
হাফিজুর রহমান: নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশ ব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হবে । আগের মত এবারও দলীয় প্রতীকে ভোট হবে ইউনিয়ন পরিষদে। ইতো মধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে নৌকার মাঝি হতে দৌঁড় ঝাঁপ শুরু করেছেন উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের সম্ভাব্য আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। সেই লক্ষে ইতো মধ্যে বিভিন্ন পোস্টার, বিল বোড, গাছের ডালে, দেয়ালে ছবি সম্বলিত পোষ্টার দেখা ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেস বুকে ও প্রচার প্রচারনা ও দোয়া কামনা চেয়ে চলেছেন প্রার্থীরা। নৌকার মাঝি হতে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে থানা, জেলা থেকে শুরু করে আওয়ামীলীগের শীর্ষ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তাদের যোগ্যতা, গ্রহনযোগ্যতা ও অতীতের কর্মকান্ডের অবদান চিত্র তুলে ধরতে ছুটে চলেছেন। দলীয় শীর্ষ নেতাদের মন জয় করতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, নেতাদের বাসা, ও ব্যক্তিগত অফিসে গিয়ে নানা কৌশলে তদ্বীর করছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই ইউপি নির্বাচনে হাওয়া বইছে উপজেলা ব্যাপী। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে, চায়ের আড্ডায় চলছে চেয়ারম্যান বানানোর আলাপ আলোচনা চুল চেরা বিশ্লেষন। তবে কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কোন্দলের কারণে দীর্ঘদিন দলে দ্বিখণ্ডিত অবস্থা বিরাজ করছে। প্রকৃত আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা অবহেলা, বঞ্চনা, কোনাঠাসা হয়ে নির্বাসিত জীবন যাপন করছে। দলে বর্তমান অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিট কাওয়াদের প্রভাব বেশি। দলে দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক দূর্বলতার কারণে যোগ্য নেতৃত্ব এবং যোগ্য প্রার্থী গড়ে উঠেনি। নিরাপক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে দৌড়ে জয় লাভ করাটা অনেকটাই ঝুকি হয়ে দাড়াবে। এজন্য এবার দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে শুধু দলীয় কাউন্সিলারদের ভোটে সমর্থন নিয়ে প্রার্থী নির্বাচন না করে সাধারণ মানুষের সমর্থনে প্রার্থী নির্বাচিত করলে নৌকাকে বিজয়ী করা সম্ভব হবে। তা না হলে নিরাপক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে নৌকা তীরে এসে তরী ডুবতে পারে বলে বিশিষ্ট জনরা আশংঙ্খা করছে। কারণ আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের লড়াই হবে মুলত নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে। ২০১৩ সালের সহিংসতার পরে মামলা, হামলা, হতে বাচতে যে সব বি,এন,পি জামায়াত নেতা কর্মীরা তৎকালীন আওয়ামীলীগের নেতাদের টাকায় কিনে ছদ্ম বরণে আওয়ামীলীগ নামধারী আছে তারা কৌশল পরিবর্তন করে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে সরাসরি জামায়াত বি,এন,পির প্রার্থী না হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে দেখা যেতে পারে। একারণে বি,এন,পি জামায়াতের অনেক প্রার্থী কৌশল অবলম্বন করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে না বলে দলের গোপন মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের ভাব মুর্তি ধরে রাখতে এবং দলীয় প্রার্থীদের জয় লাভে বি,এন,পি জামায়াতের দলীয় ডামী প্রার্থী মাঠে থাকলেও তারা মুল লড়াইতে থাকবে না এমনই আশংঙ্খা করা যাচ্ছে। যে কারণে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নির্বাচনে এবার চুল চেরা বিশ্লেষন করতে হবে। তা না হলে অধিকাংশ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের ভরাডুবি হওয়ার শংঙ্কা রয়ে গেছে। কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের নৌকার মাঝি হতে যারা দৌড়ে আছেন তার মধ্যে ১নং কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক প্রয়াত সভাপতি ডাঃ মোসলেম উদ্দীনের পুত্র সেলিম মাহমুদ, বর্তমান কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোস্তফা কবিরুজ্জামান মন্টু তিনি গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে জাতীয় পাটির প্রার্থী কে,এম, মোশারফ হোসেনের নিকট পরাজিত হন। বর্তমান ইউপি সদস্য তপন রায়, সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য শ্যামলী রানী এবং কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মাজেদ। ২নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহ সভাপতি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীন, ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি নুরু গাজীর পুত্র ইফতেখার আলম সুমন এবং ব্যবসায়ী মিনাল রায়ের নাম শোনা যাচ্ছে। ৩নং চাম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন ছাড়াও বিগত ২০১৩ সালের বি,এন,পি জামায়াতের সহিংসতায় অর্থ যোগানদাতা বি,এন,পি নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ, বর্তমান মুক্তিযোদ্ধালীগের থানা সভাপতি পরিচয়ে