
বিশেষ প্রতিবেদক:
চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। ঝড়ের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বাংলাদেশের ২৬ টি জেলা। উপকূলের প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার বাধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় একশত কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১১০০ টি রাস্তা এবং ২০০ টি ব্রীজ ও কালভার্ট। এছাড়ও স্থানীয় পর্যায়ের ২৩৩ টি অফিস ভেঙে তছনছ করে দেয় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান পরবর্তী সময়ে বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মানুষের হালচাল বিষয়ক আলোচনায় ’সারাবাংলা ফোকাস’ এর অনলাইনে সরাসরি যুক্ত হন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল।
এসময় এমপি রবি বলেন, সাতক্ষীরা বাংলাদেশের একটি দূর্যোগপূর্ণ জেলা। ঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যা আমাদের নিত্য সঙ্গী। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে নদীর পানি ওভার ফ্লু হয়ে গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। এ সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী খনন প্রকল্পে ৪৭৬ কোটি টাকা একনেকে অনুমোদন দিয়েছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সাতক্ষীরা জেলা বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে।
এমপি রবি আরো বলেন, আম্ফান পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকার সময়োপযোগি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ ২ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য মোট ১ কোটি ২২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং শিশু খাদ্য খাতে ২০ লক্ষ টাকা ছাড়াও ২০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।
এমপি রবি আরো বলেন, বেড়িবাধ এ জেলার মানুষের সবথেকে উদ্বেগের জায়গা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় তাদের দায়িত্ব সেভাবে পালন করে চলেছে। সাতক্ষীরা জেলায় যে ২৩টি পয়েন্ট ভেঙে গিয়েছিল সেখানে বর্তমানে সেনাবাহিনী কাজ করছে। এছাড়াও সাতটি পয়েন্টে এবং তার সাথে ৪টি লিংক পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে।
আলোচনায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, আম্ফান পূর্ববর্তী সময়ে জেলার চারজন সংসদ সদস্য এবং জেলা প্রশাসন সবাই মিলে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। সে পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে প্রাণহানী কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, দূর্যোগের সময় জেলার সাহসী মানুষেরা বীরের মত এগিয়ে এসেছিল। তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২০০ মেট্রিকটন চাল এবং ২০ লক্ষ টাকার বেশি অর্থ স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সরকার সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন দ্বারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা দেখভাল করেছে। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে চারটি আসনের সংসদ সদস্যরা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সহায়তা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকায় কংক্রিটের বাধ নির্মানের প্রকল্পটি প্রি-একনেক হয়েছে। সেখানে তিন হাজার কোটি টাকার অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে যার মধ্যে সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাটের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা। এটি একনেকে অনুমোদন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
আগের বাধটি ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল বলেন, এটি ষাটের দশকে তৈরি। মাটির তৈরী হলেও বাঁধটি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। বাধ ভাঙার পেছনে স্থানীয় জনগণকে দায়ী করে তিনি বলেন, আইনানুযায়ী বাঁধের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো চিংড়ী ঘের থাকতে পারবে না। এতে বাঁধের ক্ষতি হয়। এছাড়াও চিংড়ী চাষ করতে গিয়ে এলাকার মানুষ বেআইনী ভাবে কিছু যন্ত্র ব্যবহার করেছে যেটা বাধকে দূর্বল করে দিয়েছিল। বিষয়টি এখন থেকে জেলা প্রশাসনের কঠিন নজরদারীতে থাকবে বলে জানান তিনি।
আলহুসাইন অমি