
বিশেষ প্রতিবেদক, তালা: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তালা সদর ইউপি নির্বাচন গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটের আগের রাতে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের হাতুড়ি পেটা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমিক চলেছে। ভোটগ্রহণের দিন তিনটি ভোটকেন্দ্র দখল ঘের লুট, বাড়িঘর ভাংচুর নেতা কর্মীদের হাতুড়ী পেটা করে মারাত্মক আহতসহ গোটা ইউনিয়নজুড়ে ভোটাদের জিম্মি করে নিয়ে একতরফা ভোগ গ্রহনের পরও জাতীয় পার্টির প্রার্থী এস.এম.নজরুল ইসলাম লাঙ্গল প্রতিকে ৭১১৯ ভোট, হাইব্রিড বিতর্র্কীত যুবলীগ নেতা সরদার জাকির হোসেন নৌকা প্রতিকে ৭৮৮১ ভোট দেখিয়ে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী এস.এম. মশিয়ার রহমানকে আনারস প্রতিকে দেখানো হয়েছে ৩১২৪ ভোট।
২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত তালা ইউনিয়নে সফলতার সাথে দুর্নীতিমুক্ত থেকে তালার বন্যার পানি নিস্কাশনে ডুমুরিয়া শালতা নদী খনন করে তালার জলাবদ্ধতা নিরসন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এস.এম নজরুল ইসলাম। ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে ইউনিয়ন পরিষদের বাউন্ডারী ওয়াল ও দৃষ্টিনন্দন গেট নির্মাণ করে তালা বাসীকে তাক লাগিয়ে দেওয়া, পানি নিষ্কাসনের কালভার্ট, বাজারের চাঁদনী, ইটের সলিং,পানির ট্যাংক, পিছের রাস্তা ইটের রাস্তা অবহেলিত খানপুর গ্রামে বিদ্যুতায়ন ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন সহ মানুষের বিপদে আপদে দলমতের উর্দ্ধে থেকে জনকল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করার জন্য দলমত নির্বিশেষে জনগন ভালোবেসে তাকে ভোট দেয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও সরদার জাকির হোসেনকে কারচুপির মাধ্যমে বিতর্কিত ফলাফলের দ্বারা নির্বাচিত ঘোষনা করা হয়। যে বিষয়টি সকল শ্রেণিপেশার মানুষ অবগত রয়েছেন।
তালা ইউনিয়নে গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচনে যেভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়, কেন্দ্র দখল, মানুষের হাতুড়ি পেটা করা হয়েছে সেটি ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীও এমন অত্যাচার নির্যাতন তালায় চালায়নি। এসবের পরেও ৩টি কেন্দ্র দখল ও ভায়ড়া আগলঝাড়া ভোট কেন্দ্রে ৯টি বুথে প্রকৃত ফলাফল প্রকাশ করলে লাঙ্গল বিজয়ী হয়। তাই ঐ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রেজাল্টশীট সম্পূর্ণ গোপন করে এজেন্টদের জিম্মি করে বিকাল ৪ ঘটিকায় ভোট গ্রহন সম্পন্ন হলেও সন্ধ্যা ৭ টায় মনগড়া একটি রেজাল্টশীট তৈরী করে কেন্দ্রের মধ্যে দরজা দিয়ে চুপ করে বসে থাকেন। সন্ধ্যার ৭টার দিকে সরদার জাকিরের এক নেতা জাতীয় যুব সংহতি তালা উপজেলার বহিস্কৃত সভাপতি সরদার কবির আহমেদ এর নেতৃত্বে ৮/১০টি মটর সাইকেলে লোকজন উক্ত কেন্দ্রে প্রবেশ করার পর তিনি মানুসিক শক্তি ফিরে পান এবং মনগড়া রেজাল্ট প্রকাশ করে চলে যান। এই ঘটনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধান নির্বাচন কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স, মহাপরিচালক, র্যাব প্রধান কার্যালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক, খুলনা রেঞ্জ, খুলনা, জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা, জেলা পুলিশ সুপার, সাতক্ষীরা, জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা নির্বাচন অফিসার, মহাপরিচালক ডিজিএফআই, মহাপরিচালক, এন.এস.আই, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ পুনঃ নির্বাচনের দাবীতে ৩টি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল পূর্বক পুনঃ নির্বাচনের দাবী জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
