
জাতীয় ডেস্ক:
খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে পারা না–পারার প্রশ্নে কয়েক দিন ধরে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী যেসব কথা বলছেন, এসব বক্তব্যের ব্যাপারে বিএনপি আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি দলের এ অবস্থানের কথা সাংবাদিকদের জানান।
তবে এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বিএনপি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। এটি নতুন কোনো জাল কি না, সেটি বুঝতে চাইছে।
খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন—সরকারি দলের মন্ত্রীদের এ বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এ রকম একটা প্রস্তাব যখন আসে, তখন আমি বলব বিএনপি বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বেগম জিয়া ইজ এ প্রোডাক্ট অব পলিটিকস। উনি পলিটিকস করবেন না, এটা তো কখনোই হতে পারে না। কিন্তু এটা বলে নতুন করে আরও কোনো জাল বিছানো হচ্ছে কি না, আমার মনে হচ্ছে বিএনপি এটা বুঝতে চাইছে এবং বোঝার এই চেষ্টাটা ঠিক আছে তাদের।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘তারপর যখন বুঝে ক্লিয়ার হবেন, তখন ওনারা তো বলবেন, আমরাও বলব জোটের নেত্রী হিসেবে উনি (খালেদা জিয়া) সামনে আসুক।’
‘ব্যাপারটি একেবারেই বিএনপির সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান। কিন্তু তিনি যে বিএনপির বিষয় নিয়ে কথা বলছেন, সে ব্যাপারেও ব্যাখ্যা দেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, যেহেতু তাঁরা একসঙ্গে আন্দোলন করছেন এবং সুখ–দুঃখের অনেক কিছু শেয়ার করেন, সে কারণে তিনি কিছু কথা বললেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৪-১৫ বছর ধরে একটা জবরদখলকারী, মতলববাজ দল হয়ে গেছে। একটু আগে টুকু ভাই (বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ) বললেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন যে তাঁকে (তারেক রহমান) ঠিক হতে বলেন, না হয় তাঁর মাকে (খালেদা জিয়া) আবার জেলে পাঠিয়ে দেব। যেহেতু এইটা কোনো আইনি পদক্ষেপ নয়। এটা একটা নির্বাহী আদেশ ছিল তাঁকে (খালেদা জিয়া) রিলিজ করার। তার মানে তাদের হাতে সেটা (ক্ষমতা) আছে। জেলে পাঠিয়ে দেওয়ার এখতিয়ার আছে এখন পর্যন্ত।’
এ বিষয়ে কথা বলেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী ও রাষ্ট্রচিন্তার হাসনাত কাইয়ুম। তিনি ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বলেন, ওনারা যদি বোঝেন যে ওনার (খালেদা জিয়া) রাজনীতি করার অধিকার আছে। সে অধিকার তো জেলে থাকলেও থাকে। জেলে থেকে নির্বাচনও করতে পারেন। এখানে আসলে তারা (সরকার) একধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করার চেষ্টা করছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রথম প্রশ্ন করেন বিএনপির নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদকে। প্রশ্নটি ছিল এমন, সরকারি দলের একজন সংসদে বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন। এখন বলা হচ্ছে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। একটি দল থেকেই বারবার এসব বলা হচ্ছে। হঠাৎ করে এ প্রসঙ্গটা কেন এল, আপনারা কী মনে করেন।
জবাবে ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘এই যে হঠাৎ করে বলা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। এ কথা বলার আগে যেসব কথাবার্তা বলেছে ওরা, সেগুলোকে এক করেন। বুঝবেন, ওরা কী মীন (বোঝাতে) করতেছে। এটা নিয়ে আমরা খুব ইন্টারেস্টেড না। এটাকে আমরা অবান্তর মনে করি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করলে জেলে পাঠিয়ে দেব আবার। আবার তাঁরই আইনমন্ত্রী বলছেন, রাজনীতি করতে মানা নেই। আমরা কোনটা ধরব। ওরা কী বলে ওরাই জানে। বিএনপি এই বক্তব্য নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন না।’
এদিকে, এই প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা পর্যায়ে যুগপৎ পদযাত্রা কর্মসূচি হবে। যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা এবং পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেভাবে ছাত্রীদের নির্যাতন-অত্যাচার করা হচ্ছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের প্রতিবাদে সারা দেশে যুগপৎ কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক প্রমুখ।