হাবিবুর রহমান: সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তালা সদর ইউনিয়নের ভূমি সহকারি কর্মকর্তা আনিছুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে কলারোয়ার বামনখালীতে বদলী করা হয়, তারস্থলাভিষিক্ত হবে বামনখালীর নায়েব গাজী আবু হেলাল।
গত বুধবার এ অভিযোগ দায়ের করেন তালা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক এস এম নজরুল ইসলাম ও ঘুষ প্রদানে বাধ্য হওয়া আরও ছয়জন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তালা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তার পিতার নামীয় জমির খাজনা পরিশোধ করতে গেলে ২/৩মাস ঘুরিয়ে মারফতি দাখিলা দেয়া যাবেনা মিউটেশন করতে হবে বলে জানায় নায়েব আনিছুর। একই ভাবে ফন্দি ফিকির ও হয়রানি করে ফুলমিয়া, সুমিত কুমার দেবনাথ, আব্দুল জব্বার, মোস্তাফিজুর রহমান, ইনছার আলীসহ একাধীক ব্যক্তির কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে।
তালা সদর ইউনিয়নের ভূমি সহকারি কর্মকর্তা নায়েব আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, তহশীল অফিসে রক্ষিত তিনজন দালালের মাধ্যমে নানান কৌশলে ঘুষ গ্রহণ, ভূমি মালিকদের খাজনা দিতে আসলে চরম হয়রানী ও অতিরিক্ত উৎকোচ গ্রহন সহ উদ্ধ্যতপূর্ণ আচরনে অতিষ্ট ইউনিয়নবাসী। জরুরী ভিত্তিতে নায়েব আনিছুরকে প্রত্যাহার পূর্বক তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ও গোপনে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন আবেদন কারীরা।
উল্লেখ্য, তালা সদররের নায়েব আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে সেবা গ্রহণকারী জনগনকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তিনি জনগনের সাথে এমন উদ্ধ্যর্তপূর্ণ আচরন করেন মনে হয় জমির মালিকরা তার বাড়ির কর্মচারী। এমন আচরনে তার প্রতি জনগন চরম ক্ষুদ্ধ।
ফুলমিয়া সরদার জানান, তিনি তার আত্মীয়ের একটি জমির খাজনা দিতে গেলে দাখিলায় ৫শতটাকা কিন্তু দিতে হবে ৫,০০০টাকা। না দিলে তিনি খাজনার রশিদ দিবেন না। জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করে দাখিলা দেন।
মাঝিয়ারা গ্রামের সুুনিল দেব ও দুলালদেব নামের দুই ব্যক্তির জমির খাজনা দিতে গেলে খাজনার দাখিলায় ওঠে ৬ হাজার টাকা। কিন্তু নায়েবকে পরিশোধ করতে হয় ১৯ হাজার টাকা। টাকা না দিলে হিন্দু সম্প্রদায়ের এনিমি প্রপার্টি, আর টাকা দিলে সবঠিক।
তালার খাজরা গ্রামের সাবেক মেম্বার মৃত. মলি আবুল খায়ের এর কন্যা নাজু’র জমি জমা সংক্রান্ত একটি ঝামেলা নিয়ে নায়েব আনিছুরের নিকট একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করার জন্য একটি চিঠি আসে। সে সূত্রে তার নিকট থেকে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। ঘুষ না দিলে রিপোর্ট দেননি তিনি। খাজনা দিতে গেলে তিনি বলেন, সরকারি দাখিলা কাটা যাবে না। সরকারি নির্দেশ মিউটেশন করতে হবে। মিউটেশন ফি বাবদ নায়েব ৬ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। অথচ মিউটেশন করতে খরচ হয় ১১৫০টাকা।
শিবপুর গ্রামের কেরামত আলীর পুত্র মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তার পিতার নামীয় সম্পত্তির খাজনা দিতে গেলে নায়েব আনিছুর তাকে জানান মারফত দাখিলা কাটা যাবে না। তার জরুরী প্রয়োজনে দাখিলা লাগবে মাঝিয়ারা মৌজার দাগ নং ১৮০৫ ও ১৮০৬ জমির পরিমান দালিখা অনুয়ায়ি ১১শতক। জমির খাজনা দেখানো হয়েছে দাখিলায় ১৪২৯ সনের জন্য ৪৬টাকা কিন্তু তার কাছ থেকে ৪হাজার টাকা আদায় করা হয়। ঘুষ নেওয়ার পর ১৮/০৯/২০২২ তারিখে আনিছুর নায়েব স্বাক্ষরিত মারফতি দাখিলা দেওয়া হয়।
ভায়ড়া গ্রামের শহিদুল্যাহ শেখ এর নামীয় দাগ নং ১৬৬৭ খতিয়ান নং ৩২৪ জমির পরিমান ৭.৫০শতক দাখিলায় টাকা দেখান হয়েছে ১২৪ টাকার মারফতি চেক। তার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ৫হাজার টাকা। নূর ইসলাম জানান, নায়েব আনিছুর রহমান তার জমির খাজনার জন্য মোটা অংকের টাকা নিয়েছে । কিন্তু পরিমান তিনি বলতে রাজী হননি। কারণ তাহলে তার জমির মিউটেশন দাখিলা আটকে দেয়া হবে। শাহাপুর গ্রামের ইনছার আলী ১৭০খতিয়ানের ৭৬১,৭৬২ দাগের ৮২ শতক জমির মধ্যে ২১ শতক জমির খাজনা দিতে যান। তার খাজনা দাখিলায় দেখানো হয়েছে ৯২০ টাকা কিন্তু তার কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা আদায় করা হয়। তবে সেটিও মারফতি চেক।
শিবপুর গ্রামের আরশাদ আলী খাঁ তার পৈত্রিক সম্পত্তির ৬ শতক জমির খাজনা দিতে গেলে নায়েব আনিছুর খাজনা নিয়ে দাখিলা দেয়নি। তাকে চরম হয়রানি করা হছে। খাজনা দাখিলা না পাওয়ায় ৬ শতক জমিরর টাকা পরিশোধ করলেও দাখিলা না পাওয়ায় অদ্যাবধি জমির রেজিঃ করতে পারেনি। টাকা দিলে মারফতি চেক দেওয়া হবে টাকা না দিলে মিউটেশন করা লাগবে। তাছাড়া দাখিলা নেই বলে কোন কোন হাকিয়ে দেন। তার অফিসের দালার পোষা আছে আটারই গ্রামের আব্দুল গফুর, সুজনশাহা গ্রামের হাবিবুর রহমান, কপিলমুনি এলাকার আলতাফ হোসেনসহ অনেকে। এই দালালদের মাধ্যমে ঘুষের লেনদেন করে দালালদের সংকেত পেলে তিনি শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও কাজ করে দেন।