নির্বাচন সমাপ্তের পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর তালার শাহাপুর বাজারে বারুইহাটী গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোমিন মোড়লের ছেলে আবুল হোসেন মোড়লকে (৩৮) হত্যার উদ্দেশ্যে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়। মৃতু ভেবে উল্লাস করতে করতে চলে যায় সরকার জাকিরের নেতেৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী। তার ব্যবহারিত মোটর সাইকের ভাংচুর করে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। মোটর সাইকেলটি এখনো থানা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এ ঘটনায় আবুল হোসেন মোড়লের স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদী হয়ে তালা থানায় সরদার জাকির হোসেনকে ১নং আসামী করে ৪২ জনের নাম উল্লেখসহ মামলা দায়ের করেন। তালা থানার মামলা নং-১০, তারিখ: ২২/০৯/২০২১ইং। আবুল হোসেন এখনও অসুস্থ অবস্থায় পঙ্গুত্বভাবে দিনাতিপাত করছেন।
তাছাড়া ভোটের পরদিন মুড়াকলিয়া গ্রামের মোক্তার আলীর স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে মারপিট করে জখম করে এবং তার বাড়িঘর ভেঙ্গে দেয়। লাঙ্গল প্রতিকে ভোট দেওয়ার অপরাধে খানপুর গ্রামের সামাদ সরদারের মৎস্যঘের কেটে দিয়ে মাছ লুট করে দেয়। মুড়াকলিয়া গ্রামের মোবারক সরদারের স্ত্রীকে পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে। দিনব্যাপী তান্ডব চালানোর পর সন্ধ্যায় সাংবাদিক নজরুল ইসলামের বাড়ীর সামনে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করা হয়। ভোটের আগের রাতে জেয়ালানলতা গ্রামের হাসান আলীকে কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। ভোটগ্রহণের দিন শিবপুর গামের আশরাফ আলী খাঁর মাথায় কোপ মেরে আহত করে।
তিনটি কেন্দ্রের পুনঃ নির্বাচন ও সন্ত্রাসী সরদার জাকির হোসেনসহ সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবীতে ২৫ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে ইউনিয়নের হাজার হাজার নারী পুরুষ মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। নির্বাচনের পর সহিংসতা মামলায় সরদার জাকির পলাতক থাকা অবস্থায় ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ ও দলীয় লোকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরে মাসিক ৩০ কেজি চাউলের কার্ড “শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ” প্রকল্পের প্রায় ১৫০০ কার্ড উত্তোলন করেন। কার্ড উত্তোলনকারীরা কার্ড গ্রহনকালে বলেন, লাঙ্গলে প্রতিকে ভোট দেওয়ার কারণে তোমাদের কার্ড থাকবে না। এই বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ দেওয়া হয়। তালা উপজেলার নির্বাহী অফিসার অভিযোগ প্রাপ্তির পরই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গত ১৭ অক্টোবর হতদরিদ্রদের মাঝে কোন প্রকার পরিবর্তন ছাড়াই পূর্ব কার্ডধারীদের মাঝে চাউল বিতরন শুরু করা হয়েছে যা চলমান রয়েছে।
সরদার জাকির হোসেন নির্বাচন পরবর্তী হামলা সহিংসতা মামলা থেকে ১৪ অক্টোবর উচ্চ আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে পুনরায় তান্ডব শুরু করেন। ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন শেষ হওয়ার পর প্রায় এক মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। গত ১৫ অক্টোবর তালা সদরের মাঝিয়াড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কাপড় দিয়ে ঘেরা বাশ দিয়ে তৈরী নৌকার দুই মাথায় পরিকল্পিতভাবে আংশিক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি উদ্দেশ্যে প্রণোদিত মামলা তৈরীর জন্য রাতের আধারে নিন্দনীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছে। তার পক্ষীয় সমর্থকদের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করেছেন সরদার জাকির। ১৭ অক্টোবর হতদরিদ্রদের চাউল বিতরণকালে গরীব মানুষরা হাজির হলে তাদের সামনে একটি ব্যানার ঝুঁলিয়ে দিয়ে নৌকা পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ শিরোনামে মানবন্ধন করে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা। যা সম্পূর্ণরুপে পরিকল্পিত ও সাজানো নাটক। উদ্দেশ্য নজরুল ইসলামসহ তার পক্ষীয় সমর্থকদের বেকায়দায় ফেলানো।
