আহাদুর রহমান: মিষ্টি কথা, সাথে আছে মোটা অংকের হাতছানি। নিয়মিত যোগযোগ। এভাবেই ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসার পার্টনারশিপের ফাঁদে ফেলে ব্যবসায়ে টাকা আত্মসাৎ করেন। একের পর এক নতুন চুক্তি। তারপর হয়রানি করে পার্টনারদের সর্বশান্ত করা। এ কৌশলেই ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসাকে সামনে রেখে টাকা কামিয়ে থাকেন সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার বুধহাটা গ্রামের নজরুল ইসলাম। তার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সর্বশান্ত হওয়ার পথে মনিরুল ইসলাম ও এখলাছুর রহমান।
সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাজারের করিম সুপার মার্কেটে প্রিয়া ইলেকট্রিক নামে দীর্ঘদিন ব্যবসা করে আসছেন একই উপজেলার বুধহাটা গ্রামের মৃত গহর আলির ছেলে নজরুল ইসলাম। তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তিনি টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন সহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র বিক্রি করেন। তবে ব্যবসা পরিচালনা করে যা লাভ হয় তা নিজের পকেটে রেখে বেশি টাকার কামানোর লোভে তিনি এক নতুন পরিকল্পনা করেন। কোম্পানিকে টাকা শোধ দেয়ার নাম করে গত বছর (২০১৯ইং) ১৫ই ডিসেম্বর নিজ উপজেলার বুধহাটা গ্রামের আরশাদের ছেলে মনিরুল ইসলাম ও আলেক গাজীর ছেলে এখলাছুর রহমানকে ব্যবসায়ীক অংশীদার করে বিশ লাখ টাকা নেয় নজরুল ইসলাম। সে মোতাবেক চুক্তিপত্রও করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবসায়িক টাকার হিসাব না পেয়ে অংশীদাররা আয় ব্যায়ের হিসাব চাইলেই ঘটে বিপত্তি। তিনি লাপাত্তা। দোকান বন্ধ রেখে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন পার্টনারদের সাথে। এখন তার পার্টনারদের বে-কায়দায় ফেলার জন্য প্রচার দিচ্ছেন তিনি নাকি চড়া সুদে তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। মনিরুল ও এখলাছুর তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রিয়া ইলেকট্রিকের অংশীদার না। এর আগেও এ রকম একাধিক ঘটনা নজরুল ঘটিয়েছেন।
প্রিয়া ইলেকট্রিক শো’রুমের পাশের চেম্বারের গ্রাম ডাক্তার আবু হেনার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে নজরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম ও এখলাছুর রহমান ব্যবসায়িক পার্টনার। সময় পেলে মনিরুল ও এখলাছুরও শো’রুম পরিচালনা করে নজরুলকে সাহায্য করতো।
একই মার্কেটের ডায়মন্ড ইলেক্ট্রনিক্স এর মালিক বাবুল হোসেন জানান, আমার জানা মতে নজরুলত, মনিরুল ও এখলাছুর তিনজন পার্টনার। তারা পার্টনারশীপে প্রিয়া ইলেট্রিক শো’রুম পরিচালনা করেন।
করিম মার্কেটের চা বিক্রেতা জানান, তিনজনকেই আমি শো’রুমের মালিক হিসেবেই জানি।
প্রিয়া ইলেট্রিকের যৌথ মালিকানার অংশীদার এখলাছুর রহমান ও মনিরুল ইসলাম অভিন্ন সুরে জানান, “আমাদের নজরুল ইসলাম বলেন, এই ব্যবসায় অনেক টাকা লাভ হয়। আমি মার্কেটে কালেকশন করতে পারি নাই তাই কোম্পানি আমার কাছে ২২ লাখ টাকা পায়। তোমরা আমার প্রতিষ্ঠানে পার্টনার হয়ে এই টাকার সাপোর্ট দাও। লাভ যা হবে আমরা তিনজন ভাগ করে নেব। সে মোতাবেক চুক্তি হয়। ব্যবসায় চলাকালীন সময়ে নগদ ও বাকীতে পণ্য বিক্রি করা হয়। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে প্রায় দু’মাস আগে আমরা বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য হালখাতা আয়োজনের কথা নজরুলকে বলি। তখন থেকেই নজরুল বিভিন্ন রকম তালবাহানা করতে থাকে। এ সময় ব্যবসায়ীক হিসাবের খাতায় যে পরিমান বকেয়া টাকা আছে তা মিলিয়ে দেখি। কাস্টামারের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তারা যে পন্য বাকি নিয়েছে তার টাকা কেউ পুরো কেউবা বেশিরভাগ বকেয়া টাকা পরিশোধ করেছে। অথচ আমাদের হিসাবের খাতায় তা এন্ট্রি হয়নি। তখন এ বিষয়ে নজরুলের সাথে কথা বললেই তিনি দোকান বন্ধ করে দেন। আমরা তাকে দোকান খুলে হিসাব সহ আমাদের পার্টনারশীপের অংশ বুঝিয়ে দিতে বললেই তিনি আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন না। ফোন দিলে ধরেন না। এড়িয়ে চলেন। বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করার চেষ্টাও করেন। তিনি এও প্রচার দেন যে, আমরা নাকি তাদের সুদে টাকা দিয়েছি। অথচ আমাদের কাছে তার স্বাক্ষরিত অংশীদারী চুক্তিপত্র আছে। …(চলবে)
লোভনীয় পার্টনারশিপের ফাঁদে ফেলে ২০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ
পূর্ববর্তী পোস্ট