জাতীয় ডেস্ক: অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে দালালের দৌরাত্ম্য কম দাবি করছেন হাসপাতালের কর্তাব্যক্তিরা। কারণ হিসেবে বলছেন, মানসিক রোগের চিকিৎসায় খরচ কম। তাই দালালও কম।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম হত্যা মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সকালে মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালের পাশে নিজ বাসার সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রায়ই মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগী পাঠাতেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আনিসুলকে তার কর্মস্থল থেকে ঢাকায় এনে স্বজনরা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। সেখানে একজন চিকিৎসক পান তারা। তিনি রোগী না দেখেই দুটি ইনজেকশন লিখে দেন। হাসপাতালের এক কর্মচারী নিজেই ইনজেকশন পুশ করেন। পরে আনিসুলের স্বজনরা হাসপাতালটির রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে যান। মামুন তাদের পরামর্শ দেন, তার হাসপাতালে এ ধরনের রোগী খুব ভালো চিকিৎসা পায় না। দ্রুত রোগীকে মাইন্ড এইডে ভর্তি করলে তারা ভালো চিকিৎসা পাবেন।
এ নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদকের। যেহেতু এ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নিয়ে দালালির অভিযোগ উঠেছে এবং বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় আছে তাই তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একাধিক চিকিৎসক ও কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ হাসপাতালের কোনও চিকিৎসক দালালির সঙ্গে যুক্ত এমন ঘটনা তারা দেখেননি। মূলত হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা এখান থেকে রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে স্থানান্তর করে।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, অর্থোপেডিকসের একজন রোগীর সার্জারি যদি বাইরের হাসপাতালে করা যায় তাহলে তার খরচ অনেক বেড়ে যায় এবং সেখান থেকে দালালরা মোটা কমিশন পেয়ে থাকেন। কিন্তু মানসিক রোগের চিকিৎসায় কোনও সার্জারির প্রয়োজন হয় না, দালালদের আয়ও কম।
তারা আরও বলেন, ‘এ হাসপাতাল থেকেও রোগীদের ভাগানো হয়, নিয়ে যাওয়া হয় আশেপাশে গড়ে ওঠা বেসরকারি অবৈধ ক্লিনিকগুলোতে। আমাদের হাসপাতালেও দালাল ছিল, আছে। তাদের মাঝে মাঝেই ধরা হয়, শাস্তিও দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয় না বলে দাবি তাদের।’
কীভাবে রোগী নিয়ে যাওয়া হয় জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলেন, ‘মূলত পুরো দেশ থেকে এ হাসপাতালে রোগীরা আসেন। যাদের মধ্যে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তই বেশি। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীর স্বজনরা আয় রোজগার ফেলে ঢাকার একটি হাসপাতালে রোগী নিয়ে বেশিদিন থাকতে চান না। তারা দ্রুত চিকিৎসা চান। এ সুযোগটাই নিয়ে থাকে দালালরা।’
‘মানসিক হাসপাতালে রোগীদের স্বাভাবিকভাবেই অনেকদিন রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। এখানে দ্রুত চিকিৎসা বলে কিছু নেই। দালালরা রোগীর স্বজনদের বোঝান যে এ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা হয় না, ডাক্তাররা ঠিকমতো আসে না। তাই বাইরের ক্লিনিকগুলোতে দ্রুত চিকিৎসার কথা বলে নিয়ে যায়।’
‘আবার যারা শিক্ষিত রোগী আসে তাদেরকে হাসপাতালের নোংরা পরিবেশের কথা বলে বাইরে যেতে প্ররোচিত করে দালালরা। বেশিরভাগ সময়ই তদন্তে এসেছে যে, দালালরা বলেছে, এ হাসপাতালের বিছানা পরিষ্কার না, বাথরুম নোংরা, ইত্যাদি।’
‘আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসকরা এখন পর্যন্ত রোগী ভাগানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হননি। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগও আসেনি।’ এমন মন্তব্য করে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তবে এ অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।
‘চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন কর্মচারী এ কাজে যুক্ত। এটা সবাই জানে। অভিযোগ পেলেই সতর্ক করা হয়েছে। শাস্তির উদাহরণও রয়েছে এ হাসপাতালে। আমি ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আইনিভাবেই এর মোকাবিলা করবো।’ বলেন অধ্যাপক বিধান রঞ্জন পোদ্দার।