বিগত এমপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী এ্যাড: মোস্তফা লুৎফুল্যাহ কে বিজয়ী করতে জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত এর সমর্থনে নৌকার পক্ষে কাজ করেন জাতীয় পার্টির তালা সভাপতি নজরুল ইলাম। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ঘোষ সনৎ কুমারের পক্ষেও নেতাকর্মী নিয়ে কাজ করেন।
তালায় অশান্তি সৃষ্টিকারী গডফদারের নেতৃত্বে নৌকা প্রতিককে পরাজিত করার জন্য বর্তমান চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেনসহ এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অধিকাংশ সদস্য নৌকাকে পরাজিত করার জন্য আনারস প্রতীকের সমর্থনে কাজ করেন। জাতীয় পার্টির পুনঃ সমর্থনের কারণে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ঘোষ সনৎ কুমারকে পরাজিত করা যাচ্ছেনা উপলদ্ধি করে ভোটের তিনদিন আগে গডফাদারের ইন্দনে সরদার জাকির হোসেনের নেতেৃত্বে ১৫/২০টি মোটর সাইকেল মাঝিয়াড়া বাজারে রাত ৯টার দিকে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে নজরুল ইসলামকে হাতুড়ী পেটা করার উদ্দেশ্যে ঘিরে ফেলে। হাতুড়ী উঁচু করে মারতে উদ্যত হয়ে বলে, তুই জাতীয় পার্টি করিস তোর মটর সাইকেলে নৌকা প্রতীক কেন ? কেন্দ্র থেকে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সাথে রয়েছে আমাদের দলীয় প্রার্থী না থাকায় সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। ভোটের পরে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায় এই সন্ত্রাসী বাহিনী। ঘটনাটি বাজারের শত শত মানুষের সামনেই ঘটে।
বর্তমানে নৌকা পুড়িয়েছে মর্মে কথিত অভিযোগ নিয়ে তালা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন কথিত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস। যিনি প্রথমে জাতীয় পার্টি তারপর বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এখন আওয়াম লীগ করছেন। এই কথিত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বিশ^াস তালা উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে আনারস প্রতীকে নির্বাচন করেছিল। নৌকা বিরোধী লোকরাই এখন নৌকা পোড়ানোর নাটক সাজিয়ে তালা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
তালা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও তালা ইউনিয়নে নির্বাচনের লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী এস.এম নজরুল ইসলাম বলেন, একটি শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে সন্ত্রাসী সরদার জাকির ও তার পেটুয়া বাহিনী। আমার কোন নেতাকর্মী কখনো কোন প্রার্থীর পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুন বা কোন প্রতিকে কখনো হাত দেয়নি আর ভবিষ্যতেও দেবে না। বরং এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ভোটের সময় ইউনিয়ন জুড়ে আমার ব্যানার ফেস্টুনগুলো ছিড়েছিল। এটি নিকৃষ্ট মানুসিকতার পরিচয় ছাড়া কিছুই নয়। ভোটের এক মাস পরে এখন নিজেরাই পরিকল্পিতভাবে একটি বাশ ও কাপড়ের তৈরী নৌকার দুই মাথা পুড়িয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে আমাকেসহ আমার কর্মী সমর্থকদের মামলা দিয়ে হয়রারি করতে চায়। আমি ঘটনাটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। নাটকীয়তায় পড়ে যেন কোন নিরীহ মানুষ হয়রানির স্বীকার না হয় সেই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।