেছেন। শতাধিক ব্যক্তিকে এজাহারভুক্ত করে ১০-১১ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে এসব মামলার আসামি করা হয়েছে। আরও মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।’
যারা হামলায় জড়িত তারা এখন আতঙ্কে থাকবে উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। আমাদের কাছে ঘটনার পর্যাপ্ত ছবি, ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ আছে। এসব যাচাই-বাছাই করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। নিরপরাধ কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
পুলিশের কঠোর তৎপরতার কারণে হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।’
সারাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহলের উসকানিতে পঞ্চগড়ে হামলা হয়েছে বলে দাবি পুলিশ সুপার সিরাজুল হুদার। তিনি বলেন, ‘হামলায় পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য আহত হয়েছেন। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ট্রাফিক পুলিশ বক্স। হামলাকারীরা একজন বৃদ্ধ পুলিশ সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। তবে বর্তমানে পঞ্চগড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এসএম শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রাকিবুল ইসলাম এবং সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞাসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, পঞ্চগড় শহরের আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া জামাতের তিন দিনব্যাপী জলসা বন্ধের দাবিতে শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে করতোয়া সেতুর দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের থামিয়ে দেয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর চৌরঙ্গী মোড়সংলগ্ন সিনেমা হল সড়ক থেকে একদল বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে এসে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। ধাওয়া দিলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এরপর বিক্ষোভকারীরা আহম্মদনগর এলাকায় গিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে হামলা ও সংঘর্ষ। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব। এ ঘটনায় দুজন নিহত ও পুলিশসহ শতাধিক মানুষজন আহত হন।