
রফিকুল ইসলাম: শহরের বড় বাজারের খাজনা আদায়ের নামে ডিম ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে হুমকির মুখে অর্থ বানিজ্য শুরু করেছে একটি চক্র। ঘটনাটি নিয়ে পৌর মেয়রের কাছে লিখিত ভাবে প্রতিকার চাইতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন ১৩জন ব্যবসায়ী।
ডিম ব্যবসায়ী ওজিয়ার রহমান খোকন, ইদ্রিস আলী ও মাহবুবুর রহমান সাতনদীকে জানান, স্থানীয় কাউন্সিলর কাজী ফিরোজ হাসানের শেল্টারে থেকে ইজারাদার শেখ ফিরোজ আহমেদ রানা তার দলবল নিয়ে হুমকির মুখে টোল আদায়ের নামে অর্থ বানিজ্য করছে ডিম ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে। তারা নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বাইরের খামারীদের ডিম বোঝাই ভ্যান-পিকআপ রাস্তায় আটক করে এক কুড়ি ডিম প্রতি দুই টাকা হারে টোল আদায় করছে। পাশাপাশি বাইরের মার্কেট থেকে বড় বাজারের ১৩ জন ব্যবসায়ী ডিম ক্রয় করে বহন করে আনলে রাস্তার ওপর পরিবহন আটক করে মারধোর করার হুমকি দিয়ে ২টাকা কুড়ি প্রতি টোল আদায় করছে গত পহেলা বৈশাখ থেকে। এ পর্যন্ত ইজারাদার চল্লিশহাজারের মত টাকা ইজারার নামে অর্থবানিজ্য করেছে।
বিষয়টি নিয়ে তারা পৌর মেয়রের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করলে তিনি মৌখিক ভাবে অফিসের স্টাফ পিন্টুকে ডেকে নির্দেশ দেন যেন কোন ভাবেই বিগত ১০ বছরের টোলের রেটের বাইরে ডিম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইজারাদার টাকা না নেন। এও বলেন, এর ব্যাতয় ঘটলে ইজারা বাতিল করা হবে। সাথে সাথে তিনি ব্যবসায়ীদের বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর কাজী ফিরোজ হোসানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে। পৌরসভায় উপস্থিত থাকা কাউন্সিলর কাজী ফিরোজ হোসানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি রেগে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু করেন। এক পর্যায়ে মারতেও উদ্যোত হন।
এ ঘটনার পর ব্যবসায়ীরা ফিরে এসে জেলা প্রশাসকের কাছে ১৩ জনের স্বাক্ষরযুক্ত এক আবেদন করেন। ওই আবেদনে ব্যবসায়ীরা দাবী করেন তারা সকলেই ব্যক্তি মালিকানাধীন মার্কেটের দোকান এ্যাডভান্স দিয়ে ভাড়া নিয়ে সেখানে ডিমের ব্যবসা করেন। তারা কোনভাবেই পেরিফেরিভুক্ত জায়গায় বসে ব্যবসা করেন না। ট্রেড লাইসেন্স করে পৌরকর পরিশোধ করে তারা ব্যবসা করে থাকেন। তারা বাইরের খামারীদের নিকট তেকে ডিম ক্রয় করে এনে তা দোকানে বসে বিক্রি করেন। এ ক্ষেত্রে কুড়ি প্রতি তাদের নিকট থেকে ২ টাকা হারে আদায় করছে। টোল আদায়ের চার্টের ৪৩নং ক্রমিকে আমদানী ও রাপ্তানীর ক্ষেত্রে ২ টাকা হারে কুড়িতে টোল আদায়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ডিম ব্যবসায়ীরা ডিম আমদানী-রপ্তানী করেননা। একই কলমে খুচরা দোকানী প্রতি ৫ টাকা হারে আদায় করার কথা বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবী করেন ২০১৭ সালে একই ঘটনা ঘটে। ইজাদাররা এবছরের মত টোল আদায় শুরু করলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক, মেয়র ও ব্যবসায়ীদের ডেকে এক সভায় বসেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় কুড়ি প্রতি ২ টাকা হারে আদায় সঠিক নয়। কারণ এখানে ডিম আমদানী-রপ্তানী হয়না। সিদ্ধান্ত হয় দোকানী প্রতি (পেরিফেরি ভুক্ত জায়গার ব্যবসায়ী) ৫ টাকা হার খাজনা আদায় করার জন্য।
ডিম ব্যবসায়ী ওজিয়ার রহমান খোকন জানান, সম্প্রতি তার ভ্যানভর্তি ৫০০০ ডিম আটক করে টোল আদায়কারীরা। তাদের চাহিদামত অবৈধ টোলের টাকা দিতে না চাইলে তারা মারধোর করতে উদ্যত হয়। পরে স্থানীয় থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ডিম উদ্ধার করে দেন।
বাজারের ১৩জন ডিম ব্যবসায়ীর অভিযোগ পহেলা বৈশাখ থেকেই তাদের কাছ থেকে কুড়িতে ২টাকা হারে জোরপূর্বক টোল আদায় করছে যা অর্থ বানিজ্যর শামিল। প্রতিকার না পেলে তারা আন্দোলনে যাওয়ারও হুমকি দেন।
এ ব্যাপারে মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি সাতনদীকে জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের সাথে বসে সুরাহা করবেন। ’
কাউন্সিলর কাজী ফিরোজ হোসেন ব্যবসায়ীদের লাঞ্ছিত করার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘তারা ন্যায্য টোল দিতে চাচ্ছে না। একারনেই বিরোধ তৈরী হচ্ছে। তারা টোল দিলে কোন সমস্যা নেই।