নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বিধাবিভক্ত সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের আহবানকৃত রোববারে বর্ধিত সভা পন্ড হয়ে গেছে। এ ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আজ সকাল সাড়ে দশটায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শুরু হয়। সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলী কর্তৃক আহবানকৃত বর্ধিত সভায় সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলামের কযেক’শ অনুসারী ঢুকে পড়ে শুরুতেই। এ সময় সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাজান আলী সভা শুরু করার চেষ্টা করলে কয়েকশ নেতাকর্মীর তোপের মুখে পড়েন। প্রতিবাদকারীরা মঞ্চের ব্যানার ছিড়ে ফেলে চেয়ার ভাংচুর করে। তারা জানতে চায় ব্যানারে কেন উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম নেই। অবৈধ পন্থায় কেন শেখ আব্দুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানানো হয়েছ? এসব প্রশ্ন করেই হচ্চগোল শুরু করে মোঃ শহিদুল ইসলামের অনুসারীরা। এক পর্যায়ে তোপের মুখে সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাজান আলী আহবানকৃত সভা স্থগিত ঘোষণা করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩নং সহ-সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোরশেদ সাতনদীকে জানান, জনরোষের মুখে সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাজান আলী বর্ধিত সভা স্থগিত করেছেন। এ ব্যাপরে ২ নং সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ আব্দুর রশিদ সাতনদীকে জানান, ব্যানার ছিড়ে চেয়ার ভাংচুর করে সন্ত্রাসী স্টাইলে বর্ধিত সভা পন্ড করা হয়েছে। তারা সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলীকে ধাক্কাও দেয়, বিষয়টি দুঃখজনক।
সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহম্মেদকে জড়িয়ে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রতিবেদক সরজমিনে বর্ধিত সভার সংবাদ সংগ্রহ করেছে। সাড়ে দশটার শুরুতেই সভাস্থরে প্রবেশ করেন সাবেক উপজেলা ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম মোর্শেদের নেতৃত্বে তৃণমূলের নেতারা। এ সময় সেখানে আসেন সাবেক উপজেলা সভাপতি এস এম শওকত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুনউর রশিদ, যুবলীগের ওয়াহিদ পারভেজ।
তুণমুলের নেতাকর্মীদের প্রবেশের ১৫ মিনিট পর সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি এবং ২০ মিনিট পর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু সভাস্থলে প্রবেশ করেন। এমপি রবি প্রবেশ করেই বলেন, তোরা চিল্লাছিশ কেন? থাম। তোদের প্রশ্নের জবাব শাহাজান দিতে পারবে না। জেলা সভাপতি মুনসুর আহমেদ আসুক। তিনি প্রতিবাদকারীদের সুরে এও বলেন রশিদ বৈধ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি না। জেলা কমিটির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়নি।
উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবুও প্রতিবাদকারীদের নিবৃত করেন। তিনি সাতনদীকে জানান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। ত্যাগী নেতা কর্মীদের বাদ দেয়া হয়েছে। নৌকার বিরোধীতাকারীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সভাস্থলে সম্পাদক শাহাজানকে কেউ লাঞ্ছিত করেনি। কোন সন্ত্রাসী হামলাও হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ সাতনদীকে বলেন, শুনেছি সদর এমপির উপস্থিতিতেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
আজকের এ বর্ধিত সভাকে ঘিরে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিলেন। যে কোন ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশের নজরদারী ছিল সার্বক্ষনিক।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি বলেন সভাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদকারীদের থামিয়েছি। সম্পাদক শাহাজান তোপের মুখে সভা স্থগিত করেন। আমি সবাইকে শান্ত করে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে কেক কেটেছি। সন্ত্রাসী হামলা বা কাউকে লাঞ্ছিত করা এসব সঠিক নয়।
এদিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি সাতনদীতে প্রেরণ করা হয়েছে। যা হূবহূ তুলে ধরা হলো।
১৮ অক্টোবর, ২০২০ খ্রিঃ তারিখ রোজ-রবিবার, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে প্রেস ব্রিফিং।
সম্মানিত সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আজ ১৮ অক্টোবর, ২০২০ খ্রিঃ তারিখ , রবিবার, সকাল ১০.৩০ টার সময় সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ব নির্ধারিত বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল ১০.১৫ টার সময় সাতক্ষীরা সদর -০২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র নেতৃত্বে কিছু উৎশৃঙ্খল দলীয় নেতাকর্মী জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের নাম ধরে কটুক্তি করতে করতে হলরুমে প্রবেশ করেন এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজাহান আলী সহ কয়েকজন নেতৃবৃন্দকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এসময় তার সঙ্গে থাকা তার ব্যক্তিগত সহকারী মকছুসুমুল হাকিম, আগরদাঁড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হবি, শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী, সদর উপজেলা সহ-সভাপতি স.ম. গোলাম মোর্শেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণেশ চন্দ্র মন্ডল, কুশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ আলী, সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, বাঁশদহা ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার মফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে হঠাৎ কোন কিছু শোনা-বোঝার আগেই মঞ্চে রক্ষিত বর্ধিত সভার ব্যানারটি ছিড়ে ফেলেন। ব্যানারে অঙ্কিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্ঠা সজীব ওয়াজেদ জয় এর ছবি ছিল। এহেন সন্ত্রাসী হামলায় সাতক্ষীরা সদর আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীগণ স্থম্ভিত হয়ে পড়েছে। এমন ন্যাক্কার জনক কর্মকান্ড দলকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রের অংশ মাত্র। একজন মাননীয় সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলা খুবই দুঃখজনক। যাহা সাতক্ষীরা জেলায় ইতিপূর্বে কখনও এমনটি ঘটেনি। এই হামলায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করতে না দেওয়ায় আওয়ামী লীগ বিরোধী জামাত-বিএনপি’র হাত শক্তিশালী করবে। আমরা এহেন ঘটনার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আবারও ঘটালে দলীয় নেতাকর্মীরা দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত পূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের নিকট জোর দাবী করছি।
উল্লেখ্য, বিগত সম্মেলনে প্রয়াত আবুল খায়েরকে সভাপতি এবং মোঃ শহিদুল ইসলামকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে ১৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্র থেকে আসা নেতারা। এ ঘটনার পর সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম পদত্যাগ করেন। কিন্তু গঠনতন্ত্রের আলোকে জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ সভায় পদত্যাগ পত্র উপস্থাপন ও সিদ্ধান্ত না নিয়ে তা পাঠানো হয় প্রয়াত সভাপতি আবুল খায়েরের কাছে। তিনি মোঃ শহিদুল ইসলামকে ৩নং সদস্য এবং শেখ আব্দুর রশিদকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করেন। এতেই ঘটে বিপত্তি। পরে শহিদুল ইসলাম কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চান।