নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাতক্ষীরায় দিন দিন লাঁফিয়ে লাঁফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। বৃদ্ধির কারণ হিসেবে লকডাউন শিথিল করা, মানুষের অচেতনতা স্বাস্থ্যবিধিকে তোয়াক্কা না করা ও কোয়ারেন্টাইন না মানাকে দায়ী করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। সেজন্য একজন কোভিড আক্রান্ত রোগীর আতœীয়-স্বজনও অনেকাংশে দায়ী। জেলায় বর্তমানে (শনিবার-২৬ জুলাই) করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪৫ জনে, মারা গেছেন ২০ জন। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরও ৩১ জন। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে সাতক্ষীরায় করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে, রয়েছে জনবল সংকট।
করোনার প্রার্দুভাবের শুরুতে এপ্রিলে সাতক্ষীরায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় একজন, ২৫ মে ঈদুল ফিতরে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭ জনে, মে মাসেই আক্রান্ত হয় ৪৬ জন, তাছাড়া ঈদের ১৫ দিন পর আক্রান্ত হয় ৫৬ জন, জুন মাসে ১৫৯ জন, চলতি ২৬ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪৫ জনে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২০৮ জন। জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে থাকা ১৫০ রোগীর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এরই মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি ১২৫ জন। বাকিরা রয়েছেন নিজ বাড়িতে আইসোলেশানে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত জানান, সাতক্ষীরায় করোনা ভাইরাস এখন কমিউনিটি লেভেলে ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। একজন শনাক্ত হওয়ার পর তার বাড়ি লকডাউন করা হচ্ছে তবে আক্রান্তরা কেউ কোয়ারেন্টাইন মানে না। ফাঁক ফোকড় দিয়ে বের হয়ে যায়। রোগীর আতœীয় স্বজনও মানছে না। সাধারণ মানুষও স্বাস্থ্যবিধি খুববেশী মেনে চলেন না। যার কারণে দিন দিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
ঈদুল ফিতরের পর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পেছনে ঢাকা ও নারায়ানগঞ্জ থেকে আসা মানুষকে দায়ী করে সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, বিদেশ থেকে আসা মানুষদের মাধ্যমে সাতক্ষীরায় করোনা বিস্তার লাভ করেনি। সাতক্ষীরায় প্রথম যিনি করোনা ভাইরাসে শনাক্ত হন তিনি নারায়ানগঞ্চ থেকে এসেছিলেন। এরপর ঢাকা থেকে এসেছেন। মূলত ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ ফেরতদের মাধ্যমে সাতক্ষীরায় করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভ করেছে। ঈদুল আযহায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষদের প্রতি আহব্বান থাকবে যিনি যেখানে অবস্থান করছেন সেখান থেকে স্থান ত্যাগ না করা। তাছাড়া ঈদের বাড়িতে আসলেও কারো সংস্পর্শে না যাওয়া। আতœীয়-স্বজন, বন্ধুদের থেকে দূরে থাকা। কুরবানীতে প্রতিবেশীদেরা ডাকাডাকি না করা। কুরবানী ঈদের এগুলো না মেনে চললে করোনার ভয়াবহতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি নিয়েই এখন বড় চিন্তা।
এদিকে, সাতক্ষীরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে। সেখানে প্রস্তুত রয়েছে ১৩৫টি বেড ও চারটি আইসিইউ। বর্তমানে সেখানে রোববার (২৬ জুলাই) পর্যন্ত ভর্তি রয়েছেন ১২৫ জন রোগী। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ২০ জন। এছাড়া ১০৫ জন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। তবে এর মধ্যে অধিকাংশই করোনা পজেটিভ বলে মনে করছেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. মানস কুমার মন্ডল।
তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে জনবল রয়েছে সেটিতে ১৪০-১৫০ জন রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব। তাছাড়া আটটি আইসিইউ এর মধ্যে চারটি কার্যকর ও চারটি নষ্ট হয়ে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। উপসর্গ নিয়ে যারা ভর্তি রয়েছেন তাদের প্রায় সবাই করোনায় আক্রান্ত। তবে তাদের রিপোর্ট এখনো হাতে পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট হাতে পেতে ৭-৮ দিন সময় লাগে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জনবল না বাড়ালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। প্রথম দিকে জনবল অনুযায়ী ১৫০ জন রোগীর টার্গেট দিলেও সেটি বাড়িয়ে এখন ২০০ করা হয়েছে। তবে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে কেননা জনবল নেই।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও সদর হাসপাতালে ১০ জন রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে। তাছাড়া রোগী পূর্ণ হয়ে গেলে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করবো। বর্তমানে আক্রান্তদের অধিকাংশকে বাড়িতে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। জরুরী হলে তাকে হাসপাতালেও পজেটিভ ওয়ার্ডে নেওয়া হচ্ছে। তবে এভাবে যদি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে তবে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। আমাদের জনবল স্বল্পতা রয়েছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
আসন্ন ঈদুল আযহাকে ঘিরে যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রামের বাড়িতে আসার পরিকল্পনা করছেন তাদের বাড়িতে না আসার অনুরোধ ও আহব্বান জানিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস. এম মোস্তফা কামাল বলেন, দিন দিন করোনার প্রকোপ সাতক্ষীরায় বাড়ছে। এখন কারো স্থান ত্যাগ না করাই উত্তম। তবে যারা আসবেন তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসন সজাগ থাকবে।
আক্রান্ত বাড়লে ভেঙে পড়বে সাতক্ষীরার করোনার চিকিৎসাসেবা
পূর্ববর্তী পোস্ট