
জাতীয় ডেস্ক: দীর্ঘ দুই যুগ পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করেছে তৎকালীন গেরিলা সংগঠন শান্তিবাহিনী। এ অবস্থায় পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে চুক্তির স্বাক্ষর হয়, যা পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বা শান্তিচুক্তি নামে পরিচিতি পায়। বুধবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৩ বছর পূর্তি। সরকারের দাবি চুক্তির বেশির ভাগ ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। আর অবাস্তবায়িত ধারাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন হবে এবং এর জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ দরকার।
অন্যদিকে চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির দাবি, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর এবং তৎপরবর্তী চুক্তির কিছু ধারা বাস্তবায়নের ফলে জুম্মদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। তবে সরকার একটানা ১২-১৩ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলেও চুক্তি বাস্তবায়ন না করা, উপরন্তু চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী নানা কর্মকাণ্ডের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আবারও অশান্ত হয়ে উঠছে।
এদিকে চুক্তির ২৩ বছরেও পুরোপুরি শান্তি ফেরেনি পাহাড়ি জনপদে। পাহাড়ে এখনও গোলাগুলি, রক্তক্ষয়ী সংঘাত, সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, খুন, গুম ও অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। যার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
এছাড়া পাহাড়ে সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ভেঙে এখন চারটি আঞ্চলিক দলে বিভক্ত। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে প্রতিনিয়ত রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে সবুজ পাহাড়। বেড়েছে রক্তের হোলি খেলা। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে ২১ জন, ২০১৯ সালে ১৭ জন ও ২০২০ সালে নভেম্বর পর্যন্ত ২০ জন নারী-পুরুষ খুন হয়েছে, আহত হয়েছে ৫০ জনের মতো।

২০১০ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে নানা অভিযোগে সুধাসিন্ধু খীসা ও তারিন্দ্র লাল চাকমার (পেলে) নেতৃত্বে জন্ম হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামে পাহাড়ে আরেক নতুন সংগঠন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে খাগড়াছড়ি জেলায় সাংবাদিক সম্মেলন করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ভেঙে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামের নতুন সংগঠন জন্ম নেয়। এ নিয়ে এখন পাহাড়ে চারটি আঞ্চলিক দলের তৎপরতা রয়েছে।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলার সভাপতি মো. শাব্বির আহম্মেদ বলেন, একদিকে চুক্তির পর পার্বত্য অঞ্চলে একে একে কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠন জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (প্রসীত) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্বত্য অঞ্চলে চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। তাদের কাছে পাহাড়ি-বাঙালিরা জিম্মি। অশান্তি সৃষ্টির মূলে রয়েছে চারটি সশস্ত্র গ্রুপ। এ চারটি গ্রুপের মধ্যে যতদিন সশস্ত্র সংঘর্ষের অবসান না হবে, ততদিন পাহাড়ে শান্তি আসবে না। তাই তাদের নির্মূল করা জরুরি। একইসঙ্গে সংবিধানের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধন করে চুক্তি পুনর্মূল্যায়নসহ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার পদত্যাগ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রত্যাহার করা নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্প পুনঃস্থাপনের দাবি জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের এই নেতা।