আহাদুর রহমান জনি: আইনের রক্ষক যখন ভক্ষক হয়, সাধারণ মানুষ তখন যাবে কোথায়? এমন প্রশ্নই এখন সবার মুখে মুখে। গ্রাম পুলিশ হওয়ার সুবাদে মাদক সেবন ও ব্যবসায় চরমভাবে জড়িয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৮নং ধুলিহর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মিন্টু কুমার সাহা ওরফে ভোম্বল (৩৬)।
বিভিন্ন প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ধুলিহর ও ব্রহ্মরাজপুর এলাকায় গাঁজা ও বাংলা মদ সরবরাহ করে আসছে গ্রাম পুলিশ ভোম্বল। গ্রাম পুলিশের পোশাক পরে সীমান্ত এলাকা থেকে নির্বিঘ্নে নিজের মোটরসাইকেলে করে বড় বড় চালান এলাকায় এনে তা মাদকের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। ভোম্বল এলাকায় মাদকের সম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। মাদকের যত সিন্ডিকেট রয়েছে সব রয়েছে তার নিয়ন্ত্রনে। শুধু মাদক বিক্রি নয় ধুলিহর ও ব্রহ্মরাজপুর এলাকার কয়েকটি জায়গায় তার নেতৃত্বে মাদক সেবনের বড় বড় আসরও বসে থাকে।
সোমবার (১৪ জুন) ব্রহ্মরাজপুর বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে উমরাপাড়ার একটি বাঁশ বাগানে গাঁজা ও বাংলা মদের আসর বসায় গ্রাম পুলিশ ভোম্বল। স্থানীয় কয়েক যুবক বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ধাওয়া দিলে সবাই পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে ২ পুরিয়া গাঁজা, ১ লিটার বাংলা মদ, ১ পাতা যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, ৬টি গাঁজার ইন্তাজ বিড়ি সহ ভোম্বল যুবকদের হাতে আটক হয়। পরবর্তীতে গ্রাম পুলিশ ভোম্বল ধস্তাধস্তি করে ভোঁ দৌড় দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ঘটনাটি স্থানীয় এক সাংবাদিক সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হুসেনকে অবহিত করলে এস,আই শিমুল ও এস,আই সঞ্জীব ব্রহ্মরাজপুর বাজারের বাদশা’র দোকানের সামনে হতে উদ্ধারকৃত মালামাল জব্দ করে।
এস,আই সঞ্জীব জানান, মাদক উদ্ধারের ঘটনায় সদর থানায় একটি জিডি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এছাড়া দোষীদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও জানান তিনি।
এদিকে মাদকের আসর থেকে পালিয়ে যাওয়া মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী উমরাপাড়া গ্রামের মোঃ নুর ইসলামের পুত্র রুহুল আমিন (৩০) এর একটি স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। এই ভিডিও রেকর্ডে রুহুল আমিন জানায়, ঘটনার মূলহোতা গ্রাম পুলিশ ভোম্বল। সে গাঁজা ও মদ এনে বিক্রির পাশাপাশি সেবন করে। তার নেতৃত্বে একাধিক জায়গায় মাদকের আসর বসে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা হলো, কোমরপুর গ্রামের মোহর আলির পুত্র ও গ্রাম পুলিশ নজরুল ইসলাম ও ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের গৌর সাধুর পুত্র দীপক সাধু।
অপর একটি সূত্র জানায়, গ্রাম পুলিশ ভোম্বলের সহযোগী ধুলিহর বেড়বাড়ী গ্রামের গোলাম রহমান পুটির পুত্র রবিউল ইসলাম, কাজীরবাসা গ্রামের আজিজুল, উমরাপাড়া গ্রামের মোঃ নুর ইসলামের পুত্র রুহুল আমিন ও ধুলিহর গ্রামের মৃত দাউদ দফাদারের পুত্র চিহ্নিত মাদক সম্রাট ও একাধিক মামলার আসামী নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। এরা সবাই গ্রাম পুলিশ ভোম্বলের দেয়া গাঁজা, বাংলা মদ ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রির এজেন্ট। এসব এজেন্টরা ব্রহ্মরাজপুর ও ধুলিহর এলাকায় ফেরি করে গাঁজা বিক্রি করে বলে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। গাঁজা বিক্রির পাশাপাশি নির্দিষ্ট স্থানে বাংলা মদ ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রি করে থাকে।
গ্রাম পুলিশ ভোম্বল বহু অপকর্মের হোতা। গ্রাম পুলিশের সাইনবোর্ডে তার নেতৃত্বে কয়েকটি জায়গায় তাসের আসর বসে থাকে। সেখান থেকে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতিদিন মোটা অংকের একটি টাকা উত্তোলন হয়। এলাকার চিহ্নিত চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী ও দাগী আসামীদের সাথে তার রয়েছে বিশেষ সখ্যতা। সেখান থেকেও সে একটি টাকা উত্তোলন করে বলে একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। কিছুদিন পূর্বে গ্রাম পুলিশ ভোম্বল ব্ল্যাক মেইলিং করে দুই ছাত্রের কাছ থেকে পনের হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এ নিয়েও এলাকায় অনেক হৈ চৈ হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি ধামাচাপা পড়ে যায়। ইতিপূর্বে গ্রাম পুলিশ ভোম্বল ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্পের তৎকালীন এস, আই আব্দুল হালিমের কাছে দুই লিটার বাংলা মদ সহ ধরা পড়ে সে যাত্রায় ক্ষমা ও মুচলেকা দিয়ে রেহাই পায়। তার এসব কর্মকান্ডে এলাকায় মাদকের বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে। যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে। মাদকের ভয়াবহতায় এলাকায় প্রতিনিয়ত ছোট-খাটো চুরি ও অপরাধ কর্মকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে অভিভাবকমহল মাদকের সহজলভ্যতায় দারুনভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে ধুলিহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাবু সানার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অপরদিকে, গ্রাম পুলিশ ভোম্বল সোমবারের ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এলাকার সচেতনমহল বিষয়টি তদন্তপূর্বক অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।