
= রক্তযুক্ত নলে রক্তদানের ভঙ্গিমা।
= ফটোসেশনেই কর্মসূচী শেষ।
= প্যাথলজিতে জমা হয়নি কোন রক্ত।
= কর্মসূচীকে ভ‚য়া, লোক দেখানো বলছে ছাত্রলীগই।
= স্বেচ্ছাসেবীকে আটকে রাখার নির্দেশ।
= ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী।
নিজস্ব প্রতিবেদক: শোকের মাসে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর নামে প্রতারনা ও চাাঁদা দাবীর অভিযোগ উঠেছে। ব্যাগে রক্তযুক্ত নল লাগিয়ে শার্টের নীচ দিয়ে উক্ত নল স্থাপন করে রক্তদানের ভঙ্গিমা প্রদর্শন করে জেলা আওয়ামী লীগ নের্তৃবৃন্দকে বোকা বানিয়ে ছবি তুলেই কর্মসূচী সমাপ্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত ১৪ আগস্ট শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা ছাত্রলীগ কার্যালয়ে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আশিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এক রক্তদান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয় বলে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। উক্ত কর্মসূচীতে উদ্বোধক হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একেএম ফজলুল হক এবং প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ নের্তৃবৃন্দ ও ছাত্রলীগ নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়।। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত কর্মসূচী থেকে ছাত্রলীগ নের্তৃবৃন্দের দেয়া ৩০ ব্যাগ রক্ত সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে উক্ত রক্তদান কর্মসূচী সম্পূর্ন ভ‚য়া, লোক দেখানো ও প্রতারনামূল বলে অভিযোগ উঠেছে খোদ ছাত্রলীগের মধ্য থেকেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা কর্মী অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গত ১৪ আগস্ট জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে যে কর্মসূচী পালনের কথা বলা হয়েছে সেখানে ছিল শুভঙ্করের ফাঁকি। উক্ত কর্মসূচীতে জেলা ছাত্রলীগের নামে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে কোন রক্ত জমা হয়নি। ঐদিন হাসপাতাল থেকে ১০টি খালি ব্যাগ দেয়া হয়। কিন্তু তারা (আয়োজকরা) কোন রক্ত জমা দেয়নি। পরে ছাত্রলীগ নের্তৃবৃন্দ শহরের একটি বেসরকারি মেডিকেল থেকে একটি খালি ব্যাগ কিনে নিয়ে আসে। সেই ব্যাগে রক্তযুক্ত নল লাগিয়ে একজন ছাত্রলীগ নেতাকে শুইয়ে তার ফুল হাতা শার্টের নীচ দিয়ে উক্ত নল লাগিয়ে রক্তদান করা হচ্ছে এমন ভঙ্গিমা প্রদর্শন করে জেলা আওয়মীলীগ নের্তৃবৃন্দকে দিয়ে তা উদ্বোনের নাটক সাজিয়ে ছবি তোল হয়। দৃশ্যটি এতোই সুক্ষ ও প্রতারনামূল ছিল যা উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি সহ উপস্থিত অন্যান্য আওয়ামী লীগ নের্তৃবৃন্দের পক্ষেও হয়তো বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট রবিন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ছাত্রলীগের উক্ত কর্মসূচীতে আমি আমাদের গালিব সহ দু’জন স্বেচ্ছাসেবী পাঠাই। ঘন্টা দু’য়েক পর তারা ফিরে আসে। সেখান থেকে কেউ রক্ত জমা দেয়নি। আমি কোন বøাড পাইনি।
এ ব্যাপারে রক্তদেয়া নেয়ায় অভিজ্ঞ উক্ত স্বেচ্ছাসেবী গালিব বলেন, গত ১৪ তারিখ ছাত্রলীগের কর্মসূচীর দিন আমি অফিসের নির্দেশনা পেয়ে বেলা ১২টার দিকে কর্মসূচী স্থলে যাই। তখন আমি কেন আরও এক ঘন্টা আগে সেখানে পৌছাইনি এই বলে জেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারী সুমন ভাই আমার উপর চড়াও হয় এবং আমাকে ঘরে আটকে রাখতে বলে। এ সময় তিনি আমাকে বলেন, এই নাস্তা পানি কই? তখন আমি বলি, আমি টাকা দিয়ে নাস্তা পনির ব্যবস্থা করছি। কিন্তু তাতেও তিনি সন্তোষ্ট না হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন,“ এই… রবিন বাবুকে বিকালের মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিতে বলবি।” অতঃপর বেশ কিছু সময় পর আমি সেখান ফিরে আসি।
এ ব্যাপারে উক্ত রক্তদান কর্মসূচীর প্রধান অতিথি সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। কিছুটা সত্যতাও পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, করোনাজনিত সমস্যা এবং কাজের ব্যস্ততার কারনে আমরা সেদিন ফটোসেশন করে চলে আসি। তাদের সেখানে যথাযথভাবে কর্মসূচী পালনের কথা ছিল। শুনেছি তারা তালিকা করে রেখেছে এবং পরবর্তীতে যাদের রক্তের প্রয়োজন হবে তারা লোক দিয়ে সেই রক্ত পৌছে দিবে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার যোগাযোগ পাওয়া যায়নি।
এদিকে মানুষের জীবন রক্ষাকারী রক্তদান নিয়ে এমন ছলচাতুরী আর প্রতারনামূলক কর্মকান্ডের জন্য জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অযোগ্যতা, খামখেয়ালিপনাকেই দূষছেন অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। অনেকেই বলছেন অছাত্র বিবাহিতদের দিয়ে কমিটি করা হলে তার ফলাফল এমনই হয়ে থাকে। উল্লেখ্য গত ২৫মে মঙ্গলবার এস এম আশিকুর রহমানকে সভাপতি ও সুমন হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি ঘোষণার পরই অছাত্র, বিবাহিত, মাদকাসক্তদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে পত্র পত্রিকায় খবরও প্রকাশিত হয়।
অদ্যবধি উক্ত কমিটি দিয়েই জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম চলায় জেলা আওয়ামী লীগ নের্তৃবৃন্দকে বোকা বানিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালনে অবহেলা ও প্রতারনার দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীবৃন্দ।