নৌকার মাঝির জন্য ছোটাছুটি করছেন এছাড়াও আর কোন নৌকার প্রার্থী নাম শোনা যাচ্ছে না। ৪নং দক্ষিণশ্রীপুর ইউনিয়নে থানা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহ সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার, এছাড়াও দক্ষিণশ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের থানা সভাপতি গোবিন্দ মন্ডল, থানা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডি,এম, সিরাজুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান এবং মোস্তফা হোসেন সোহাগ। ৫নং কুশুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কাজী কাহফিল আরা সজল এবং সহোদর সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোখখারুল ইসলাম নীলু, অপর ভাই রাজু, ছাড়াও তাদের ভাগ্নে কালিগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার প্রয়াত আলহাজ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের ছোট পুত্র আবুল কাশেম মোঃ আব্দুল্লাহ, এছাড়াও আছেন থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য নুরুজ্জামান জামু, এবং কালিগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান জেলা কমিটির সদস্য সাতক্ষীরা জর্জ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি এ্যাডঃ মোজাহার হোসেন কান্টু। ৬নং নলতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল হোসেন পাড়, সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য আসাদুজ্জামান সেলিম এবং খাদেমুল ইসলাম, এছাড়াও বি,এন,পি ঘরোনার বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম পাড়, দীর্ঘদিন নৌকার মাঝি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তবে সব কিছু নির্ভর করছে দলীয় সিদ্ধান্তের উপর। ৭নং তারালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বর্তমান থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোট, থানা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি প্রভাষক সামছুল হুদা খোকন এবং সাতক্ষীরা ডে নাইট কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুজ্জামান খোকন ছাড়া আপাতাত আর কোন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না।, ৮নং ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন এবং বর্তমান থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম নাইম ও কালিগঞ্জ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। এই তিন জনের মধ্যে বিগত নির্বাচনে আবুল হোসেন ধানের শীর্ষের প্রার্থী থানা বি,এন,পির সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মাদ বিশ্বাসের পরাজিত হন। ৯নং মথুরেশপুর ইউনিয়নে নৌকার মাঝির দৌড় ঝাপে প্রার্থীর মধ্যে নাজিমগঞ্জ বাজার কমিটির সাবেক সভাপতি ব্যবসায়ী ফিরোজ কবির কাজল, তিনি গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি হয়ে পরাজিত হন। অন্যান্যদের মধ্যে আছে সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগের থানা সভাপতি শেখ শাহিনুর রহমান শাহিন, থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি নরিম আলী মাষ্টারের পুত্র ফিরোজ আহমেদ বাবু, রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সাবেক সেনা সদস্য শেখ আব্দুল্লাহ, থানা যুবলীগের একাংশের সভাপতি সালাউদ্দীন, থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাকিম এবং বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। ১০নং ধলবাড়িয়া ইউনিয়নে এখনও পর্যন্ত ৩ জনের নাম শোনা যাচ্ছে তার মধ্যে গত নির্বাচনে বি,এন,পি ঘরোনার আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী হয়ে নৌকায় চড়ে আলহাজা¦ গাজী শওকত হোসেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবারও সে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রত্যাশী এদের মধ্যে অন্যতম প্রার্থী থানা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সজল মুখার্জী ও থানা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাতক্ষীরা জর্জ কোটের এপিপি এ্যাডঃ হাবিব ফেরদাউস শিমুল, ১১নং রতনপুর ইউনিয়নে এবার আওয়ামীলীগ ঘরোনার ভাই ভাইয়ে লড়াই হবে। বর্তমান রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম খোকন তার নৌকায় ওঠার চেষ্টায় তারই সহদর ভাই জনপ্রিয় তরুন নেতা আমিন আল রাজি টোকন এবং যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম। সর্ব শেষ আলোচিত ১২নং মৌতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সম্ভাব্য তালিকায় মনোনয়ন দৌড়ে আছেন থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদীর বড় ভাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা আশেক মেহেদী। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই ইউনিয়নে সাঈদ মেহেদী নিজেই প্রার্থী হয়ে জয় লাভ করেন। এছাড়াও আছেন যুবলীগ নেতা সুমন মাহবুব, মৌতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি দুলাল চন্দ্র ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, গিয়াস উদ্দীন, সরদার, সিরাজুল ইসলাম।