
হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ থেকে: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় ধাপের তপশীল এখনো নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেনি তবে আজ ১৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার তৃতীয় ধাপের তফসিল ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নির্বাচন এবং দলীয় কোন্দল মেটাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বরাবর ইউনিয়ন পর্যায়ের তালিকা তৈরি করে পাঠানোর কাজ আগাম প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে বিশেষ বর্ধিত সভার মাধ্যমে সমর্থন কোথাও কোথাও কাউন্সিলারদের ভোটের মাধ্যমে যারা যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তাদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা কার্যালয় পাঠানো হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে গত ১০ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকাল ৫ টা হতে গভীর রাত পযন্ত সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন আ’লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকার কাজ জীবন বৃতান্ত সহ সম্পন্ন করে ফেলেছে। থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার নরিম আলী মুন্সী এবং সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোট নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়। ১২টি ইউনিয়ন হতে ৬৪ জন প্রার্থী এবার নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় জীবন বৃত্তান্ত দিয়ে আবেদন করেছে এবং তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বাদ যায়নি বিএনপি-জামায়াত শিবিরের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত এবং ২০১৩ সালে সহিংসতার সময় অর্থ যোগানদাতারাও। তারাও এই সুযোগে তালিকার নাম অন্তর্ভুক্তি করে উপজেলা জুড়ে টক অবদি টাউনে পরিণত হয়েছে। তারাই এখন নৌকায় উঠার জন্য বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। বাকি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে তৃতীয় ধাপের তফসিল ঘোষণার পর পর্যায়ক্রমে এই তালিকা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জনমত জরিপের ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ পাবে। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে যতই অঙ্গীকারনামা নিয়ে থাকুক না কেন মনোনয়ন না পেলে ঠিকই বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঠে দেখা যেতে পারে। তবে ইতিমধ্যে যারা ১২টি ইউনিয়নের নৌকার মাঝি হওয়ার জন্য তালিকায় নাম লিখিয়েছেন তারা হলেন ০১ নং কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক নূর আহমেদ সুরুজ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তপন কুমার রায়, মহিলা যুবলীগ নেত্রী ইউপি সদস্য শ্যামলী অধিকারী এবং সেলিম আহমেদ। ০২নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদ বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল হক সরদার, বর্তমান নৌকার চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দিন, বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মৃণাল মন্ডল, উপজেলার সাবেক তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আবু তালেব সরদার, বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি ইফতেখারুল ইসলাম সুমন, বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহ আলম ঢালী, যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন, বাবলু সরদার এবং ২০১৩ সালের সহিংসতাকারী জামায়াতের ইউপি সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম। ০৩নং চাম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদের চম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকার বর্তমান চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গায়েন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পরান মন্ডল এবং ২০১৩ সালের সহিংসতায় অর্থ যোগানদাতা বিএনপি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোড়ল। ০৪ নং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোবিন্দ মন্ডল, নৌকার বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি সহ-সভাপতি প্রশান্ত সরকার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস সরদার, যুবলীগ নেতা শরিফ মোস্তফা সোহাগ, এম আসিফ আকবর, যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান, ইউপি সদস্য মিলন হোসেন। ০৫নং কুশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে থানা আ’লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এপিপি এডভোকেট মোজাহার হোসেন কান্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ ওয়াহেদুজ্জামানের পুত্র শেখ আবুল কাশেম, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শেখ নুরুজ্জামান জামু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জি এম সিরাজুল ইসলাম। ০৬নং নলতা ইউনিয়ন পরিষদ নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন এবং হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম তুফান। ০৭নং তারালী ইউনিয়ন পরিষদে থানা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান নৌকার চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট, সাবেক উপজেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি প্রভাষক শামসুল হুদা কবির, তারালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, সাতক্ষীরা ডে নাইট কলেজের অধ্যক্ষ একেএম শফিকুজ্জামান খোকন। ০৮নং ভাড়াশিমলা ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর সভাপতি আব্দুল গফুর, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম নাঈম, থানা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক মাস্টার শফিকুল ইসলাম এবং ওয়ার্ড সভাপতি সাইফুল ইসলাম। ০৯ নং মথুরেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পুত্র ফিরোজ আহমেদ, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম, জিএম মহিবুল্লাহ, থানা যুবলীগের একাংশের সভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাবেক সেনাসদস্য শেখ আব্দুল্লাহ এবং গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে পরাজিত প্রার্থী শেখ ফিরোজ কবিরর কাজল। ১০ নং ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সজল মুখার্জী, সাধারণ সম্পাদক নাজমুস শাহাদাত রাজা, থানা আ’লীগের প্রস্তাবিত কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট হাবিব ফেরদৌস শিমুল, থানা মুক্তিযুদ্ধ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এম গোলাম ফারুক, বর্তমান নৌকার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জি এম শওকত হোসেন। ১১ নং রতনপুর ইউনিয়ন পরিষদে রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান নৌকার চেয়ারম্যান আশরাফুল হোসেন খোকন, তার ভাই আলিম আল রাজ রাজি, রাজবাড়ী কাটুনিয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাব, রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন, নাসির উদ্দিন সরদার, সাবেক যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম এবং সেলিম আহমেদ। ১২ নং মৌতলা ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল চন্দ্র ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাঈদ মেহেদী এর বড় ভাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা আশেক মেহেদী, আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন, যুবলীগ নেতা এবং বিগত উপনির্বাচনে নৌকা নিয়ে পরাজিত মাহবুবুর রহমান সুমন, শেখ আবু আনছার উদ্দিন লাভলু, লুৎফর রহমান। এই ৬৪ জন ব্যক্তি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা জন্য তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন বাকি সিদ্ধান্ত তফসীল ঘোষণার পরে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হলে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটবে তারপর দেখা যাবে এর মধ্যে অনেকেই আও লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনে কোন প্রকার দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি বা তাচ্ছিল্য এর ভাব দেখালে অধিকাংশ নির্বাচনে পরাজয় ঘটবে কারণ বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার জন্য যোগ্য প্রার্থীদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে আর এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীরা যোগ হয়ে তাদের পাল্লা ভারী হবে বলে বিশ্লেষকরা এটাই মনে করছে।